November 3, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, July 18th, 2022, 9:28 pm

দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টাকা ছাড়া মিলছেনা সেবা

ওয়ার্ড বয় -পিয়ন দিয়েই চলে জরুরি বিভাগের সেবা

জেলা প্রতিনিধি, ফেনী (দাগনভূঞা):
৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টাকা ছাড়া মিলেনা কাঙ্ক্ষিত কোনো সেবা। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের প্রতিনিয়ত হতে হয় নানা হয়রানীর শিকার। শুধুই হয়রানী নয়, শুনতে হয় গালমন্দও। এসব অভিযোগ সেবাপ্রত্যাশীদের মুখে মুখে।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, গত ৯ জুলাই জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসে জগৎপুর গ্রামের আবু নাছের নামের এক রোগী। বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও ড্রেসিং বাবদ তার নিকট থেকে চাওয়া হয় ৮’শ টাকা। এ অভিযোগ হসপিটালের সহহারি বাবুর্চি আব্দুল হাকিম ও ওয়ার্ড বয় মো. ইসমাইলের বিরুদ্ধে । এর আগে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারতে ধেয়ে আসেন হসপিটালের সহকারি বাবুর্চি আব্দুল হাকিম। এছাড়া হসপিটালের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে আরো অনেক রোগী ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন এ প্রতিবেদকের কাছে। সেবা নিতে আসা আহসান হাবীব সবুজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হসপিটালের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ভর্তি রোগীদের স্যালাইন, ইঞ্জেকশন ও ওষুধ নিয়মিত প্রদান না করলেও চার্টে লিখে দেয়া হয় দৈনিক স্যালাইন, ইঞ্জেকশন ও ওষুধ বিতরণ বিবরণী। ফিরোজ ভূঞা নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন পূর্বে তিনি হসপিটালের জরুরি বিভাগে সেবা নিতে যান। সেখানে যাওয়ার পর ওনাকে ভালো করে না দেখে তিনি স্ট্রোক করেছেন বলে ফেনীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অথচ ফেনীর ডাক্তার ওনাকে দেখে জানান, রোগীর সুগার কমে গেছে। তিনি বলেন, এভাবে রোগীকে না দেখে হসপিটালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক এমন কথা বলেন তাহলে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা হসপিটালের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবেন। এতে সরকারের স্বাস্থ্যখাতের এতসব অর্জন ম্লান হয়ে যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে হসপিটালের গুটিকয়েক কর্মচারী। তারা ইউএইচএফপিওকে ম্যানেজ করে রোগীদের জিম্মি করে অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করে যাচ্ছেন। রোগীদের ড্রেসিং করেন বাবুর্চি আব্দুল হাকিম, ওয়ার্ড বয় ইসমাইল ও পিয়ন বিউটি। ড্রেসিং বাবদ রোগী প্রতি নেয়া হয় ৫’শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোনো রোগী টাকা দিতে না চাইলে তাকে ড্রেসিং না করেই ছেড়ে দেয়া হয়। ইউএইচএফপিও ডাঃ তৌহিদুল ইসলামের কাছে এসব বিষয়ে অভিযোগ দিলেও তিনি তাতে কোন কর্ণপাত করেন না বলে দাবী ভুক্তভোগীদের। বরঞ্চ তিনি বলেন, ড্রেসিং করলে রোগী যদি টাকা দেয় এতে আপনাদের সমস্যা কোথায়? তার এমন আচরণে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে ইসমাইল ও হাকিমরা। রাত ১১টার পর কোন রোগী আসলে ডাক্তার নেই বলে রোগীদের তাড়িয়ে দেয় হাকিম। উল্টো তার ঘুম নষ্ট হওয়ার অজুহাতে রোগী ও তার স্বজনকে গালিগালাজ করেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, হসপিটালে পর্যাপ্ত ওষুধ, ইঞ্জেকশন ও স্যালাইনের সরবরাহ থাকলেও তা রোগীদের বিনামূল্যে প্রদান না করে টাকার বিনিময়ে প্রদান করে কিছু নার্স। টাকা না দিলে তাকে বাইরের ফার্মেসী থেকে ওষুধ, ইঞ্জেকশন ও স্যালাইন কিনে আনতে হয়। এছাড়াও রাত ১২টার পর হসপিটালে কোনো ভর্তি রোগী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন রোগীর স্বজনরা কর্তব্যরত নার্সদের ডাকলে তারা রোগীর স্বজনদের উপর চড়াও হয় এবং রোগীকে নিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। এত রাতে ঘুম নষ্ট করার অজুহাতে রোগীর স্বজনদের চরম অপমান করেন নার্সরা। গত জুন মাসে পেটে ব্যাথা নিয়ে তৌহিদুর রহমান নামে ৩ বছর বয়সী এক শিশুকে ভর্তি করানো হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রাত ১ টার দিকে শিশুটির পেট ফুলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে শিশুটির দাদী কর্তব্যরত নার্সকে ডাকতে যান। এতেই ঘুম নষ্ট হওয়ার অজুহাতে নার্স ওনাকে অপমান করে রোগীকে নিয়ে প্রাইভেট হসপিটালে চলে যেতে বলেন। পরদিন সকালে ওনারা রোগী নিয়ে হসপিটাল ছেড়ে ফেনীতে চলে যান। অভিযোগ রয়েছে, হসপিটালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল ইসলামের প্রশ্রয়ে এসব অনিয়ম করে বেড়ান কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তিনি নিয়মিত অফিস না করা এসকল অনিয়মের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকার কারনেই দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠছে ইসমাইল-হাকিম সিন্ডিকেট।

এসকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হসপিটালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম নিজের বিষয়ে ওঠা সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি জানান, হসপিটালে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় ওয়ার্ড বয় ইসমাইল ও সহকারি বাবুর্চি হাকিম ড্রেসিংসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে থাকেন। অবশ্য টাকা নেয়ার বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। অপরদিকে নার্সরা রোগীদের ওষুধ প্রদানে টাকা নেয়ার বিষয়েও তিনি কোন মন্তব্য করেননি। রোগী ও তার স্বজনদের সাথে খারাপ ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডা. রফিকুস সালেহীন বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তপূর্বক দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।