October 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 3rd, 2022, 8:18 pm

গ্যাস সঙ্কটে বিপাকে দেশের সম্ভাবনাময় সিরামিক পণ্য

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গ্যাস সঙ্কটে বিপাকে দেশের সম্ভাবনাময় সিরামিক পণ্য। যদিও দেশের সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার সম্ভাবনাময় রফতানি এবং আমদানি বিকল্প খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু গ্যাস সঙ্কটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে ওই শিল্পের উৎপাদন। সিরামিক কারখানার উৎপাদন ক্ষমতাভেদে ১৫ পিএসআই পর্যন্ত লোড অনুমোদন করা থাকলেও গ্যাসের প্রেসার কোনো কোনো কারখানায় কখনো কখনো ২-৩ পিএসআই থেকে শূন্য পর্যন্ত নেমে আসছে। অথচ কারখানা চালাতে ন্যূনতম ১০ পিএসআই গ্যাসের প্রেসার প্রয়োজন। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কাক্সিক্ষত মাত্রায় গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেও আশ্বাস মিলছে না। বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চাহিদামতো গ্যাসের প্রেসার না থাকায় দেশের সিরামিক কারখানাগুলোয় উৎপাদন বন্ধ রাখায় নির্ধারিত সময়ে পণ্য রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ক্রয় আদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কম মাত্রায় গ্যাস সরবরাহের কারণে কারখানার চুল্লি বন্ধ থাকছে। ফলে প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার সিরামিক পণ্যের উৎপাদন কম হচ্ছে। তাছাড়া নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ না হওয়ার কারণে পোড়ানোর অপেক্ষায় চুল্লিতে থাকা মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মূলত সিরামিক কারখানাগুলোয় পর্যাপ্ত মাত্রায় গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্পের উৎপাদন।
সূত্র জানায়, দেশের সিরামিক শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। ওই খাত থেকে বার্ষিক প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। বর্তমানে দেশের সিরামিক শিল্পে প্রত্যক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার আর পরোক্ষভাবে ৪ লাখের বেশি শ্রমিক জড়িত। সিরামিক খাতটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। দেশে টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যারে ৭০টি কারখানা রয়েছে। আর ওসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন গ্যাসচালিত হওয়ায় অন্য জ¦ালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। সরবরাহকৃত গ্যাসের চাপ কম হলে ওসব কারখানা চালু রাখাও সম্ভব নয়। ফলে দেশীয় সিরামিক শিল্প বিদেশী পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সিরামিক পণ্য আমদানিনির্ভর হলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। তাছাড়া দেশের সিরামিক খাতের ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সূত্র আরো জানায়, পঞ্চাশের দশকের শেষে দেশে আধুনিক সিরামিক শিল্প যাত্রা করে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহের জন্য পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্বাধীনতার পরপর প্রতিষ্ঠানটির নাম পাল্টে রাখা হয় পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কারখানাটি ১৯৬৬ সালে উৎপাদন শুরু করেছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে সিরামিক পণ্য উৎপাদনকারী ৭০টি শিল্প-কারখানা আছে। দেশের অনেক বড় কোম্পানি এ মুহূর্তে সিরামিক টাইলস পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও পণ্যটির বাজার ব্যাপ্তি ছিল ৪ হাজার ৬০১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার। ওই সময়ের পর থেকে এ পর্যন্ত শিল্পটির আকার আরো বেড়েছে। চলমান কভিড মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর সাময়িক স্থবিরতা থাকলেও তা এ বাজার সম্প্রসারণকে থামাতে পারেনি। তাছাড়া আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিরামিক শিল্পের মূল পণ্য ছিল টেবিলওয়্যারই (বাসন-কোসন)। যদিও দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে টেবিলওয়্যারের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ ছিল কম। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে টেবিলওয়্যারের ব্যবহার বাড়ছে। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরে দেশে এ-জাতীয় পণ্যের বাজার ৬৭ শতাংশ সম্প্রসারিত হয়েছে। সব মিলিয়ে সিরামিক শিল্পে মোট বিনিয়োগের ২৪ শতাংশ টেবিলওয়্যারে নিয়োজিত রয়েছে। যদিও স্থানীয় বাজারে বিক্রীত সিরামিক পণ্যের মধ্যে টেবিলওয়্যার মাত্র ৯ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ বাজারে পিছিয়ে থাকলেও রফতানিতে সিরামিক শিল্পে সবচেয়ে এগিয়ে টেবিলওয়্যার। সিরামিক পণ্যের মোট রফতানির ৯৮ শতাংশই টেবিলওয়্যার। ওই পণ্য ব্যবহার করছে বিশ্বের ৩১টি দেশের মানুষ। তাছাড়া সরকারি উদ্যোগে আশির দশকের শুরুতে সিরামিক স্যানিটারিওয়্যার (কমোড, প্যান, বাথটাব, বেসিন ইত্যাদি) উৎপাদনের পথ তৈরি হয়। শুরুতে টেবিলওয়্যার উৎপাদনের ঝোঁক বেশি থাকলেও পরবর্তী সময়ে টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার উৎপাদন সক্ষমতাও গড়ে ওঠে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিসিএমইএর সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দীন জানান, গাজীপুর জেলার সিরামিক কারখানাগুলো এক মাসের বেশি সময় ধরে ঠিকমতো প্রেসারে গ্যাস পাচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্যাসের প্রেসার থাকে ১-২ পিএসআই। ওই অঞ্চলের সব কারখানা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তার মধ্যে একটি কারখানার উৎপাদন বন্ধই হয়ে গেছে। তিতাসের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়নি। সেজন্যই সিরামিক শিল্প রক্ষায় প্রয়োজনীয় মাত্রায় গ্যাস পেতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডির কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। কারণ বর্তমানে গ্যাসের যে চাপ সেটা অব্যাহত থাকলে সিরামিক শিল্পের টিকে থাকাটা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।