October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 17th, 2022, 8:45 pm

গাইবান্ধায় সার্কাসের হাতির তান্ডব সাত ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধা সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে আজ রোববার দিনভর তান্ডব চালিয়েছে সার্কাসের একটি হাতি। তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ২৫টি গ্রামে হাতিটি দাঁপিয়ে বেড়ায়। এসময় হাতিটি উঠতি বোরো ফসলের ক্ষতি করে। প্রায় সাতঘন্টা চেষ্টার পর বিকেলে মাউথ (হাতির চালক) হাতিটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
পুলিশ, হাতির মাউথ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, এটি একটি সার্কাসের হাতি। হাতিটি সার্কাসে খেলাধুলার কাজে ব্যবহৃত হয়। করোনা ও রমজানের কারণে বর্তমানে সার্কাস বন্ধ রয়েছে। হাতিটিকে গতকাল শনিবার রংপুর থেকে গাইবান্ধায় নিয়ে আসে মাউথ। এরপর হাতির খাবার কেনার কথা বলে গাইবান্ধা শহরের বিভিন্ন দোকানে চাঁদা তোলা হয়। আজ রোববার সকালে গাইবান্ধা থেকে হাতিটিকে গাইবান্ধা-নাকাইহাট সড়ক ধরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাইহাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।


সকাল নয়টার দিকে হাতিটি সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বালুয়াবাজার এলাকায় পৌঁছে। এসময় বালুয়া বাজারে কয়েকজন তরুণ হাতিটিকে বিরক্ত করে। এতে হাতিটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন মাউথ। হাতিটি সড়ক থেকে উঠতি বোরো ধানের জমিতে নেমে পড়ে। এক পর্যায়ে মাউথকে ছিটকে ফেলে দেয় হাতিটি। পরে মাউথ হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এটি বালুয়া বাজার এলাকা থেকে ধানের জমির ভিতর দিয়ে দ্রুত ছুটে চলে। পিছনে মাউথসহ হাতির সঙ্গে আসা পাঁচজন দৌড়াতে থাকে। কিন্তু তারা হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হয়। এভাবে হাতিটি রামচন্দ্রপুর, একই উপজেলার সাহাপাড়া ও বল্লমঝাড় ইউনিয়নের আন্তত ২৫টি গ্রামের বোরো ধানের ক্ষতি করে।
এসময় শতশত উৎসুক জনতা আশেপাশ থেকে হাতির তান্ডব দেখতে ভীড় জমায়। হাতিটির ক্ষতি না করতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশ মানুষকে শান্ত থাকতে মাইকিং করে।


রবিবার বিকেলে সরেজমিনে বল্লমঝাড় ইউনিয়নের খামার বল্লমঝাড় গ্রামে গিয়ে গেছে, উঠতি বোরো জমিতে হাতিটি এদিক সেদিক যাবার চেষ্টা করছে। পিছনে মাউথ ও তার সহযোগিরা হাতিটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। চারিদিকে শতশত মানুষ ভীড় করে হাতির তান্ডব দেখছে। এসময় বল্লমঝাড় ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ ও গ্রাম পুলিশ মানুষকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন। তারা হাতির কাছে না যেতে মাইকিং করছেন।
এদিকে স্থানীয়রা বিষয়টি ঘটনাস্থল থেকে জেলা প্রশাসককে জানান। এরপর হাতিটি নিয়ন্ত্রণ করতে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান মুঠোফোনে ঢাকাস্থ প্রধান বন সংরক্ষককে অবগত করেন। বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাবার আগেই বিকেল পৌনে চারটার দিকে বল্লমঝাড় ইউনিয়নের খামার বল্লমঝাড় গ্রামে হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় মাউথ। প্রায় সাতঘন্টা চেষ্টার পর হাতিটি মাউথের নিয়ন্ত্রণে আসে। বিকেল চারটার দিকে মাউথ হাতিটিকে নিয়ে রংপুরের দিকে চলে যায়। বল্লমঝাড় ইউপি চেয়ারম্যান জুলফিকার রহমান জানান, ফসলের একটু ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মানুষের বা ঘরবাড়িরর কোন ক্ষতি হয়নি।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো. মাছুদার রহমান সরকার বলেন, সার্কাসের হাতি সাধারণত এ ধরণের আচরণ করে না। সে হয়তো বেশি ক্ষুধার্ত ছিল। মাউথ হাতিটির মাথায় আঘাত করে পরিচালনার চেষ্টা করতে পারে। যে কারণে হাতিটি এ ধরণের আচরণ করেছে। তিনি আরও বলেন, সার্কাসের হাতি লোকালয়ে নিয়ে ঘোড়ার কথা নয়। খাবার সংকট হলে হাতির মালিকেরই দেওয়ার কথা।
তবে চাঁদা তোলার বিষয়টি হাতির মাউথ শাকিল ইসলাম অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, হাতি দেখে অনেকে খুশি হয়ে ১০-২০ টাকা দেয়। তা তারা হাতির পিছনে খরচ করেন। হাতিটিকে বাইরে আনার বিষয়ে তারা কোন মন্তব্য করেননি।