November 13, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 30th, 2024, 8:29 pm

ঠাকুরগাঁওয়ে সরিষার আবাদ বেশি হওয়ায় মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌয়ালরা

ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সরিষা ফুলের হলুদ আভা। সে যেন অপরূপ দৃশ্য! চোখ মেললেই মন জুড়িয়ে যায় মাঠজুড়ে হলুদ গালিচায়।

সরিষার রূপ আর গন্ধে মাতোয়ারা চারিধার। মৌমাছি, প্রজাপতির অবিরাম খেলা গ্রামীণ জনপদকে আরও মুগ্ধ করে তুলেছে। এই সরিষা খেতগুলোতে যেমন রয়েছে চাষিদের পদচারণা, তেমনি মধু সংগ্রহে মেতে উঠেছেন মৌয়ালরা।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় এবার সরিষার আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বেশি।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলায় সরিষার আবাদ বেড়েছে। বাজারে সরিষার তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরিষার আবাদ বেড়েছে।’

রানিশংকৈল কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রানিশংকৈল উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৮৯০ হেক্টর বেশি।

এখন অনেক জায়গায় চলছে মধু সংগ্রহ। সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌচাষিরা সাধারণত পছন্দের একটি সরিষা খেতের পাশে খোলা জায়গায় চাক ভরা বাক্স ফেলে রাখেন। একেকটি বাক্সে ৮-১০টি মোম দিয়ে তৈরি মৌচাকের ফ্রেম রাখা হয়।

প্রতিটি বাক্সের ভেতরে রাখা হয় রানি মৌমাছি। ফুল থেকে মৌমাছিরা মধু এনে বাক্সের ভেতরের চাকে জমা করে। বাক্সে একটি রানি মৌমাছি রাখা হয় ৷ রানি মৌমাছির কারণে ওই বাক্সে মৌমাছিরা আসতে থাকে। চাকের বাক্সের মাঝখানের নিচে ছিদ্র করে রাখা হয়। সে পথ দিয়ে মৌমাছিরা আসা-যাওয়া করতে থাকে।

রানিশংকৈল উপজেলার গোগর এলাকার মৌচাষি নজরুল ইসলাম জানান, সরিষা খেতে মধু চাষ খুবই লাভজনক। এতে কৃষক ও মধু চাষি— দু’পক্ষই লাভবান হন৷ বাক্সের ভেতরের চাকগুলো মধুতে পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে ছয় থেকে সাত দিন। এরপর মধু চাষিরা বাক্স খুলে চাকের ফ্রেম থেকে মেশিনের মাধ্যমে মধু বের করে নেন। ফুলে ফুলে ঘুরে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাড়তি ফলন পান কৃষক, আর মৌচাষিরা পান মধু।

উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের মালিবস্তি এলাকার মাঠে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে আসা বীরগঞ্জ বলাকা মোড়ের পেশাদার মৌয়াল আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘তিনি প্রতি বছরের মতো এ বছরও পোষা মৌমাছির ৫০টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে এসেছেন। তিনি এ বছর প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৪ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারছেন।’

উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের গাজীরহাট এলাকার মাঠে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে আসা ঠাকুরগাঁও মুরালিপুরের পেশাদার মৌয়াল আলআমিন হোসেন জানান, তিনি ১৫ দিন ধরে পোষা মৌমাছির ৪৫টি বাক্স নিয়ে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করছেন। এখানে সরিষার ফুল থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করে প্রতিকেজি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করে তিনি যেমন লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি মৌমাছির ব্যাপক পরাগায়নে সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনায় স্থানীয় চাষিরাও খুশি হচ্ছেন।

সরিষা চাষিরা বলছেন, সরিষা খেতগুলো সাধারণত দেড় মাসের মতো ফুলে ফুলে ভরে থাকে। যতদিন ফুল থাকে, ততদিনই চলে মধু সংগ্রহ।

রানিশংকৈল উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তৈলবীজ জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় রানিশংকৈলে কৃষকদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা তৈলজাতীয় ফসল বাড়ানোর জন্য সব ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, এই তৈলবীজ উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে লাভজনক শস্যবিন্যাস পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে অধিকবার ফসল ফলানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। এসব উদ্ভাবনী কৌশলে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করানোর ফলে এখন অনেক জমিতে বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদ হচ্ছে। সরিষার আবাদ করে কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আবার ওইসব সরিষার ফুল থেকে পোষা মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহে লাভবান হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পেশাদার মৌয়ালরা।

—-ইউএনবি