অনলাইন ডেস্ক :
মিনেইরাও স্টেডিয়ামে একটি ব্যানারে লেখা, ‘বিদায় রোনালদো।’ সেটি স্রেফ একটি নমুনা মাত্র, সমর্থকেরা ক্ষোভ জানিয়ে আসছিলেন অনেক দিন ধরেই। শেষ পর্যন্ত সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিলেন রোনালদো। যে ক্লাবের হয়ে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করেছিলেন ব্রাজিলিয়ান এই কিংবদন্তি, যে ক্লাবের দুঃসময়ে হাল ধরেছিলেন মালিকানা কিনে, সেই ক্রুজেইরোতে নিজের সবটুকু শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি। শুধু ব্রাজিলের এই ক্লাবের নয়, স্প্যানিশ ক্লাব রেয়াল ভাইয়াদলিদে নিজের শেয়ার বিক্রি করে দেবেন বলেও নিশ্চিত করেছেন রোনালদো। আপাতত ক্রুজেইরোতে তার শেয়ার বিক্রি করার সবটুকু চূড়ান্ত হয়ে গেছে। দেনায় জর্জরিত হয়ে যখন ডুবতে বসেছিল ক্লাবটি, ২০২১ সালে তখন ৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারে ক্লাবের ৯০ শতাংশ শেয়ার কিনেছিলেন রোনালদো। সবটুকু শেয়ার বিক্রি করতে এখন তার চুক্তি হয়েছে বিপিডব্লিউ স্পোর্টস কোম্পানির সঙ্গে।
আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তির অঙ্ক জানানো হয়নি। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে, ১১ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলারে শেয়ার বিক্রি করেছেন রোনালদো। ১৯৯৩ সালে ১৬ বছর বয়সে ক্রুজেইরোর হয়েই পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল রোনালদোর। সর্বকালের সেরাদের একজন হয়ে ওঠার পথে তার যাত্রা শুরু এখান থেকেই। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের ব্রাজিল দলে জায়গা পেয়েছিলেন এই ক্লাবে খেলে। পরের বছর তিনি পাড়ি জমান ইউরোপে।
পিএসভি থেকে বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান, রেয়াল মাদ্রিদ, এসি মিলান হয়ে তিনি ক্যারিয়ার শেষ করেন নিজ দেশের ক্লাব করিনচান্সে। রোনালদো দায়িত্ব নেওয়ার আগে প্রায় ২০ কোটি মার্কিন ডলার দেনায় ডুবতে বসেছিল ক্রুজেইরো। মাঠের ফুটবলেও অবস্থা ছিল তথৈবচ। শীর্ষ লিগ সেরি আ থেকে অবনমিত হয়ে সেরি বি-তে ছিল তারা তিন মৌসুম। রোনালদো দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিকভাবে বেশ কিছুটা গুছিয়ে ওঠে ক্লাবটি। শীর্ষ লিগেও তারা ফিরে আসে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ক্লাবের ফলাফল খুব ভালো নয়। সমর্থকদের মূল ক্ষোভের জায়গা অবশ্য ভিন্ন।
যতটা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রোনালদো, ততটা করতে পারছেন না বলে তুমুল সমালোচনা চলছিল তার। বিদায় বেলায় কিছুটা আক্ষেপের সুর রোনালদোর কথায় ফুটে উঠল বটে। তবে তৃপ্তির কথাই বেশি শোনালেন দুটি বিশ্বকাপজয়ী তারকা। “অনুভতি মিশ্র। তবে সবকিছুর ওপরে অনুভূতিটা হলো পরিপূর্ণতার। হয়তো অনেকেই আমার বিরুদ্ধে কিছু ব্যাপার বাড়াবাড়ি করে তুলে ধরেছে। তবে আমার কাছে ওসবের মূল্য নেই। আমি জানি, বেশির ভাগ সমর্থকই আমার প্রতি কৃতজ্ঞ যে ক্রুজেইরোকে আমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটে ফেরাতে পেরেছি।” “ক্রুজেইরো যখন কিনেছিলাম, তখনকার চ্যালেঞ্জগুলোর কথা মনে রাখতেই হবে।
অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা হয়েছি, যেগুলোর বেশির ভাগই জয় করতে পেরেছি। পথচলায় আমরা হোঁচট খেয়েছি, তবে আজকে এখানে দাঁড়িয়ে আমার মনে হচ্ছে, দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি।”ক্রুজেইরো যে সব সমস্যা থেকে মুক্ত হয়েছে, সেই দাবি রোনালদো করছেন না। তবে দলের ঘুরে দাঁড়ানোর ভিত গড়ে দেওয়ার স্বস্তি আছে ৪৭ বছর বয়সী তারকার। “আমি যখন এসেছিলাম, ক্রুজেইরো তখন ছিল আইসিইউতে। সেখান থেকে দেনার অর্ধেক কমাতে পেরেছি, রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচ গুণ। এখন দায়িত্ব ছাড়ছি ক্রুজেইরোকে হাসপাতালের স্বস্তির বিছানায় রেখে।”
“আমার লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, সেটিই মূল ব্যাপার। লক্ষ্য ছিল ক্রুজেইরোকে পথে ফেরানো এবং সঠিক সময়ে উপযুক্ত কারও কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা।” সেই উপযুক্ত ব্যক্তিটির নাম পেদ্রো ফিগেরেইদো, ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় চেইন সুপারমার্কেটের মালিক তিনি। ক্লাবের সব দেনা শোধ করতে বছর দশেক সময় লাগবে বলে ধারণা তার। রোনালদোর প্রতি ক্লাব সমর্থকদের আচরণেও বেশ বিব্রত তিনি। “ক্রুজেইরো সমর্থকদের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। অনেকেই রোনালদোর সঙ্গে যা করেছেন, তা ন্যায্য নয়। স্বেচ্ছায় এখানে এগিয়ে এসেছিলেন তিনি এবং এখন এসব কারণে কষ্ট পেয়েছেন। আশা করি, ভবিষ্যতে আমাকেও এসবের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না!।”
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে না পারার অভিযোগ রোনালদোর বিরুদ্ধে তুলেছেন রেয়াল ভাইয়াদলিদের সমর্থকেরাও। ক্লাবের বেশ কিছু ফুটবলারকে উচ্চমূল্যে বিক্রি করেও উপযুক্ত নতুন ফুটবলার না আনার অভিযোগও আছে সমর্থকদের। ২০১৮ সালে স্প্যানিশ ক্লাবটির ৫১ শতাংশ শেয়ার কিনেছিলেন রোনালদো। শুরুর দিকটা আশা জাগানিয়া হলেও পরে মাঠের ফুটবলে দলটি খুব ভালো করতে পারেনি। এই সময়ে দুই দফায় তারা লা লিগা থেকে নেমে গেছে দ্বিতীয় সারিতে। এখনও খেলছে তারা দ্বিতীয় বিভাগে। তবে পয়েন্ট তালিকায় দুইয়ে থেকে আবার শীর্ষ লিগে ওঠার কাছাকাছিই আছে তারা। ক্রুজেইরোর চুক্তি হওয়ার পরই রোনালদো জানিয়ে দিয়েছেন, “এরপর ভাইয়াদলিদের পালা।”
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা