নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাড়ি সঙ্কটে বিঘ্নিত হচ্ছে পুলিশের কার্যক্রম। যানবাহন সঙ্কটে ভুগছে থানা ও হাইওয় পুলিশ। বর্তমানে পুলিশ বাহিনীর হাতে যেসব গাড়ি রয়েছে সেগুলো পুরনো ও লক্কর-ঝক্কর মার্কা। আবার অনেক গাড়িই ফিটনেসবিহীন। এমনকি গাড়ি নষ্ট হলে মেরামতও করা হচ্ছে না। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশের সব থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে রিকুইজিশন করা গাড়ি ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আর সেজন্য থানা ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ি রিকুইজিশন করতে হচ্ছে। অনেক থানা পুলিশ আবার ভাড়া করা গাড়ি ব্যবহার করছে। অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েই ডিউটি পালন ও অভিযানে অংশ নিচ্ছে। বিগত ৩ বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে পুলিশের নতুন গাড়ি কেনা। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর গাড়ি খুবই জরুরি। কিন্তু মাঠপর্যায়ে পিকআপ, প্রিজন ভ্যান, জিপ, পাজেরো থেকে শুরু করে সব ধরনের গাড়ি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। থানায় ডিউটি করার জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি নেই। মূলত বাজেটে ঘাটতি থাকায় প্রয়োজন থাকলেও পুলিশ বাহিনী গাড়ি কিনতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়েই মেয়াদোত্তীর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী গাড়ি নিয়ে পুলিশকে ডিউটি করতে হচ্ছে। তাতে পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, বর্তমানে পুলিশ যে গাড়িগুলো ব্যবহার করছে তার বড় একটি অংশই ভিআইপি প্রটোকলে নিয়োজিত। যদিও বিগত কয়েক বছরে কর্মকর্তাদের জন্য বেশকিছু গাড়ি কেনা হয়েছে। কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে থানার ওসি এবং এসি-এএসপি (সার্কেল) যে গাড়িতে চড়েন তাও অনেক সময় নিয়মিত অভিযানে দেখা যায়। এমন পরিস্থিতিতে থানা পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রম, আসামি ধরতে যাওয়াসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে গাড়ি সঙ্কটের কারণে বিঘিœত হচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থায় নিয়মিত টহলে পুলিশ রিকুইজিশন করা গাড়ি ব্যবহার করছে। এমনকি ব্যারাক থেকে আরেক স্থানে যাতায়াতের জন্যও পুলিশ রিকুইজিশন করা বাস ব্যবহার করছে। বেশি পুরানো ও ভাঙা গাড়ি দিয়ে টহল পুলিশকে ডিউটি করতে হয়। তার মধ্যে হাইওয়ে পুলিশের অবস্থা আরো নাজুক। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পুলিশের জন্য ১শ’ গাড়ি ক্রয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ১ হাজার ৪১২টি গাড়ি রয়েছে। তার মধ্যে ৯৫২টি মোটরসাইকেল। তাছাড়া ২৬০টি পিকআপ ভ্যান, ৯২টি জিপ, ২১টি পেট্রোল জিপ, ২৬টি মাইক্রোবাস, ১৬টি বাস, ৮টি রায়ট কার, ৫টি অ্যাম্বুলেন্স ও ১৫টি প্রিজন ভ্যান রয়েছে। ওসব যানবাহনের শতকরা ৬০ ভাগই ব্যবহার অনুপযোগী। মেয়াদোত্তীর্ণ ওসব গাড়ি মেরামত করতে গিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের রাজারবাগ এমটি বিভাগের সদস্যদের রীতিমতো গলদঘর্ম অবস্থা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের গ্যারেজে অনেক মোটরসাইকেল, জিপ ও অন্যান্য গাড়ি মেরামতের জন্য লাইন করে রাখা হয়েছে। ওসব গাড়ি কবে চলাচলের যোগ্য হবে তা কেউ জানাতে পারেননি। প্রতিটি থানায় একটি করে প্রিজন ভ্যান থাকার কথা থাকলেও এখনো তা নিশ্চিত করা যায়নি। এদিকে গাড়ির অভাবে কোন কোন থানা এলাকায় পুলিশ বেবীটেক্সি দিয়ে টহল দিয়ে থাকে। কোনো কোনো থানায় সীমিত গাড়ি থাকলেও তা লক্কর-ঝক্কর। তা নিয়ে অভিযান চালাতে গেলে অপরাধীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এয়াড়া ঢাকার প্রায় প্রতি থানা এলাকায় ভিআইপিদের যাতায়াত থাকে। গাড়ি দিয়ে তাদের নিরাপত্তা দিতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ সময় ভিআইপি কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা পুলিশের নিরাপত্তার বাইরে চলে যান। আর ঢাকার বাইরে বেশিরভাগ জেলা এলাকায় ইপিজেডসহ মিল-কারখানা রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়টিও স্ব স্ব থানা পুলিশকে মাথায় রাখতে হয়। অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, আগের চেয়ে বর্তমান সরকারের আমলে থানায় গাড়িসহ অন্যান্য সামগ্রী বেশি সরবরাহ করা হয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সেজন্য নতুন গাড়ি ক্রয় করার প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২