July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, April 3rd, 2023, 2:39 pm

দিশেহারা সাধারণ আয়ের মানুষ, ফের বাড়ছে পোল্ট্রি মুরগির দাম!

খাদ্যের দাম বেশির কারণ দেখিয়ে খুলনার বাজারে ফের দাম বাড়তে শুরু করছে গরীবের একমাত্র আমিষের চাহিদা পূরণের ভরসা ব্রয়লার মুরগির। খুলনার বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও রাতারাতি হরিলুটের মতো চার থেকে পাঁচদিনের ব্যবধানে ১৯০টাকার ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা কেজি দরে।

বাজারের বর্তমান দৃশ্যমান দামের আগে শীতকালীন সময়ে টানা কয়েকমাস ১৪০ টাকা কেজি দরে স্থিতিশীল ছিল ব্রয়লার মুরগির দাম। তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে বাড়তে ২৪০টাকা দরে পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

প্রতিদিনই খুলনার বিভিন্ন অঞ্চল- তালা, বটিয়াঘাটা, তেরখাদা, কৈয়া বাজার, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, জামিরা, পথের বাজার, দিঘলিয়াসহ স্থানীয় এলাকার খামার হতে মুরগি আসে খুলনার খুচরা বাজারে।

রমজানকে ঘিরে খুলনা মহানগরী এলাকার রূপসা নতুন বাজার, জোড়াকল বাজার, সন্ধ্যা বাজার, বয়রা বাজার, বৈকালি বাজার, দৌলতপুর বাজার, খালিপুর বাজারসহ স্থানীয় এলাকার বাজারসমূহে জাতীয় ভোক্তা ও অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কেসিসি কর্তৃক মোবাইল কোর্ট, জেলা প্রশাসনের অভিযানসহ অন্যান্য সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে করার ফলে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের নিয়মবর্হিভূত কেনাবেচা অনেকটাই রোধ হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। মাত্র তিন দিনের মাথায় কেজিতে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

রেডি মুরগির বাচ্চা সরবরাহকারী পরিবেশক ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ খাতে কর্পোরেট গোষ্ঠী তাদের ইচ্ছেমতো ফিড ও মুরগির দাম বাড়াচ্ছে, আর সেই দাম মেনে নিয়ে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন করলে বাজারে দাম কমিয়ে দিয়ে লোকসানে ফেলা হচ্ছে তাদের। এতে করে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়ছে।

তারা আরও জানান, বাংলাদেশের কয়েকটি কোম্পানির সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিনিয়ত পোল্ট্রি মুরগির দাম ওঠা নামা করছে। ওই কোম্পানিগুলো গোটা বাংলাদেশে এই খাতের ব্যবসাটাকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করছে। খাদ্যে ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধির জন্য কতিপয় কোম্পানি, কন্ট্রাক্ট ফার্মের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিসহ কিছু কর্মকর্তার কারসাজিতে চাহিদার তুলনায় বাচ্চা কম উৎপাদন করে রেডি মুরগির কৃত্রিম সংকট করছে, যার প্রভাব গোটা বাংলাদেশের উপর পড়ছে।

ফুলতলা আলকা ট্রান্সপোর্ট বাজার ফুলতলার মিতু পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিড’র সত্ত্বাধিকারী এবং কাজী ফার্মস’র পরিবেশক রেজাউল ইসলাম সরদার জানান, গোটা বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাতের যারা মাথা, তারা হাজার হাজার ডিলারদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ী এই খাতটাকে নিয়ে খেলছে। আমি কাজী ফার্মের পরিবেশক। গোটা দেশে আজ পোল্ট্রি খাতে যে দামের ওঠা নামা চলছে, তা মাত্র কয়েকটি কোম্পানির কারণে হচ্ছে। তারা এ খাতটাকে জিম্মি করে রেখেছে।

বাংলাদেশে বাচ্চা উৎপাদনে এই কোম্পানিতে লিডিংয়ে রয়েছে তারা। গোটা বাংলাদেশে যে বাচ্চা উৎপাদন হয়, তার ৫০ হতে ৭০ শতাংশ বাচ্চাই কাজী ফার্মের।

খামারিরা জানিয়েছেন খাদ্যের ও বাচ্চার দাম বেশি। রবিবার (২ এপ্রিল) প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি স্থানীয় এলাকার খামারিদের কাছ থেকে ১৯০ টাকা দরে পাইকারি দরে কিনে এনেছি। খুচরা বিক্রি করেছি প্রতি কেজি ২১০ টাকা দরে। খামারিরা যে দাম কাটে তা হতে কিছু লাভে বিক্রি করি।

মুরগি বিক্রেতা মোস্তাক বলেন, কোম্পানি রেট, খাবার ও বাচ্চার দাম বেশির কারণেই মুরগির দাম বেশি। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কোম্পানি।

ক্রেতা রাজিব জানান, মাঝে ১৪০ টাকা ব্রয়লার মুরগি ধাপে ধাপে ২৪০টাকা পর্যন্ত হয়েছিল। হাতে গোনা কয়েকদিন আগে সেই মুরগি ১৯০ টাকা হওয়ার বেশ স্বস্তি নেমেছে ক্রেতাদের মাঝে। গরুর গোস্ত যাদের কেনার সমার্থ নেই, মুরগি তাদের অন্যতম ভরসা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো- হঠাৎ আবার মুরগির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করছি।

কেসিসি’র বাজার সুপারভাইজার মো. মাজেদ মোল্লা জানান, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে পবিত্র মাহে রমজানে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করছে কেসিসি। বাজারে যেহেতু ব্রয়লারের দাম বাড়তির ব্যাপারে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে বাজার মনিটরিং করা হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো. ইব্রাহিম হোসেন জানান, ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান কাজ। জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত বাজার মনিটরিং, ভেজাল, মূল্য প্রদর্শন, পচাবাসী খাবার, মানহীন পণ্য, মেয়াদউত্তীর্ণ পণ্যসহ বিবিধ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করে থাকে। চলতি রমজানে আমরা নিয়মিত বিভিন্ন বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। ইতোপূর্বেও আমরা নানামুখী বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। নতুন করে আবার মুরগির দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা মার্কেট মনিটরিং করব। দামের কারসাজিতে যারা যুক্ত থাকবেন তাদের ব্যপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসিন আরেফীন জানান, আগের থেকে মুরগির দাম বেশ কমে এসেছিল। তবে যেহেতু নতুন করে বাড়তির দিকে যাচ্ছে, আমরা আবার মনিটরিংয়ের কাজ শুরু করবো।

—-ইউএনবি