জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন অফিসের সামনে ‘ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার’ এ আজ বুধবার সকালে ভুল চিকিৎসার কারণে ওমর উদ্দিন (৬৬) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে হাসপাতাল সড়কে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার লোকজন, সাংবাদিক ও স্থানীয় জনগণ এই ভুল চিকিৎসার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উপস্থিতি বাড়তে থাকে। এসময় থানা থেকে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহতের স্বজনরা জানায়, গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত নয়ন শেখের ছেলে ওমর উদ্দিন মঙ্গলবার রাত ৩টার অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুধবার সকাল ৭টায় গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
নিহতের স্ত্রী হাসনা বেগম বলেন, হার্টের চিকিৎসার জন্য আমার স্বামীকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে নিয়ে যেতে বলেন। এসময় ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর পরিচালক আমাদেরকে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে যান। সেখানকার ডাক্তার প্রেসার স্বাভাবিক করতে স্যালাইনের মধ্যে দেওয়ার জন্য একটি ইনজেকশন আনতে বলেন। পরে ইনজেকশন আনার পর সেটি স্যালাইনে না দিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর পরিচালক কাইয়ুম আমার স্বামীর হাতে পুষ করেন। এরপরই তিনি মারা যান’।
এ ঘটনায় ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মনির হোসেন মুরাদ জানান, ‘হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে এক বৃদ্ধ রোগীকে নিয়ে তার স্বজনরা সকাল সাড়ে দশটার দিকে ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এ নিয়ে আসেন। তখন তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। তাকে রংপুরে রেফার্ড করা হয়েছিল। এসময় তার প্রেসার একেবারেই কম ছিল। আমি হৃদরোগের প্রাথমিক ঔষধ খাইয়ে আমার চেম্বারে আসি এবং প্রেসার স্বাভাবিক করতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর পরিচালক কাইয়ুমকে একটি ইনজেকশন আনতে বলি। ইঞ্জেকশন আনার পর সেটি আমার মাধ্যমে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মিনিটে ৮ ফোঁটা করে স্যালাইনে পুষ করার কথা। কিন্তু পরিচালক কাইয়ুম আমাকে না জানিয়ে ইঞ্জেকশনটি রোগীর শরীরে সরাসরি প্রবেশ করান। এর ১ মিনিটের মধ্যেই রোগী ওমর উদ্দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন’।
এ ব্যাপারে ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর পরিচালক এম আই কাইয়ুমের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এক ঘন্টা পর কথা বলবেন বলে জানান।
এ নিয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্টাফদের সাথে রোগীর স্বজনদের বাকবিতন্ডা শুরু হয়।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঘটনা ধামাচাপা দিতে লাশ নিয়ে দরকষাকষি চলে। ঘটনার পর চিকিৎসক নেতা ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার মালিক নেতারা নিহত ওমর উদ্দিনের স্বজনদের ম্যানেজ করতে উঠে পড়ে লাগেন। এক পর্যায়ে মোটা অংকের টাকায় দফারফা করে নিহতের স্বজনদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই মর্মে মুচলেকা নেওয়া হয়।
এই মৃত্যুর খবরটি এলাকায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার লোকজন ছুটে আসে।
এব্যাপারে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাসুদুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলে তারা উপস্থিত না হওয়ায় নিহতের স্বজনদের থানায় নিয়ে আসেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি আরও জানান, এব্যাপারে নিহতের স্বজনরা কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে ঢাকা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, যেহেতু ইনজেকশন দেয়ার সাথে সাথেই রোগী মারা গেছে, সেক্ষেত্রে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন ছিল। অথবা আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি ইউডি মামলা দায়ের করে লাশ ময়না তদন্ত করা উচিত ছিল।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নাম প্রকাশে এক কর্মকর্তা জানান, সিভিল সার্জনের স্বাক্ষর জাল করে লাইসেন্স নবায়নের মাধ্যমে ডায়াগনষ্টিক সেন্টারটির চালানোর অভিযোগ রয়েছে মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে। যা তদন্তাধিন রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রোগির মৃত্যুর ঘটনা শুনেছি। এটা দুঃখ জনক। ওই ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে লাইসেন্স নবায়নে স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টি তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে সিভিল সার্জন জানান।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি