November 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, October 17th, 2021, 8:36 pm

জয়পুরহাটে টাইফয়েডের প্রকোপ, আক্রান্তের বেশিরভাগই শিশু

ফাইল ছবি

জেলা প্রতিনিধি:

জয়পুরহাটে হঠাৎ করেই বেড়েছে দীর্ঘমেয়াদী জ্বর ও টাইফয়েডের প্রকোপ। এ রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তাই হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার-নার্সদের। জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, বিভিন্ন ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীর চাপ বেড়েছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ রোগীই চিকিৎসা নিতে আসছেন জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে। এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ২২টি। কিন্তু শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। তাই হাসপাতালের বারান্দা এবং করিডোরের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাদের। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিক থেকেই বাড়তে থাকে টাইফয়েডের প্রকোপ। আবহাওয়ার তারতম্যের পাশাপাশি দূষিত পানি, অপরিচ্ছন্ন ও খোলা খাবার খাওয়ার কারণেই এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে বলে জানান চিকিৎসকরা। প্রতিদিনই অন্তত ৫০ জন টাইফয়েডে আক্রান্ত শিশু ও বিভিন্ন বয়সের রোগীরা ছুটে আসছেন জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে। ৭/৮ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার সগুনা গ্রামের নয় বছরের শিশু শাহানা ও কাদোয়া ঢোলপাড়া গ্রামের পাঁচ বছরের সুমাইয়া, আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ মহব্বতপুর গ্রামের নয় বছরের সাব্বির হোসেন, সৈকত পাঁচবিবি উপজেলার জীবনপুরের সাদ্দাম। তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয়ে প্রায় সাতদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানের ব্যবস্থা না থাকায় প্রচ- গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে সেবা নিতে হচ্ছে তাদের। সম্প্রতি এলাকার বেশিরভাগ শিশুই টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছে বলেও জানান তারা। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স লাভলী ইয়াসমিন জানান, প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০ জনেরও বেশি নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে ১২০ থেকে ১৫০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন প্রতিদিন। রোগীদের করিডোর ও বারান্দার মেঝেতেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা থাকলেও রোগীদের সঙ্গে আসা লোকজনের ভিড়ে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ বছর সর্দি-কাশি তেমন না হলেও দীর্ঘমেয়াদী জ¦রের কারণে ওষুধ বিক্রি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। হাসপাতাল এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, টাইফয়েড জ¦রের ওষুধের বিক্রি এখন বেশি। তাই বিভিন্ন কোম্পানিকে টাইফয়েডের ওষুধ বেশি বেশি করে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের শিশু বিভাগের মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. ফারহানা ইয়াসমিন শিখা জানান, খোলা খাবার ও পানির কারণে এই রোগ হয়। এজন্য খাওয়া আগে হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে। বাথরুম থেকে বের হয়ে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও টাইফয়েড হলে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক জানান, এই রোগ খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। গত দুই সপ্তাহে টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত প্রায় ১২০০ রোগীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কয়েকদিনের মধ্যে এর প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি সবাইকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে বলে জানান তিনি। জয়পুরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ আলী জানান, এ রোগের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবাইকে সতর্ক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান তিনি।