October 7, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, February 15th, 2024, 9:33 pm

ট্রেনে পর্যটক পরিবহনে কেনা হচ্ছে ট্যুরিস্ট কোচ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে কক্সবাজারে ট্রেন পরিচালনার জন্য ৫৪টি মিটার গেজ ট্যুরিস্ট কোচ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ১৮ হাজার কোটির বেশি টাকা খরচ করে ডুয়াল গেজ রেললাইনটি নির্মাণ হলেও এর পূর্ণ সুফল পর্যটকরা এখনই পাচ্ছে না। কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথটির বেশির ভাগ অংশ মিটার গেজ হওয়ায় ব্রড গেজ ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। এমনকি তা ২০৪৫ সালের আগে হবে না বলেও রেলওয়ের করা এক সমীক্ষা সূত্রে জানা যায়।

এ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে কক্সবাজারে ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে সম্প্রতি একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষাটি পরিচালনা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি (আইআইএফসি)। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে অধিক সক্ষমতা ও বেশি গতির ট্রেনসেবা পেতে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে আরো অন্তত ২১ বছর। কারণ ঢাকা-চট্টগ্রামের পুরো রেলপথটি ২০৪৫ সালের আগে ডুয়াল গেজ করা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে মূলত রেলপথ রয়েছে তিন ধরনের রেলপথ রয়েছে। সেগুলো হলো মিটার গেজ, ব্রড গেজ ও ডুয়াল গেজ। এর মধ্যে মিটার গেজ রেলপথে সমান্তরাল দুই রেলের দূরত্ব এক মিটার। ব্রড গেজে এ দূরত্ব ১ দশমিক ৬৭ মিটার। আর ডুয়াল গেজে সমান্তরালে রেল থাকে তিনটি। এতে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ দুই ধরনের ট্রেনই চলতে পারে। ব্রড গেজ রেলপথে ট্রেনের গতি যেমন বেশি থাকে, তেমনি যাত্রী বা পণ্য পরিবহন সক্ষমতাও বেশি। দেশের মিটার গেজ রেলপথে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি হয় ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। ব্রড গেজে সর্বোচ্চ গতি থাকে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের দুটি সেকশনে বর্তমানে মিটার গেজ রেলপথ রয়েছে। সেকশন দুটি হলো টঙ্গী-আখাউড়া ও লাকসাম-চট্টগ্রাম-ষোলশহর। এর বাইরে চট্টগ্রাম-দোহাজারী সেকশনটিও মিটার গেজের।

রেলওয়ের জন্য প্রণীত মহাপরিকল্পনায় দেশের সব রেল নেটওয়ার্ককে ব্রড গেজে উন্নীতের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এর জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নেই। এ কারণে ২০৪৫ সালের আগে ঢাকা-চট্টগ্রামের পুরো রেলপথটি ডুয়াল গেজে উন্নীত করা সম্ভব হবে না। সূত্র জানায়, সদ্য নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথটি ডুয়াল গেজের হওয়ায় বর্তমানে ঢাকা থেকে সরাসরি মিটার গেজ ট্রেন চলাচলের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়েও মিটার গেজ ট্রেন চলতে পারে। ফলে শুধু রাজধানী ঢাকা বা পূর্বাঞ্চল নয়, রাজশাহী-খুলনা বা পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য এলাকা থেকেও কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন পরিচালনার সুযোগ রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ৫৪টি মিটার গেজ ট্যুরিস্ট কোচ কেনার জন্য এরইমধ্যে একটি প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) তৈরি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।প্রস্তাব অনুযায়ী, মিটার গেজ কোচগুলো কিনতে সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৩ কোটি ৮৭ লাখ ডলার ঋণ নেয়া হবে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুনে শেষ হবে এ প্রকল্প।

সূত্র আরো জানায়, পর্যটকদের জন্য যে ৫৪টি ট্যুরিস্ট কোচ কেনা হবে, তার মধ্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার থাকবে ১৫টি। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রতিটি স্লিপার কারের দাম পড়বে প্রায় ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এ হিসাবে স্লিপার কারগুলো কিনতে খরচ হবে ১০৩ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার কেনা হবে ২৫টি। প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকার বেশি। ওই হিসাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কারগুলোর দাম হবে ১৭৪ কোটি টাকার বেশি।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার কেনা হবে ছয়টি, যেগুলোর প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রতিটি ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা হিসেবে ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কারের দাম ধরা হয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকা। এ ছাড়া কেনা হবে দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্যুরিস্ট কার, যেগুলোর প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

এদিকে ট্যুরিস্ট কোচ কেনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডোরটা ডুয়াল গেজে কনভার্ট হতে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। এখনো টঙ্গী-আখাউড়া ও লাকসাম-চট্টগ্রাম সেকশন বাকি আছে। এ সেকশনগুলো ডুয়াল গেজে কনভার্ট হলেই ব্রড গেজ ট্রেনগুলো ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বা কক্সবাজারে যেতে পারবে।

কুমিল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা পর্যন্ত একটি কর্ড লাইন (সোজা) রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা রেলওয়ের রয়েছে। এটাও যদি আমরা ব্রড গেজ করা হয় তাহলে কাজগুলো শেষ করতে ২০-২১ বছর সময় লেগে যাবে। আগামী অন্তত ৩০ বছর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে মিটার গেজ ট্রেনই পরিচালনা করতে হবে। আর পুরো রেলপথটি ডুয়াল গেজ হয়ে গেলে মিটার গেজ ও ব্রড গেজ দুই ধরনের ট্রেনই চলবে। কক্সবাজার রুটে যেহেতু এখনই ট্যুরিস্ট ডিমান্ড আছে, সেজন্য মিটার গেজ কোচ কেনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।