November 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, April 15th, 2022, 8:58 pm

গাইবান্ধায় রাজস্ব ফাঁকি দিতে বানিজ্যিক জায়গা ও স্থাপনা ভিটা” দেখিয়ে দলিল

জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :

গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা পৌরসভার গোবিন্দপুর মৌজায় জমি দলিলের সময় রাজস্ব ফাঁকি দিতে বাণিজ্যিক ভবন থাকার পরও স্থাপনা নেই দেখিয়ে কম দামে জমি দলিল করার অভিযোগ উঠেছে। দলিলে প্রায় দুই কোটি ১৭ লাখ টাকার সম্পদ মাত্র ৬০ লাখ টাকায় কবলা বিক্রি দেখানো হয়েছে। এতে করে সরকার ১৩ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ বিষয়ে গত রোববার (১০ এপ্রিল) গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা গেছে, গাইবান্ধা পৌরসভার গোবিন্দপুর মৌজায় বড় মসজিদের অদুরে ভিএইড রোডে স্বাধীনতা পরবর্তী সাড়ে ১২ শতক জমির উপর শাহ মুরাদ আমিন(সাদি) ছ’ মিল ও রাইসমিল স্থাপন করেন। ২০০০ সালের পরে সেখানে একটি ফার্নিচারের দোকানও গড়ে ওঠে। ফার্নিচারের দোকান চালাতেন তারই ছোট ভাই নাসিমুল গনি(বাকি)। ‘ছ’ মিল, রাইসমিল ও ফার্নিচারের দোকান গুলো বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গাইবান্ধা পৌরসভায় হোল্ডিং ট্যাক্স ও লাইসেন্স এবং বিদ্যুৎ বিভাগের বিল পরিশোধের একাধিক একাউন্ট নম্বর ছিলো বলে পৌরসভা ও বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

ব্যবসা মন্দা যাওয়ায় ২০০৪ সালের দিকে ‘ছ’ মিল, রাইসমিল ও ফার্নিচারের দোকান বন্ধ করে বিলাশবহুল বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন শাহ মুরাদ আমিন। ভিএইড রোডের সামনের অংশ(বানিজ্যিক) বাদ দিয়ে ভিতরের দিকে বিলাস বহুল বাড়ির দ্বিতল পর্যন্ত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০০৫ সালের দিকে। পরর্তীতে তিনি আমেরিকা চলে যান। নির্মাণাধীন বাড়ির অবশিষ্ট কাজ শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর নির্মাণাধীন বাড়ি ও জায়গার মানিক হন তার স্ত্রী সেরিনা বুলবুল ওরফে শিরিনা বুলবুল ও ছেলে তৌহিদ আমিন বুলবুল।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ২২ নভেম্বর নির্মাণাধীন বাড়ির অবকাঠামোসহ মৃত শাহ মুরাদ আমিন এর আমেরিকা প্রবাসি স্ত্রী সেরিনা বুলবুল ওরফে শিরিনা বুলবুল ও ছেলে তৌহিদ আমিন বুলবুল বিক্রি করে আমেরিকা চলে যান। দালালের মাধ্যমে নির্মাণাধীন বাড়িসহ সাড়ে ১২ শতক জমি কিনে নেন গাইবান্ধা পৌরসভার মহুরীপাড়া এলাকার মো. শরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোছা. রোকাইয়া ইসলাম। জমি রেজিষ্ট্রি দলিলের সময় সরকারি ফি কম দেওয়ার জন্য বানিজ্যিক এলাকার জমি ও নির্মাণাধীন বাস ভবন থাকার পরও স্থাপনা নেই দেখিয়ে কম দামে জমি দলিল করা হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ গাইবান্ধা সদর পৌর এলাকাধীন শ্রেণিভেদে গোবিন্দপুর মৌজায় প্রতি শতক জমির সর্বনি¤œ বাজার মূল্য অনুযায়ী সাড়ে ১২ শতাংশ জমির বাণিজ্যিকের দাম পড়ে এক কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮২৫ টাকা এবং অবকাঠামোর মুল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকাসহ মোট ২ কোটি ১৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮২৫ টাকা। অথচ সেখানে জমি দলিলে জমির শ্রেণি বাস্তু এবং স্থাপনা নেই দেখিয়ে ৬০ লাখ টাকায় দলিল করা হয়েছে। অথচ সেখানে একটি নির্মাণাধীন বাড়ির অবকাঠামো রয়েছে। যার প্রমাণ দলিলেই উল্লেখ রয়েছে। দলিলের ১১ নম্বর ক্রমিকে সম্পত্তির তফশিলে লেখা রয়েছে, সাড়ে ১২ শতাংশ জমি এবং তদউপরিস্থিত দন্ডায়মান পাকা স্থাপনাসহ বিক্রিত রহিল। এই জমিটি ভিএইড রোডের পাশেই ও সেখানে একটি দ্বিতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এই দলিল সম্পাদন করা হয়েছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রেজিষ্ট্রির সময় দলিলটি লিখেছেন মো. সিরাজুল ইসলাম মিথেন। দলিল সম্পাদন বা পাশ করেছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মো. রজ্জব আলী। জমি দলিলের সময় সরকারি ফি বাবদ সাড়ে ৮ শতাংশ টাকা হিসাবে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা নেন সাব রেজিস্ট্রার। তারপর সেই টাকা চলে যায় সরকারি কোষাগারে। কিন্তু এখানে জমি দলিলে কম টাকা ওঠানোয় সরকার রাজস্ব আয় থেকে ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ৭১৫ টাকা সরকারি খাতে জমা হবার কথা। কিন্তু তথ্য গোপন করে দলিল সম্পাদনের কারণে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭১৫ টাকা। এ ছাড়াও বেশি টাকার জমি অল্প দামে বিক্রি করা এবং স্থাপনা থাকার পরও তা দলিলে না উঠিয়ে দলিল সম্পাদন করার বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয় ওই অভিযোগে।

বিক্রেতা জমিটির সাবেক মালিক মুন্সিপাড়ার তৌহিদ আমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগকারিরা জানান, সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের একটি চক্র তথ্য গোপন করে এবং সরকারি রাজস্ব ফাকি দিয়ে ফায়দা লুটেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জমির ক্রেতা ও বর্তমান মালিক মহুরীপাড়া এলাকার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সঠিক দামে জমি কেনা হয়েছে। দলিলের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ভ্যাট-ট্যাক্স ও রাজস্ব পেয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়নি। দলিলে কম মুল্য তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দালালের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা হয়। জমি কেনাবেচার সময় অনেক দালাল কাজ করে। তারাই হয়তো এমনটা করেছেন। দলিলে নির্মাণাধীন দ্বিতল ভবনের স্থাপনা না দেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে স্থাপিত বিল্ডিংটি আগেই আলাদাভাবে পুরাতন ভবন হিসেবে ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে ক্রয় করে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মো. রজ্জব আলী মন্ডল বলেন, প্রতিদিন অনেক দলিল সম্পাদন