November 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 6th, 2022, 7:34 pm

চমকে দিলেন টিয়াফো

অনলাইন ডেস্ক :

ম্যাচ শেষ হতেই দুহাতে মুখ ঢেকে ফেললেন ফ্রান্সেস টিয়াফো। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের ঠাসা গ্যালারি তখন প্রকম্পিত তার নামের গর্জনে। কিন্তু তিনি নিজেই যে বিশ্বাস করতে পারছেন না, রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে দিয়েছেন! একটু থিতু হওয়ার পর যখন মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ালেন, তখনও টিয়াফো যেন ঘোরের মধ্যে, “আমি জানি না কী বলা যায়আমি উচ্ছ্বসিত, এটুকু বললেও কিছুই বোঝাবে না চোখে জল চলে এসেছে প্রায়।” এই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলা, এমন আবেগের প্রকাশ বাড়াবাড়ি নয় মোটেও। এই ম্যাচের আগে কজনই বা তার নাম জানতেন বা তাকে চিনতেন! সেই টিয়াফো জন্ম দিলেন এবারের ইউএস ওপেনের সবচেয়ে বড় অঘটনের। ইউএস ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে যুক্তরাষ্ট্রের এই ২৪ বছর বয়সী খেলোয়াড় হারিয়ে দিলেন ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী নাদালকে। টেনিস বিশ্ব দেখল নতুন এক তারকার উত্থান। ইউএস ওপেনে সোমবার র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর তারকা নাদালকে ৬-৪, ৪-৬, ৬-৪, ৬-৩ গেমে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রাখেন ২৬ নম্বরে থাকা টিয়াফো। এই বছর গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টে টানা ১৭ জয়ের পর নাদালের প্রথম হার এটি। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও ফ্রেঞ্চ ওপেনে শিরোপা জয়ের পর তিনি উইম্বলডনে সেমি-ফাইনাল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন চোটের কারণে। টিয়াফো এবারের আগে গ্র্যান্ড স্লাম আসরের কোয়ার্টার-ফাইনালের ছবি দেখতে পেরেছিলেন ¯্রফে একবারই, সেটিও সেই ২০১৯ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। নাদালের বিপক্ষে আগের দুই লড়াইয়ে ম্যাচ জয় তো বহুদূর, একটি সেটই জিততে পারেননি টিয়াফো। এমনকি আদায় করতে পারেননি কোনো ব্রেক পয়েন্টও। এটুকুতেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা ফেভারিট ছিলেন নাদাল। কিন্তু এ দিন শুরু থেকেই ভয়ডরহীন ও আগ্রাসী টেনিস খেলে কিংবদন্তি প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেন টিয়াফো। নাদাল এমনিতে এই টুর্নামেন্টে খুব ভালো ছন্দে ছিলেন না। টিয়াফোর দারুণ পারফরম্যান্সে তিনি আরও চাপে পড়ে নিজেকে যেন হারিয়ে ফেলেন এই ম্যাচে। তার সার্ভ ও রিটার্ন বেশির ভাগ সময়ই ছিল দুর্বল। ৯টি ডাবল ফল্ট করেন তিনি। চতুর্থ সেটে অবশ্য লড়াইয়ে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে একপর্যায়ে ব্যবধান করে ফেলেন ৩-১। তবে টিয়াফো ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেননি খুব বেশি। বাকি সময়টায় টিয়াফোর দাপটের সামনে খুব একটা টিকতে পারেননি নাদাল। টিয়াফোর বাবা-মা ১৯৯৩ সালে সিয়েরা লিওন থেকে এসে আবাস গড়েন যুক্তরাষ্ট্রে। টিয়াফোর জন্ম ১৯৯৮ সালে ম্যারিল্যান্ডে। ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে একটি জুনিয়র টেনিস সেন্টারের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন তার বাবা। সেখানেই টিয়াফোর টেনিসে হাতেখড়ি ও শিক্ষা। এরপর এগিয়ে যাওয়া। এই মুহূর্তে তিনি টেনিস বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত নাম। খেলা শেষ হওয়ার পর আত্মহারা টিয়াফো যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন আর কী বলবেন। “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তিনি অবশ্যই সর্বকালের সেরাদের একজন। আমি আজকে অবিশ্বাস্য টেনিস খেলেছি। তবে সত্যি বলতে বুঝতে পারছি না কী হয়ে গেল!” তবে পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বললেন, প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়েই এই ম্যাচে কোর্টে নেমেছিলেন। এই পথচলাকে এখন তিনি ছুটিয়ে নিতে চান ট্রফি জয় পর্যন্ত। “বছর দুয়েক আগে হলে হয়তো নিজেকে বলতাম, ‘নাদালের সঙ্গে খেলতে পারছি, এটাই তো দারুণ ব্যাপার।’ তবে আজকে আমি যখন সেখানে যাই, আমার সঙ্গীদের দিকে তাকিয়ে বলেছি, ‘চলো, আজকে জিতে নেওয়া যাক!’ আমি এখানে এসেছি ইউএস ওপেন জিততে। শেষ পর্যন্ত যেতে চাই আমি।” র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ তারকা দানিল মেদভেদেভ আগের দিন হেরে যাওয়ার পর শিরোপার পথে সবচেয়ে ফেভারিট ছিলেন নাদাল। কিন্তু নিজের গ্র্যান্ড স্ল্যামের রেকর্ড ২৩টিতে নেওয়া হলো না এবার। হেরে যাওয়ার পর অজুহাত না খুঁজে ৩৬ বছর বয়সী তারকা কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন নিজেকেই। “টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সপ্তাহখানেক খুব ভালো অনুশীলন হয়েছে আমার। তবে আসর শুরুর পর অবনমন হতে শুরু করে। কিছু কারণেৃ সঠিক জানি নাৃ গত দুই মাসে মানসিকভাবে অনেক কিছুর ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে এসবের আসলে মূল্য নেই। বাস্তবতা হলো, ইউএস ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠেছি এবং সেখানে এমন একজনের সঙ্গে লড়েছি, যে আমার চেয়ে ভালো খেলেছে। এজন্যই আমাকে দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে।” “এখন অনেক বিলাপ করতে পারি বা আক্ষেপ হতে পারে, তাতে চিত্র বদলাবে না। অজুহাত বের করার কিছু নেই। নিজের সমালোচনা যথেষ্ট পরিমাণে করতে হবে। সমাধান বের করার ও উন্নতি করার একমাত্র পথ এটিই।”