নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিন দিন আকাশচুম্বী হচ্ছে বিমানের টিকিটের দাম। ফলে অভিবাসন ব্যয়ও বাড়ছে। বিদেশগমনেচ্ছু কর্মীদের চড়া দামের টিকিটের টাকা যোগাতে নাভিশ্বাস উঠছে। আসন্ন হজ মৌসুমে বিমান ভাড়া আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা হজ যাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বর্তমানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বিমানের টিকিটের দাম। মধ্যপ্রাচ্যসহ মালয়েশিয়াগামী বিমানের টিকিটে হাহাকার চলছে। ওমরা যাত্রীরাও ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটের টিকিট কিনতে গলদঘর্ম। অনেক ওমরাযাত্রী বিজনেস ক্লাসের টিকিট দেড় লাখ থেকে দু’লক্ষাধিক টাকা দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছে। বিমানের টিকিটি এখন সিন্ডিকেটের কালো থাবা। টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কটও তৈরি করা হচ্ছে। ফলে হাজার হাজার কর্মী ভিসা হবার পরেও টিকিটের অভাবে প্রবাসে যেতে পারছে না। অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সিন্ডিকেট চক্রের হাতে চলে গেছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন রুটের বিমানের টিকিট। টিকিটের জন্য অনলাইনে বুকিং দেয়া হলে বিমানের সিট খালি পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু সিন্ডিকেটের কাছে ধরনা দিলে চড়া দামে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। টিকিট বিক্রির কতিপয় সিন্ডিকেট চক্র বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর গ্রুপ ফেয়ারের সকল টিকিট কিনে ব্লক করে রাখছে। শিগগিরই বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিটের দাম আরো বাড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বিদেশে যাওয়ার টিকিটের টাকা যোগাতে বিদেশ গমনেচ্ছুরা দিশেহারা অবস্থায় পড়বে। অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাবে অভিবাসন ব্যয়।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশী কর্মীদের বাড়তি বিমান ভাড়া গুনতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি শুরু হলেও বাড়েনি ফ্লাইটের সংখ্যা। ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আটাব থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েও কোনো সাড়া মিলছে না। অতিরিক্ত ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে যাত্রী পরিবহণে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাছাড়া দেশে ছুটিতে আসা প্রবাসী কর্মীরা যথাসময়ে কর্মস্থলে যেতে না পারলে চাকরি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। অভিযোগ উঠছে মালয়েশিয়ায় কর্মী গমনের সংখ্যা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সিন্ডিকেট চক্র মালয়েশিয়ার অনেক টিকিট ব্লক করে রেখেছে। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা টু মালয়েশিয়ার কোনো বিমানের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেট চক্রের অপতৎপরতায় ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম অস্বাভাবিক বাড়ছে। ৩২ হাজার টাকার ওয়ানওয়ে টিকিট এখন ৫০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে যাত্রী পরিবহণের সঙ্কট দ্রুত নিরসনে একাধিক অতিরিক্ত ফ্লাইট চালু জরুরি।
সূত্র আরো জানায়, বিভিন্ন রুটের ফ্লাইটের টিকিটের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ডলার সঙ্কটে টাকার অবমূল্যায়ন। অতিসম্প্রতি ডলারের রেট ৯০ টাকা থেকে ১০৩ টাকা বেড়েছে। কোনো কোনো এয়ারলাইন্স ১১০ টাকা বিনিময় রেটে টিকিট বিক্রি করছে। ডলার সঙ্কটের কারণে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট বিক্রির ওপর অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো টিকিট বিক্রয়লব্ধ অর্থ নিজ নিজ দেশে পাঠাতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছে। ঠরণ অনেক এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ থেকে তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে লাভজনক রুটে যাত্রী পরিবহণ করছে। কাতার এয়ারওয়েজ তাদের টিকিট বিক্রয়লব্ধ অর্থ (১২০ মিলিয়ন ডলার) নিজ দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন জানিয়ে আশানুরূপ সাড়া পাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক কাতার এয়ারওয়েজকে ১২০ মিলিয়ন ডলারের পরিবর্তে মাত্র ২ মিলিয়ন ডলার পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে। তাছাড়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মাঝে সমন্বয়হীনতার কারণে ঢাকা-মালয়েশিয়া রুটে যথা সময়ে বিমানের অতিরিক্ত ফ্লাইট বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে এক সপ্তাহ থেকে দশ দিনের মধ্যে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুট টিকিট চাইলে ৬০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। তাছাড়া সউদী, দুবাই, ওমান, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য রুটেও বিমানের টিকিটের দাম বাড়ছে। তিন মাস আগেও ঢাকা-রিয়াদ, ঢাকা-জেদ্দা রুটে ওয়ানওয়ে টিকিট বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকায়। বর্তমানে ওসব রুটে টিকিট ৮০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। বিমানের অনলাইনে টিকিট কিনতে গেলে আগামী দু’মাসেও টিকিট মিলছে না। করোনার পর সউদীগামী যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ৯০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকায় টিকিট বিক্রি হয়েছে। অনেক প্রবাসী যাত্রী ওয়ানওয়ে টিকিট দেড় লাখ টাকা দিয়েও কিনে কর্মস্থলে যেতে বাধ্য হয়েছে। টিকিটের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে প্রবাসী কর্মীদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে আটাবের উপ-মহাসচিব গোলাম মাহমুদ ভূঁইয়া মানিক জানান, আসন্ন রমজানে ওমরাযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য এয়ারলাইন্সগুলো ভাড়া বাড়ানোর লক্ষ্যে আগামী ২০ মার্চের পরের টিকিটের মূল্য দেখাচ্ছে না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ওমরাযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ইউ ক্লাসের কোনো সিট পাওয়া যাচ্ছে না। এজেন্সিগুলো বাধ্য হয়েই আলফা ক্লাসসহ অন্যান্য ক্লাসে চড়া দামে ওমরা টিকিট কিনছে। তাতে একজন ওমরাযাত্রীর টিকিট এক লক্ষ টাকার বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু দাউদ ফয়সাল জানান, ডলার সঙ্কটের ফলে টাকার অবমূল্যায়নে প্রবাসী কর্মী ও ওমরাযাত্রীদের টিকিটের দাম দিন দিন বাড়ছে। গ্রুপ ফেয়ারের টিকিট সিন্ডিকেট চক্র ব্লক করে সঙ্কট সৃষ্টি করছে। টিকিটের দাম সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ জরুরি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ