October 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 15th, 2023, 9:51 pm

জনঘনত্বের চাপ কমাতে ঢাকাতে আরো উপশহর গড়ার উদ্যোগ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জনঘনত্বের চাপ কমাতে রাজধানীতে আরো উপশহর গড়ার উদ্যোগ নিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ওই লক্ষ্যে ঢাকার পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে গড়ে তোলা হবে ৫টি উপশহর। তার মধ্যে একটি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ করে এখন চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে। আর শেষের পথে বাকি ৪টি প্রকল্পেরও সম্ভাব্যতা যাচাই। গতানুগতিক থেকে ভিন্ন ধরনের হবে নতুন প্রকল্পগুলো। ফলে গোটা রাজধানীর অবয়বই বদলে যাবে। ওসব প্রকল্পে প্রচলিত প্লটের পরিবর্তে ব্লকভিত্তিক বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে নতুন উপশহরে কত ব্লক হবে তা আরো পরে চূড়ান্ত হবে। তাতে এককভাবে কাউকে প্লট দেয়া হবে না। এক বিঘার প্লট দিলে ৪ জনকে দেয়া হবে। দুই বিঘার প্লট হলে ৮ জন পাবে। প্রকল্প এলাকার ভেতরে খেলার মাঠ করা যাবে। ফলে ওসব উপশহর আন্তর্জাতিক মানের হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিপুলসংখ্যক মানুষের আবাসনের চাহিদা থেকেই ওসব নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণপ্রান্তে ঝিলমিল সংলগ্ন নেয়া হয়েছে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন। ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে রোডের পাশে কেরানীগঞ্জ উপজেলার ঝিলমিল প্রকল্পের কাছেই নতুন উপশহরে থাকবে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল, অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্র্রিজ, ওয়্যার হাউস, ব্যাংকপাড়া। উপশহরটিতে সাড়ে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এক-একটি ভবনের উচ্চতা হবে কমপক্ষে ২০তলা। প্রকল্প এলাকায় গ্রীন স্পেস ও জলাভূমি হিসেবে ২০ শতাংশ জায়গা রাখা হবে। তাছাড়া ওই উপশহরে মাঠ, বাজারসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। রাজউক ওই উপশহরকে বিজনেস হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) ঘোষণার পর এটিই প্রথম ব্লকভিত্তিক উন্নয়ন করে একটি আন্তর্জাতিকমানের শহর গড়ার পরিকল্পনা করেছে রাজউক। উপশহরটির প্রধান লক্ষ্য কর্মসংস্থান। পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণবঙ্গের কৃষিপণ্য সহজেই ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছে। কাজেই ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের পাশে একটি উপশহর গড়ে ওঠলে তা হবে দেশের বিজনেস হাব। তাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। ওই প্রকল্পে অর্থ জোগানে রাজউক নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করতে চায়। আর তা সম্ভব না হলে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় কাজ করার ভাবনা রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পর থেকে ৭ বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করতে চায় রাজউক। সেজন্য দেশী বড় বড় আবাসন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হতে পারে। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানকে লিজও দেয়া হতে পারে। দেশীয় উপকরণ ব্যবহার করেই ওই শহর গড়া হবে। সব সুযোগ হাতে রেখেই প্রকল্প প্রস্তাব করবে রাজউক। সেখানে প্রচলিতভাবে সিঙ্গেল প্লট দেয়া হবে না। থাকবে ব্লকভিত্তিক বড় বড় প্লট। বেশিসংখ্যক মানুষের বাসস্থান সংকুলানের জন্যই এ পদ্ধতি নেয়া হয়েছে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন শহরের মানদন্ড মাথায় রেখেই আন্তর্জাতিকমানের শহর গড়ার ভাবনা থেকেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, রাজউক কেরানীগঞ্জের ১৬টি মৌজায় ২ হাজার ২৮৭ একর জমিতে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পপত্র তৈরি করেছিল। নতুন প্রকল্পপত্রে ঘরবাড়িগুলো বাদ দেয়ায় এখন তা কমে ৯১২ একর নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৬ মৌজার পরিবর্তে এখন ৩টি মৌজার জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্লট হবে ৩ হাজারের কাছাকাছি। কেরানীগঞ্জে আগে যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল সেটা এখন ছোট করে ফেলা হয়েছে। যেসব স্থানে ঘরবাড়ি আছে সেগুলো বাদ দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে সেসব ক্ষতিগ্রস্তের জন্য একটি অঞ্চল তৈরি করে প্লট দেয়া হবে। তাতে ওই এলাকার উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। উপশহর গড়তে কেরানীগঞ্জের পাশেই মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এলাকায় জরিপ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেখানেও বিশেষ প্রকল্প গড়ে তোলা হবে। অত্যাধুনিক ওই প্রকল্পে স্থানীয়দের প্রাধান্য দেয়া হবে। বছরতিনেক আগে ওই উদ্যোগ নেয়া হলেও করোনার জন্য অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে। রাজউক আশাবাদী নতুন বছরেই সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে পরবর্তী ধাপের কাজ শেষ করা যাবে। তাছাড়া নবাবগঞ্জ-দোহার-মাওয়া এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে একটি প্রকল্প করার রাজউকের পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্বাচলের দক্ষিণে হবে শিক্ষা জোন আর পূর্বদিকে হবে আরেকটি আবাসন প্রকল্প। তাছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো রাজধানীতে সম্পূর্ণ নতুন মডেলের একটি বিশেষ মডেল টাউন গড়ে তোলা হবে। শিক্ষা জোন (অঞ্চল) নামে ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে রাজউক। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। আর সেটা হবে পূর্বাচল প্রকল্পের দক্ষিণে পূর্বাচল ও ডেমরার মধ্যবর্তী স্থানে। সেটি বাস্তবায়িত হলে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প এলাকার পূর্বদিকে ঢাকা মহানগর বাইপাসের উত্তরপাশ দিয়ে রাস্তা তৈরি হবে। তবে ড্যাপ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেই আবাসন প্রকল্পের প্লট ও ফ্ল্যাট বরাদ্দের কাজ শুরু হবে। সূত্র আরো জানায়, রাজউক ‘শেখ রাসেল ওয়াটার বেজড বিনোদন পার্ক’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ঘাটারচরের ওই প্রকল্প স্থানের বেশিরভাগই জলাশয়। সরকারি খাস হিসেবে চিহ্নিত ওসব জমির কিছু অংশ দখলদাররা ভরাট করে দখল করে রেখেছে। তাদের উচ্ছেদ করে সেখানে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। সেখানকার জলাশয় ও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। দ্রুতই শুরু হবে শেখ রাসেল ওয়াটার বেজড বিনোদন পার্কের কাজ। সেজন্য প্রকল্প পরিচালকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর সংলগ্ন বছিলা ব্রিজ পার হয়ে সামনের ঘাটারচর এলাকায় ৫০ দশমিক ৭০ একর জমির ওপর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তার মধ্যে ১০ দশমিক ৭২ একর খাসজমি। বাকিটা আশপাশ থেকে অধিগ্রহণ করা হবে। ওই প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ শ’ কোটি টাকা। ওই বিনোদন পার্ককে আকর্ষণীয় করার জন্য থাকবে এম্ফিথিয়েটার, কমিউনিটি সেন্টার, অফিস ভবন, ওয়াচ টাওয়ার, ব্যায়ামাগার, আধুনিক রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট, সাঁতারকাটা, নৌকা ভ্রমণসহ জলাশয়কেন্দ্রিক নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের বনভোজন বা পারিবারিক অনুষ্ঠানের সুযোগ থাকবে। তাছাড়া রাজধানীর আমিনবাজার, মিরপুর, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরের কাশিমপুরের অংশবিশেষ নিয়ে একটি বৃহৎ আবাসন প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজউক। তুরাগ তীর ঘেঁষে সাভার ও আশুলিয়ার বিশাল এলাকা ভূমিদস্যূদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না রাজউক। সেজন্যই ওই প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে আমিনবাজার থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত পুরো এলাকা অধিগ্রহণ করে তুরাগ নদ ও জলাশয়গুলো রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেখানেও যেসব স্থান ভরাট হয়ে গেছে তা প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেয়া হবে। ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংকে (আইডব্লিউএম) দিয়ে ওই এলাকার জরিপও করেছে রাজউক। জরিপ মতে ওই অঞ্চলে ৭১ শতাংশ জলাশয় রয়েছে। বাকি ২৯ শতাংশে প্লট, খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, মার্কেট, হোটেল প্রভৃতি তৈরি করা যাবে। তাছাড়া জায়গাটি বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় আরো আকর্ষণীয় হবে। আমিনবাজার গাবতলী ব্রিজের উত্তরে কোর্টবাড়ি মৌজা ও পশ্চিমে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল থেকে উত্তর দিকে আশুলিয়া পর্যন্ত তুরাগ নদের দুই পাশ দিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর পর্যন্ত এলাকায় হবে ওই আবাসন প্রকল্প। ওসব এলাকায় বেশকিছু ঘরবাড়ি, কারখানা, পার্ক, রেস্টুরেন্ট, পিকনিক স্পট, আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন ধরনের অবাঠামোও রয়েছে। ওসবের প্রায় সবই জলাভূমি ভরাট করে তৈরি হয়েছে। মিরপুরের নবাবেরবাগ, দিয়াবাড়ি, সাভারের সাঁতারবাড়ি, চন্দ্রনারায়ণপুর, শিবপুর, কাউন্দিয়া, বাঘসাঁতরা, বনগাঁ, বেরাইদ, গে-ারিয়া, চাকুলিয়া, বিরুলিয়া, আশুলিয়ার দেনুয়া, বিনোদপুর, প্যারাগাঁও, ভাসান, গুশুলিয়া, গুটিয়া, পালাসনা, জিরাবো ও বাসান মৌজায় বাস্তবায়িত হবে আশুলিয়া আবাসন প্রকল্প। জলাশয় ছাড়া ৯ হাজার একরের কিছু বেশি এলাকা নিয়ে প্রকল্পটি হবে। এদিকে এ বিষয়ে রাাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিচুর রহমান মিঞা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৌখিক নির্দেশনা পেয়েই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে ডিপিপি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। তারপর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে যাবে। ওসব ধাপ পেরিয়ে নতুন বছরেই শুরু করা যাবে কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন। ওসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে চিরাচরিত ঢাকার রূপ বদলে যাবে। নতুন দিগন্তের ছোঁয়ায় ঢাকা আরো বিস্তির্ণ হবে।