মামুন হায়দার, টাঙ্গাইল:
টাঙ্গাইলে নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙ্গে পড়লো সাড়ে তিন কোটি টাকার সেতু! টাঙ্গাইল পৌর শহরের বেড়াডোমার লৌহজং নদীর উপর ওমরপুর সড়কে সেতুটির নির্মাণ কাজ চলছিল। নি¤œমানের কাজের ফলে উদ্বোধনের আগেই সেতুটি দেবে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এতে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধিনে ৪ ও ৬ নং ওয়ার্ডের বেড়াডোমার লৌহজং নদীর উপর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিকস এন্ড ব্রিজ লিমিটেড এন্ড দ্যা নির্মিতি (জেভি)। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে ১২ নভেম্বর আর সমাপ্তি সময়সীমা ছিল ২০২২ সালে ১১ মে। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৮মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণে ব্যয় ধার্য হয় ৩ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার ৮৪১ টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লৌহজং নদীর মাঝখান থেকে গাছ ও বাঁশের পাইল সরে গিয়েছে। সেতুটির মাঝ খানে দেবে গেছে। কয়েক জন শ্রমিক সেতু নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। দেবে যাওয়া স্থান পৌরসভা প্রকৌশলী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের গাফিলতিতে সেতুটি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় টাঙ্গাইল-বেড়াডোমা-ওমরপুর সড়কের বেড়ডোমা এলাকার লৌহজং নদীর উপর নির্মিতব্য সেতুটি দেবে যায়। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই সেতুটি দেবে যাওয়ায় ওই সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও দুর্ভোগ বাড়লো বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ ও নুরু মিয়া বলেন, ইতিপূর্বে এখানে যে বেইলি সেতু ছিলো। ওই সেতুটি পরপর দুইবার ভেঙে কয়েক বছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এবার স্থায়ী সেতু নির্মাণ হচ্ছে জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। এখন দেখছি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই হেলে পড়েছে সেতু।
জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সোলাইমান হাসানের অভিযোগ, সেতুটির নির্মাণ কাজ পেয়েছিলেন এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় এমপি তার কাজ থেকে প্রভাব খাটিয়ে কাজটি হাতিয়ে নেয়। পরে তার কর্মী আমিরুলসহ তার অনুসারীদের কাজটি দিয়েছে। যারা কখনও ব্রিজ নির্মাণ করা দেখেননি! তারা ব্রিজ নির্মাণ করতে এসেছে। এটা দুঃখ জনক। নদীতে তেমন পানি ¯্রােত না থাকলেও সেতুটি দেবে গেছে। দফায় দফায় সঠিক পদ্ধতিতে আর মান সম্মত ভাবে সেতুটি নির্মাণ করার দাবি জানালেও তারা এমপির দোহাই ও ক্ষমতা দেখিয়েছেন। নদীতে পানি বা স্রোত না থাকা সত্ত্বেও ব্রিজটি কেন হেলে পড়লো এমন প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। সরকারের অর্থের অপচয় করার জন্য সেতু নির্মাণে জড়িত সকলের বিচার দাবি করেছেন তিনি।
৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুর্ভোগ লাগবে কাজটি শেষ করার জন্য বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার প্রকৌশলী ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোন কথাই শুনেন না। এই মুহুর্তে সেতুটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার প্রায় কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ আবার বেড়ে গেলো।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আমিরুল ইসলাম খান বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠাটিন ঢাকার। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন জামিল ভাইসহ কয়েক জন। আমার নেতৃত্বে কোন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী জানান, শুরু থেকে ব্রিজ নির্মাণের কাজ ঠিক ছিল। সেতুটি নির্মাণের নিয়ম অনুসারেই কাজটি চলছিল। প্রাকৃতিক কারণে নাকি নির্মাণ ত্রুটির ফলে ব্রিজটি হেলে পড়েছে এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খান জানান, গত বছর আমি অবসরে এসেছি। কাজটির প্রকল্প পরিচালক ছিলাম আমি। প্রকল্পের মেয়াদ অনুসারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর পর কাজটি শুরু করেছেন। ঠিকাদারের কাজের অজ্ঞতা থাকাসহ অফিসিয়াল নিয়ম মানার প্রবণতা কম ছিল। এ কারণে আমি কাজটি বাতিল করতে চেয়েছিলাম। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে সেতুটি হেলে পড়ার ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি