নিজস্ব প্রতিবেদক:
আমদানির লাগাম টেনে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুনাফা লুফে নিচ্ছে চাল ব্যবসায়ীরা। আর ওই কারণেই কয়েক দফায় সময় বাড়িয়েও বেসরকারিভাবে চাল আমদানির পরিমাণ বাড়ানো যায়নি। সেক্ষেত্রে চাল আমদানিকারকরা ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনমাফিক এলসি (ঋণপত্র) খুলতে না পারার অজুহাত দেখাচ্ছে। ফলে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বেসরকারি ব্যবসায়ীদের হাতে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রার বেশিরভাগ কোটা। আর দেশের প্রভাবশালী ওই চাল সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলেও ভরা মৌসুমে ঠিকই চালের বাজার চড়া থাকছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানির উৎস দেশও সীমিত হয়ে গেছে। অনেক দেশই এখন চাল রপ্তানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। দেশের আমদানিতে তার প্রভাব পড়েছে। প্রায় ৩ মাস আগে বেসরকারি আমদানিকারকদের ১৪ লাখ ৯০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তুমাত্র ৪ লাখ ১০ হাজার টন চাল দেশে এসেছে। আর এখনো দেশে এসে পৌঁছায়নি বাকি ১০ লাখ ৮০ হাজার টন চাল। তবে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে ওই চাল দেশে এসে পৌঁছাবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশাবাদী হলেও বাস্তবে ওই চাল যথাসময়ে আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। মূলত চাল নিয়ে চালাকি করে অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের ফাঁদ পাতা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, খাদ্য সংকটের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ৩০ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত করতে চায়। তবে সরকারি খাদ্য নিরাপত্তা দেশের সব মানুষের জন্য না। মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষ, বস্তিবাসী, জেলে পরিবার, খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস), ন্যায্যমূল্যে খাদ্যশস্য বিতরণ, ভিজিডি ও ভিজিএফ কর্মসূচিতে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে। তাছাড়া সরকার বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মাসিক রেশন দিয়ে থাকে। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু হঠাৎ করে পরিবহণ ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা খাদ্যশস্য আমদানি করতে চাচ্ছে না। আর বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ছে ডলার সংকটের কারণে চাল আমদানি হচ্ছে না। তবে একমাত্র ডলার সংকটেই আমদানি কমেছে ওই ধরনের প্রচার-প্রচারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। তবে গত বছর বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদন কমেছে। ফলে খাদ্যশস্য পাওয়ার উৎস কমে গেছে। কোনো দেশ নিজ দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে রপ্তানি না করাই স্বাভাবিক। যার ফলে চাল গম আমদানি কমছে।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি উদ্যোগে চাল আমদানির পরে এবার সরকারের পক্ষ থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকার ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই চাল কিনতে সরকারের মোট ব্যয় হবে ৪২৩ কোটি ৭৬ লাখ দুই হাজার ৭৫০ টাকা। প্রতিকেজি চালের দর পড়বে ৪২ টাকা ৬৮ পয়সা। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ওই চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদপ্তর ওই চাল কিনবে। ওই ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সেদ্ধ চাল কিনতে মোট খরচ হবে ২১০ কোটি ৩৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা। তাছঅড়া সিঙ্গাপুর থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ওই চালও খাদ্য অধিদপ্তর আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কিনছে। সেজন্য ব্যয় হবে ২১৩ কোটি ৪০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকা।
এদিকে দেশে গত ৫ বছরে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে তার চেয়ে কম হারে বেড়েছে খাদ্যশস্য উৎপাদন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ কোটি ৯৭ লাখ। যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখের কিছু বেশি। অর্থাৎ ৫ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল ও গমের উৎপাদন কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৩০ হাজার টন। খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। ওই হিসাবে যে হারে জনসংখ্যা বেড়েছে সে হারে খাদ্য উৎপাদন বাড়েনি।
সার্বিক বিষয়ে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন জানান, সরকার কাউকে লাভবান কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য চাল আমদানি করছে না। আমদানির উদ্দেশ্য হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আগামী দিনে যাতে কোনো ধরনের সংকটে পড়তে না হয় সেজন্যই সরকার খাদ্য নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার কাজে হাত দিেেছি। স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ মজুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ