জেলা প্রতিনিধি, সাভার :
চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বুধবার (১৯ জুলাই) নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে তৃতীয় দিনের মতো আজ অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারীরা। গত সোমবার সকালে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা এই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন।
বুধবার (১৯ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়,ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছেন নারী-পুরুষ উভয়ই কর্মচারীরা। গত সোমবার থেকে সেখানেই অবস্থান করেছেন বলেও জানান তারা। তারা যেখানে অবস্থান নিয়েছেন তার পাশে প্ল্যাকার্ডে একটি দাবির কথা লেখা,” তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী চাকরি দিতে হবে।” যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি না মানা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এই ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন বলে তারা জানান।
কর্মচারীরা জানান, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনবার প্রশাসনকে স্বারকলিপি প্রদান করেছেন এবং একই দাবিতে মানববন্ধন করা হলে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার অস্থায়ী কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থায়ীকরণের আশ্বাস দেয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ২ জানুয়ারি চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন তারা। তখন প্রশাসন ৬ মাসের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন হল, বিভাগ ও অফিসসমূহে নিয়োগের মৌখিক আশ্বাসের ভিত্তিতে অনশন স্থগিত করেন তারা। তবে আশ্বাসের ৬ মাস অতিবাহিত হলেও তার কোন বাস্তবায়ন না হওয়ায় আবারও অবস্থান ধর্মঘটে বসেছেন অস্থায়ী কর্মচারীগণ।
কর্মচারীরা নিউ ন্যাশনকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৪২ জন অস্থায়ী কর্মচারী আছেন। যাদের দৈনিক ৪০০ টাকা হারে মজুরি দেওয়া হয়। যা বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী খুবই স্বল্প। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানান তারা। শুধু তাই নয় তাদের নেই কোন ছুটি। একদিন ছুটিতে গেলে ওইদিন আর কোন টাকা পান না বলেও তারা জানান।
৫ বছর ধরে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে তিনি কাজ করছেন শারীরিক শিক্ষা অফিসের অস্থায়ী কর্মচারী অফিস সহায়ক শিরিন আক্তার। তিনি বলেন, আশ্বাসে আশ্বাসে পাঁচটি বছর কেটেছে কিন্তু চাকরি এখনও স্থায়ী হয়নি। এখন তাদের একটাই দাবি চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে। হয় চাকরি স্থায়ী হবে নয়তো তাদের মৃত্যু হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার নিউ ন্যাশনকে বলেন, ইউজিসির অনুমোদন সাপেক্ষে দৈনিক মজুরিতে কর্মরত ব্যক্তিদের ধাপে ধাপে চাকরি স্থায়ী করার প্রক্রিয়া চলছে।
এবিষয়ে কর্মচারীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হল এবং কিছু বিভাগে নতুন করে ৪১ জন কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার একজনও দৈনিক মুজুরি ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারীদের মধ্যে থেকে নয়। যার কারণে তারা ধর্মঘটে বসতে বাধ্য হয়েছেন। কর্মচারীদের দাবি, যাদের যোগ্যতা আছে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী নতুন করে যে পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে সেখানে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হোক।
শেখ হাসিনা হলে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারী হল এটেন্ডেন্ট তামান্না জাহান বলেন, তিনি ১০ বছর ধরে দৈনিক মজুরিতে কাজ করছেন। নতুন হলগুলোতে লোক নেওয়া হচ্ছে। সেখানে তিনি কয়েকটি পদে আবেদন করেছেন। প্রশাসন তাদেরকে বলেছেন, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে, অথচ তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ তার। তামান্নার দাবি, প্রশাসনে যাদের লোকজন আছে তারাই নিয়োগ পাচ্ছে।
পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে পিয়ন পদে কর্মরত অস্থায়ী কর্মচারী সোহেল রানা এই প্রতিবেদককে বলেন, “প্রশাসন আমাদেরকে বারবার আশ্বাস দিয়েছেন যে নতুন হল গুলোতে আমাদেরকে স্থায়ী চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু ছয় মাস পার হয়ে গেলেও আমাদের চাকরি দেওয়া হয়নি। এখন তারা বলছে যে, আমাদের নাকি যোগ্যতা নেই ওই সমস্ত পদে চাকরি করার। আমার ডিগ্রি পাস সার্টিফিকেট আছেন। নতুন দুটি হলে অফিস সহায়ক পদে আবেদন করলেও আমাকে চাকরি দেওয়া হয়নি। তাহলে কি ডিগ্রি পাশের কোনো মূল্য নেই।”
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
আরও পড়ুন
মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শাহজাদা সৈয়দ সহিদ উদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারীর ন্যায়ের আহ্বান
রাজধানীতে ঈদে মিলাদুন্নবী (স) উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশ
১ জুলাই-১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য জমা দেওয়ার আহ্বান জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলের