October 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 19th, 2023, 9:53 pm

জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলো আশানুরূপ সেবা দিতে পারছে না

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলো আশানুরূপ সেবা দিতে পারছে না। যদিও গত এক দশকে স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারের বিনিয়োগ প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। আর ওই বিনিয়োগের অধিকাংশই জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে ব্যয় হয়েছে। নতুন অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি কেনা হয়েছে নতুন যন্ত্রপাতি। শয্যা ও সক্ষমতা বাড়াতে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও ওসব হাসপাতালে আশানুরূপ সেবা মিলছে না।

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সের সংকট নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া মেডিকেল যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের মতো দক্ষ জনবলেরও সংকট রয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই নষ্ট থাকছে বিপুল অর্থ ব্যয়ে কেনা যন্ত্রপাতিগুলো। ওষুধ সরবরাহের ঘাটতি ও স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের পেশাদারত্বের অভাবের অভিযোগও রয়েছে অনেক। জটিল রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিজ জেলা-উপজেলায় চাহিদামাফিক সেবা না পেয়ে রোগীদের বড় একটি অংশ ঢাকামুখী হয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলো মৌলিক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঘাটতিতে ভুগছে। সরকারের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে মৌলিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা যন্ত্র প্রয়োজনের তুলনায় কম রয়েছে। আবার যেসব জায়গায় যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেখানেও বড় একটি অংশ অকেজো ও নষ্ট। ওসব যন্ত্রের মধ্যে রয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইসিজি, করোনারি কেয়ার ইউনিটের (সিসিইউ) মনিটর, মাইক্রোস্কোপ ইত্যাদি। জেলা হাসপাতালগুলোয় নষ্ট যন্ত্রপাতির ৯৩ শতাংশ অকেজো পড়ে রয়েছে এক বছরের বেশি সময় ধরে।

উপজেলা পর্যায়ের ক্ষেত্রে এ হার ৯৭ শতাংশ। দেশের শহর এলাকায় প্রতি ১০ হাজার মানুষের বিপরীতে চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ১৮ দশমিক ২ জন। গ্রামাঞ্চলে এই হার ১ দশমিক ১ জন। সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও হাসপাতালে সেবাদানের সক্ষমতায় ঘাটতির কথা স্বীকার করছে। তাদের মতে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে জনবলের ঘাটতি সক্ষমতার দ্বিগুণ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়।

১৯৯৭ সালে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত হওয়া সরকারের মাধ্যমিক পর্যায়ের এ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে কাঠামো অনুযায়ী লোকবল নেই। অর্ধেকের বেশি চিকিৎসকের পদ খালি। অনুমোদিত পদের বিপরীতে নার্স নেই ৩০ শতাংশ। যদিও জেলা-উপজেলাসহ নানা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বছর বছর বরাদ্দ বাড়িয়েছে সরকার। পরিকল্পনা বিভাগের তথ্যানুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে শুধু স্বাস্থ্যসেবা বিভাগেই উন্নয়ন বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এক দশকের ব্যবধানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা পাঁচ গুণ বেড়ে ১৫ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া খাতটির উন্নয়নে সরকার বিনিয়োগ করেছে ৮২ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা, যা আগামী অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকায়। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলা এবং জেনারেল হাসপাতালে বরাদ্দও বাড়বে। এ দুই পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় গত অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়াবে ৪ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা।

একইভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য অফিস, সিভিল সার্জন কার্যালয় এবং নার্সিং ইউনিটের বরাদ্দও বছর বছর বাড়বে। সূত্র আরো জানায়, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সেবা না পেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা মানুষের বাড়ছে। এতে বাড়ছে চিকিৎসা খাতে জনগণের অতিরিক্ত ব্যয় (আউট অব পকেট পেমেন্ট)। শুধু ব্যবস্থাপনাগত সংকটের কারণেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মানুষকে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, গত এক দশকে স্বাস্থ্য খাতে যে উন্নয়ন ব্যয় করা হয়েছে, তা জনসাধারণের সেবার কথা চিন্তা করে হয়নি।

যদি এমন হতো তাহলে জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের এত বড় বড় ভবন পড়ে থাকত না। লোকবলের সংকট থাকত না। সুদৃঢ় একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি। কিন্তু সে তুলনায় লোকবল নেই। আবার যন্ত্রাংশ ক্রয়ের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা নেই। ভালো মানের যন্ত্র কেনা হয় না। এখানে একটি স্বার্থান্বেষী মহল রয়েছে, যারা নিজেদের পকেট ভারী করে। সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত মূল্য দিয়ে যখন মানুষ সেবা পায় না, তখন তারা বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়। তখন খরচ বেড়ে যায়।

আবার সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে হলে অনানুষ্ঠানিক খরচও করতে হয়। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি, অপরিকল্পনা ও স্বচ্ছতার অভাবে দেশের স্বাস্থ্য খাত রুগ্ন হয়ে পড়েছে। রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই কিন্তু সেবা বাড়েনি। আর আশানুরূপ সেবা না পেয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় সেবাগ্রহীতার হার দিনে দিনে কমে আসছে। বিগত ২০১৬ সালে সারা দেশের চিকিৎসা সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবাগ্রহীতার হার ছিল ৫ দশমিক ২২ শতাংশ।

২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশে। আর জেলা বা সদর হাসপাতালে ২০১৬ সালে সেবাগ্রহীতার হার ছিল ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। ২০২২ সালে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৯৯ শতাংশে। যদিও এ সময় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সেবা নেয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে এ হার ছিল ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০২২-এ তা ১৩ দশমিক ১২ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. সাইদুর রহমান জানান, আগের চেয়ে সেবার মান বাড়ছে। রোগীও বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোকে সক্ষমতার বেশি সেবা দিতে হচ্ছে। এতে সেবা দেয়ার গতি ও মানে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। আর সেবার সন্তুষ্টির বিষয়টি সম্পূর্ণ আপেক্ষিক। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে গত এক দশকে সেবার মান ও সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।