অনলাইন ডেস্ক :
চীন তড়িঘড়ি সব বিধিনিষেধ তুলে নিলে দেশটিতে কোভিডে মৃত্যু সংখ্যা ১৫ লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে, শঙ্কা অনেক বিশ্লেষকের। চীন তাদের কঠোর শূন্য-কোভিড নীতির গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর দেশটির অনেক নাগরিক মুক্ত জীবনের আনন্দ উদযাপন করলেও অনেক শহরই বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করে করোনাভাইরাস নিয়ে সাবধানতা বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে। তিন বছরে পড়া কোভিড মহামারীতে বিপর্যস্ত চীনের অনেকেই সম্প্রতি বেইজিংকে অনমনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা বদলে বাকি বিশ্বের মতো রোগকে সঙ্গী করে জীবনধারণের চেষ্টায় বেশিরভাগ বিধিনিষেধ তুলে নিতে পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে আসছিল। গত মাসের বিস্তৃত বিক্ষোভে তাদের হতাশা ফুটেও উঠে; ২০১২ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ক্ষমতায় আসার পর সেটিই ছিল দেশটিতে জনঅসন্তোষের সবচেয়ে বড় প্রকাশ। পরে চীনের অনেক শহর ও অঞ্চল কোভিড মোকাবেলায় দেওয়া বিধিনিষেধ তোলা শুরু করে; যার ধারাবাহিকতায় গত বুধবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনও (এনএইচসি) চীনজুড়ে কোভিডবিধি শিথিলের ঘোষণা দেয় বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এনএইচসি বলেছে, মৃদু উপসর্গধারী আক্রান্তরা এখন ঘরেই কোয়ারেন্টিনে থাকতে পারবেন আর দেশজুড়ে চলাচলসহ নানান কর্মকা-ে শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সংক্রান্ত অ্যাপের প্রয়োজনীয়তাও তারা রহিত করছে। এ ঘোষণার পরপরই অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে পর্যটন ও অবকাশযাপন স্থানগুলোর টিকেট বিক্রি বেড়েছে বলে জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম। দেশটির অনেক নাগরিক এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের কোভিড পজিটিভ হওয়ার কথাও জানাচ্ছেন; অথচ কিছুদিন আগেও চীনের লোকজন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি লুকিয়ে রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। বিধিনিষেধ তোলায় অনেকে উদ্বেগও প্রকাশ করছেন। “আমি জানি কোভিড এখন অতটা আতঙ্কজনক নয়; কিন্তু এটি এখনও সংক্রামক এবং ভালোই কষ্ট দেবে। আমাদের মনে থাকা ভয় সহজে দূর হবার নয়,” চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবুতে এক পোস্টে এমনটাই বলা হয়েছে। গত বুধবার চীন নতুন ২১ হাজার ৪৩৯ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছে, আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ২৫ হাজার ৩২১। “অনেক বেশি পজিটিভ,” বলেছেন আরেক উইবু ব্যবহারকারী। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে চীনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ভাইরাসের বিপদের ঝুঁকি নিয়ে নরম সুরে কথা বলতে দেখা গেছে। বিশ্বের অনেক দেশই বছরখানেকেরও বেশি সময় ধরে বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে ভাইরাসকে সঙ্গী করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে; চীনও এখন ধীরে ধীরে সে পথে হাঁটছে। তবে গত বুধবার কোভিড-১৯ নিয়ে নতুন নির্দেশনা ঘোষণার পাশাপাশি অনেক শহরই বাসিন্দাদেরকে ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা বজায় রাখতে অনুরোধ করেছে। “ব্যক্তিগত সুরক্ষা বিষয়ে ভালো সচেতনতা বজায় রাখতে হবে জনসাধারণকে। নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে নিজেকেই প্রথম দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তি হতে হবে,” বাসিন্দাদেরকে দেওয়া বার্তায় বলেছে চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ঝেংঝু। এখানেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ আইফোন কারখানা অবস্থিত। বাসিন্দাদেরকে মাস্ক পরতে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, জ¦র এবং অন্যান্য কোভিড উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসা নিতে এবং সবাইকে বিশেষত বয়স্কদেরকে টিকা নিতেও আহ্বান জানিয়েছে তারা। অনেক বিশ্লেষক ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিডের বড়সড় প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় চীনের প্রস্তুতি নেই। এর পেছনে ঝুঁকিপূর্ণ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনামূলক কম টিকাদান এবং দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্যতম কারণ হিসেবেও দেখছেন তারা। “কোভিডকে সঙ্গী করে জীবনযাপন শুরুর ক্ষেত্রে বিলম্ব করায় চীনকে হয়তো চড়া মূল্য দিতে হবে,” গতকাল বৃহস্পতিবার এক নোটে এমনটাই বলেছেন জাপানি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কোম্পানি নোমুরার বিশ্লেষকরা। চীনে সংক্রমণের হার মাত্র শূন্য দশমিক ১৩ শতাংশ, যা ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জনের মাত্রা থেকে অনেক অনেক দূরে, বলেছে নোমুরা। চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের সাবেক কর্মকর্তা ফেং জিজিয়ান চায়না ইয়ুথ ডেইলিকে বলেছেন, পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার আগে সংক্রমণের যে বড় ঢেউ আসবে, তাতে চীনের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই কোভিডে আক্রান্ত হতে পারে। “সবমিলিয়ে জনসংখ্যার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ আক্রান্ত হতে পারে,” বলেছেন তিনি। চীনে এখন পর্যন্ত কোভিডে মাত্র ৫ হাজার ২৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় খুবই কম এবং ১৪০ কোটি মানুষ অধ্যুষিত দেশটির জনসংখ্যারও অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ। তবে চীন তড়িঘড়ি সব বিধিনিষেধ তুলে নিলে দেশটিতে কোভিডে মৃত্যু সংখ্যা ১৫ লাখও ছাড়িয়ে যেতে পারে, শঙ্কা অনেক বিশ্লেষকের।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু