চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
ফাইভ-জি প্রযুক্তির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ‘ফাইভ জি: ইকোসিস্টেম ইন বাংলাদেশ এন্ড আপকামিং টেকনোলজিস’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মন্ত্রী এ কথা জানান।
টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) ওয়েবিনারটি আয়োজন করে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুর প্রক্রিয়া সরকারের একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। ডিসেম্বরের মধ্যেই টেলিটকের মাধ্যমে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালু হবে। পরবর্তীতে তা বিস্তৃত হবে। ২০২২ সালের মধ্যে অন্য অপারেটরদেরও ফাইভ-জি নিয়ে আসতে দেখবো।’
জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকলে প্রযুক্তির সফলতা পাওয়া যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রযুক্তি সম্পর্কে জনগণকে উদ্বুদ্ধ ও সম্পৃক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি হবে ফাইভ-জি। আমরা এরই মধ্যে হুয়াওয়ে ও রবি’র মাধ্যমে ফাইভ-জি টেস্ট করেছি, যা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এর মাধ্যমেই আমরা বোঝাতে পেরেছি ফাইভ-জি প্রযুক্তি নিয়ে আমরা একচুলও পিছিয়ে থাকব না।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘এ বছরের মধ্যেই ঢাকা শহরে ফাইভ-জি চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইল অপারেটর টেলিটক প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে। ব্রডব্যান্ড নীতিমালা তৈরির কাজ চলমান আছে। এর আগেই আমরা সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসবো এবং তাদের মতামত নেয়া হবে।’
বিটিআরসি’র কমিশনার ও ফাইভ-জি গাইডলাইন কমিটির প্রধান এ কে এম শহিদুজ্জামান বলেন, ‘ফাইভ-জি ইস্যুতে বিটিআরসি এরই মধ্যে অপারেটর, টেলিকম খাত সংশ্লিষ্ট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। মোবাইল অপারেটরগুলোর জন্য একটি কমন গাইডলাইন তৈরিতে কাজ চলছে, যা ফাইভ-জি বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। বিটিআরসি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অনুকরণে তুলনামূলক কম দামে তরঙ্গ বরাদ্দে কাজ করছে এবং এ বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত বিদ্যমান অপারেটরগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করা হবে।’
রবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অ্যাক্টিং সিইও) এম রিয়াজ রশিদ বলেন, ‘ফাইভ-জি থেকে চলেছে পরবর্তী টেলিকম সেবার মান নির্ধারক। এক্ষেত্রে শুধু বিটিআরসি কিংবা অপারেটরগুলো এককভাবে সুফল বয়ে আনতে পারবে না। সকলের সমন্বিত চেষ্টার প্রয়োজন আছে। কারণ ফাইভ-জির সুফল পেতে প্রযুক্তি, স্পেকট্রামের পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান বলেন, ‘টিআরএনবি’র এ আয়োজন খুবই উৎসাহদায়ক এবং সময়োপযোগী। টেলিকম শিল্প সংশ্লিষ্ট সকলে মিলে ফাইভ-জি ইকোসিস্টেম উন্নয়নে কাজ করছি। ফাইভ-জির সুফল পেতে প্রযুক্তি, ডিভাইস, ফাইবার, টাওয়ার অবকাঠামো ও স্পেকট্রাম একে অপরের পরিপূরক। ফাইভ-জি নিশ্চিতে কতটা সুলভে স্পেকট্রাম বরাদ্দ করা সম্ভব হবে, সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।’
এমটবের চেয়ারম্যান ও বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী এরিক কর্মকর্তা (সিইও) এরিক অস বলেন, ‘টিআরএনবি ফাইভ-জি প্রযুক্তি বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। ফাইভ-জি প্রযুক্তিকে প্রয়োগের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা প্রয়োজন। তাই, ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে স্পেকট্রাম নীতি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।’
টেলিটকের এমডি মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ফাইভ-জি চালু করতে চেষ্টা করছি। দেশে ফাইভ-জি নিশ্চিতের জন্য আমাদের ডিভাইস ও হ্যান্ডসেটের সক্ষমতা এবং উচ্চমানের ফাইবার প্রয়োজন। এছাড়াও, ফোর জি’র তুলনায় ফাইভ জি’র স্পেকট্রাম সক্ষমতার হার বেশি। যেখানেই ফাইভ-জি সংযোগের প্রয়োজন হবে, আমরা সেখানে পৌঁছে যাব এবং স্মুথ নেটওয়ার্ক স্থাপন করব।’
হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সিওও তাও গুয়াংয়াও বলেন, ‘ফোর জি জীবন বদলে দিয়েছে, ফাইভ-জি সমাজ বদলে দিবে। ফোর জি ও এর আগের নেটওয়ার্কগুলো যা করতে পারেনি, ফাইভ-জি সেগুলো করার ক্ষমতা রাখে। তাছাড়া, সার্ভিস অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এবং শিল্পের ডিজিটাল ও ইন্টেলিজেন্ট রূপান্তরের জন্য ফাইভ জি অপরিহার্য।’
এলএম এরিকসন (বাংলাদেশ)-এর কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম বলেন, ‘ফাইভ-জি’র জন্য মূলত ১৮’শ থেকে ২১’শ ফ্রিকোয়েন্সি প্রয়োজন। আমাদের ডাইন্যামিক স্পেকট্রাম শেয়ারিং’র জন্য যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমরা বিআরটিসি’র লাইসেন্সের জন্য অপেক্ষা করছি এবং ফাইভ-জি সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় সকল নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তি বাস্তবায়নে উন্মুখ হয়ে রয়েছি।’
কী-নোট স্পিকার ও টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে বলেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে প্রতিটি অ্যাপ্লিকেশন ফাইভ-জি’র (ওয়্যারলেস রোবট, গাড়ি, পরিবহন ও স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং) উপর নির্ভরশীল থাকবে। ২০২৫ সালের মধ্যে আমাদের জীবনযাত্রা ফাইভি-জি কেন্দ্রিক হয়ে উঠবে। তাই, ব্যবহারকারীদের সেরা অভিজ্ঞতা দিতে ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের আইসিটি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’
–ইউএনবি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে আগ্রহী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: নাহিদ ইসলাম