November 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, October 9th, 2023, 9:29 pm

তিনগুণ সময় ও দ্বিগুণ ব্যয় বাড়লেও শেষ হয়নি পাইপলাইনের কাজ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসে পাইপলাইনের কাজ শেষ হতেই চাচ্ছে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। পাইপলাইন বাস্তবায়ন ৩ বছরের জায়গায় ৯ বছরে ঠেকছে। এ ছাড়া ৪৯৩৫ কোটি টাকা ব্যয় ৮২৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে। আর শেষ সময়ে এসে দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে কমিশনিংয়ের কাজ। এ অবস্থায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম করপোরেশন (বিপিসি) ‘ইনস্টেলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ‘ইনস্টেলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পটি আমদানি করা ক্রুড অয়েল এবং ফিনিশড পেট্রোলিয়াম নিরাপদে, স্বল্প খরচ ও সময়ে খালাস নিশ্চিত করতেই হাতে নেয়া হয়। প্রকল্পটির যখন অনুমোদন দেয়া হয় তখন মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ বছর। এরপর প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে কোনো মেয়াদ বাড়েনি। তবে কিছুদিন পর ব্যয় বাড়ানো ছাড়াই একবছর মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

কিন্তু দ্বিতীয় সংশোধনের সময় আড়াই বছর বাড়িয়ে মেয়াদ করা হয়েছিল ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। এতেও কাজ শেষ না হলে তৃতীয় সংশোধনীর সময় ফের একবছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এবার চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। আর মেয়াদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যয়ও। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৪৯৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৯২০ কোটি ৮৬ লাখ, বৈদেশিক ঋণ ৩ হাজার ৯০৩ কোটি ২০ লাখ এবং বিপিসির নিজস্ব তহবিলের ১১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পরবর্তীতে দফায় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে সর্বশেষ তৃতীয় সংশোধনীর সময় ধরা হয়েছিল ৭১২৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

কিন্তু এবার চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ৮২৯৮ কোট ১৮ লাখ টাকা করা হচ্ছে। এতে মূল ব্যয় থেকে প্রস্তাবিত ব্যয় পর্যন্ত খরচ বাড়ছে ৩৩৬২ কোটি ২১ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। বিশেষত বার্জ ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরের নির্ধারিত স্থানে এসপিএম বয়া ও পাইপলাইন অ্যান্ড মেনিফোল্ড স্থাপনের কাজও শেষ। মহেশখালীতে পাম্পিং স্টেশন অ্যান্ড ট্যাংক ফার্ম এলাকায় ৬টি অয়েল স্টোরেজ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। মহেশখালীর ধলঘাটায় একটি, চট্টগ্রামের গহিরা ও ডাঙ্গার চরে দুটি ব্লক ভাল্ব স্থাপন এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে একটি মাইক্রোয়েভ রিলে টাওয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। গত জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে ৬১৮২ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৮৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এ ছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৮ শতাংশ।

সূত্র আরো জানায়, ইপিসি ( প্রকৌশল, ক্রয় এবং নির্মাণ) ঠিকাদারের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের অংশ হিসাবে ক্রুড অয়েলের প্রথম পরীক্ষামূলক ফিলিং ২৫ জুন করার কথা থাকলেও আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় তা ৩ জুলাই শুরু হয়। কিন্তু অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনার কারণে সেটি শেষ করা যায়নি। সেক্ষেত্রে কিছু মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঠিকাদার ওসব মালামাল দ্রুত সংগ্রহের দায়িত্ব নেন। ফলে প্রাথমিকভাবে ২৮ অক্টোবর মালামাল আনলোডিংয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শঙ্কায় সেটি আরো পিছিয়ে ৪ নভেম্বর ক্রুড অয়েল এবং ৯ নভেম্বর এইচএসডি অয়েল ইন এর মাধ্যমে কমিশনিংয়ের পরিকল্পনা আছে। চতুর্থ সংশোধনীতে টেন্টিং ও কমিশনিংয়ের জন্য উপযুক্ত ক্ষমতার টাগবোট, পাইলটেজ এবং আনুষঙ্গিক সেবা কার্যক্রমের জন্য ৭৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।

এ ছাড়া আয়কর, মূসক ও ব্যাংক চার্জ বাবদ ১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকাসহ মোট ৯৭ কোটি ৬ লাখ টাকা বাড়তি ব্যয় ধরা হয়েছে। এদিকে এ বিষয়ে বিপিসি’র চেয়ারম্যান (সচিব) এবিএম আজাদ জানান, প্রকল্পের টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজটি সুষ্ঠুভাবে করতে উপযুক্ত ক্ষমতার টাগবোট সংগ্রহ, পাইলটেজ এবং আনুষঙ্গিক কার্যক্রম করতে একটি একক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া দরকার। ফলে কাজের সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপদে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়মকানুন মেনে প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদারকে এই দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) হুমায়ুন কবীর জানান, সংশোধনী প্রস্তাবটি এখনো পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে কিনা তা পরিকল্পনা উইং বলতে পারবে। তবে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ না থাকলে এতোগুলো কমিটি নিশ্চয়ই সম্মতি দিত না। পিএসসি সভায় তো পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি, ইআরডিসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের উপস্থিতি থাকে। তারা যুক্তিতে ও বাস্তবতা বিবেচনা করে সন্তুষ্ট না হলে তো সংশোনীতে মত দিতো না।