পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাহিদার অতিরিক্ত ৫০ হাজার ৩১১টি কোরবানিযোগ্য পশু লালন-পালন করা হয়েছে। খামার ও পারিবারিকভবে এসব পশুকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে লালন পালন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। জেলার চাহিদা পুরণ করে অন্য জেলায়ও গরু চালান করে খামারিরা লাভবান হবেন বলে আশা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
তবে পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারিরা। তারা বলছেন, বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় পশু পালনের ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণ। ফলে গরুর দামও বেড়ে যাবে।
জেলা প্রণিসম্পদ দপ্তরের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, এবার জেলায় কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯ টি পশু। আর কোরবানির জন্য মোট পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৯০টি। অর্থাৎ অতিরিক্ত রয়েছে ৫০ হাজার ৩১১ টি পশু। জেলার ৫ উপজেলায় খামারি রয়েছেন ১২ হাজার ১৫৯জন।
খামারে ও পারিবারিকভাবে এসব পশু লালন পালন করা হয়েছে। এর মধ্যে গরু ৯৬ হাজার ৫৪৩টি, ছাগল ৭০ হাজার ৩১৯টি, ভেড়া ৯ হাজার ৫৮৭টি ও মহিষ রয়েছে ২৪১টি।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারো জেলার খামারিরা পশু পালন করেছেন। তারা জানান, গরু লালনপালনে বা মোটাতাজাকরণে তারা মানব স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট বা ইনজেকশন ব্যবহার করেন না। সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পুষ্টিকর খাবার ব্যবহার করছেন।
তারা জানান, বর্তমানে দেশে পর্যপ্ত পরিমানে গরুর খামার গড়ে উঠেছে। এ খাতের প্রতি সরকার নজর দিলে ভারত বা মিয়ানমার থেকে গরু আনার কোনো প্রয়োজন পড়বে না।
তারা আরও জানান, বর্তমানে পশু খাদ্যের দাম অনেক বেশি। পশু লালনপালনে গত বছরের চেয়ে এবার খরচ বেড়েছে দ্বিগুন। এতে গরুর দাম বেশি হবে।
সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার খামারি আবু বাক্কার বলেন, তার খামারে এবার ৮০টি গরু রয়েছে। যা কোরবানীর জন্য প্রস্তুত। এসব গরু ৫মন থেকে ১২ মন পর্যন্ত ওজনের। এসব গরু দেড় লাখ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দামের।
ঈদকে সামনে রেখেই আমি প্রতি বছর ৩ মাস থেকে ৬ মাস আগে গরু কিনে মোটাতাজা করি। ২০১২ সাল থেকে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। তবে গরু মোটাতাজা করতে কোন সময়ই স্টেরয়েড জাতীয় ট্যাবলেট বা ইনজেকশন ব্যবহার করি না। সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতেতে পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করে থাকি।
তিনি আরও বলেন, গত রমজান মাসে এই ৮০টি গরু কিনেছিলাম। এসব গরুর মধ্যে কিছু ঢাকায় পাঠাবো, আর বাকিটা স্থানীয় হাটে বিক্রি করব। আশা করছি বাজার দর ভালো পাব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নামোনিমগাছি এলাকার খামারি ইকবাল হোসেন জানান, তার খামারে এবার কেরবানির জন্য ১৫টি গরু ও ৮টি মহিষ আছে। তবে এবছর পশু খাদ্যের দাম দ্বিগুন। খবার খরছ এক বছর আগে যা ছিলো এবার তার চেয়ে বেশি।
তিনি জানান, যে ভুট্টা কিনতাম ১৮ টাকা কেজি সেটা এখন ৩৬ টাকা কেজি, যে গম ছিলো ২২ থেকে ২৩ টাকা কেজি সে গম এখন ৫৪ টাকা কেজি। ৭০০ টাকার খড় এখন ৪ হাজার টাকা, যে সোয়াবিন ভুষি খাওয়াতাম ৫২ টাকা কেজি সেটি এখন ৮৪ টাকা। যে ফিড কিনতাম ৩০ টাকা কেজি সেটা এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৫৪ টাকা কেজি।
সদর উপজেলা বুলনপুর এলাকার বাশরী এগ্রো ফার্ম -এর ম্যানেজার সাইদুর রহমান বলেন, বর্তমানে এই খামারে দেশি জাতের ৭০টি গরু আছে। আমরা আশা করছি এসব গরু গড়ে দেড় লাখ টাকা করে দাম পাব। আমরা সব থেকে বিপদে পড়েছি পশু খাদ্যের দাম নিয়ে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার গরুর খাদ্যের দাম অনেক বেশি।
ভুট্টার গুড়া, গমের গুড়া, সরিষার খৈল, চালের গুড়া, কাঁচা ঘাস, খড় প্রভৃতি গরুকে খাওয়ানো হয়। আমরা কোনো হরমন জাতীয় ট্যাবলেট বা ওষুধ যেগুলো গরুকে দ্রুত মোটাতাজা করে এমন কিছু প্রয়োগ করি না বা খাওয়াই না।
বর্তমানে বাজার তেমন ভালো না। তবে আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে বাজার ভালো হবে। ভারত থেকে যদি গরু না আসে আশা করছি সামনে অন্যান্য জেলা থেকে অনেক পার্টি নামবে বাজারটা ভালো হবার আশা করছি আমরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলায় চাহিদার অতিরিক্ত কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। কোরবানি পশুর কোনো সংকট হবে না। বরং স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে বাড়তি পশু অন্যান্য জেলার চাহিদা পুরণ করবে।
এখানকার খামারিরা বাড়তি পশু ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটে নিয়ে যায় আবার অন্য জেলার ব্যবসায়ীরাও এসে কিনে নিয়ে যায়। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। খামারিরা যেন গরু মোটাতাজাকরণে অসাধু উপায় অবলম্বন না করতে পারে সেজন্য উঠান বৈঠক, প্রশিক্ষণ, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসব পর্যবেক্ষণে কাজ করছে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে ভারত থেকে গরু আসা একেবারেই বন্ধ। পশুর হাটগুলোতে বেচা-কেনা জমে উঠবে এবং খামারিরা লাভবান হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি