অনলাইন ডেস্ক :
সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে। একেবারে তরুণ। বয়স খুব একটা বেশিও না। প্রায় দেড়শ কোটি মানুষের দেশের ফুটবলের নেতা তিনি। এরইমধ্যে ভারতীয় ফুটবলের খোলস থেকে বেরিয়ে নতুন ছোঁয়া দিতে বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছেন তিনি। এক মিনিট ফুসরত নেই। কলকাতার একটি উঁচু ভবনের সতেরো তলায় তার নিজস্ব অফিস। সেখানে বসেই ফুটবলের জরুরি কাজগুলো ফোনে ফোনে সারছেন। সারাক্ষণ ফোনে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। অপেক্ষা ঘরের দেওয়ালে সাজানো ছবিতে ফুটে উঠেছে একসময় যে সব দলে খেলেছেন এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গল, সালগাওকর, মুম্বাই এফসি, মাহিন্দ্র ইউনাইটেড, জেসিটি দলের জার্সি গায়ে আক্রমণাত্মক গোলরক্ষক কল্যাণকে দেখে খুব দুর্র্ধষ মনে হয়েছে।
বললেন, ‘গোলকিপারকে বাই ন্যাচার একটু অ্যাগ্রেসিভ হতে হবে। যখন ১৮ গজ বক্সের মধ্যে আছেন, সেখানে যদি আপনার নেতৃত্ব কায়েম না হয় তাহলে স্ট্রাইকাররা অ্যাডভান্টেজ পেয়ে যায়। আমি যখন খেলেছি সেই নেতৃত্ব রেখেছি এবং ছয় গজের ভেতরে এরিয়েলে কোনো বল থাকলে আমি যেন বলের দখল রাখতে পারি। সেটাই আমি করেছি সব সময়।’ ভারতীয় বয়স ভিত্তিক জাতীয় থেকে শুরু করে মূল জাতীয় দলে খেলেছেন গোলরক্ষক কল্যাণ চৌবে। ভারতীয় ফুটবলের নায়ক হলেও তিনি একসময় বাংলাদেশের ফুটবলে খেলেছেন।
কবে খেলেছেন সেটা মনে করতে গিয়ে, ‘খুব সম্ভবত ৯৯ সালে আমি বাংলাদেশে খেলেছিলাম। অতটা মনে নেই। মুক্তিযোদ্ধায় খেলেছিলাম।’ এসব কথা বলেই কল্যাণ নিজেই বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়েতার কথা বললেন। বললেন, ‘সেখানকার (মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র) সতীর্থ এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন খুব ভালো, অতিথি পরায়ণ। অন্যান্য ক্লাবের মানুষদেরও দেখেছি। অসাধারণ। ওটাই আমার শেষ যাওয়া বাংলাদেশে।’ এবার ফুটবল মৌসুমে মুক্তিযোদ্ধা রেলিগেশন হয়ে গেছে কথাটা বলতেই কল্যাণ চৌবে বললেন, ‘ও আচ্ছা, আচ্ছা। তাই নাকি। এটা দুর্ভাগ্যের কথা। ওরা তো অনেক বড় টিম ছিল। ওদের কর্মকর্তারাও ছিলেন সেই রকম। রেলিগেশন হওয়ার তো কথা না। এটা দুর্ভাগ্যের কথা। আগামী দিন আবার মুক্তিযোদ্ধার প্রমশোন হয়ে টপ ডিভিশনে আসতে পারবে, আমার শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা থাকবে।
আসলে কি ফুটবলে এই প্রমোশন এবং রেলিগেশন আছে, যার জন্যই ফুটবলের এত উন্মাদনা।’ এক সময় ফুটবল খেলছেন এখন তিনি ভারতীয় ফুটবলের নেতা। ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার পর কল্যাণ তার ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্য ভিশন-৪৭ ঘোষণা দিয়েছেন। তার চোখে এখন কীভাবে ভারতীয় ফুটবল সামনের পথে পা রাখবে। বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়ে দিনরাত ফুটবলের চিন্তা মাথায়। এর মধ্যেও তিনি দুই বাংলার ফুটবল নিয়ে ভাবছেন। গত মঙ্গলবার ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবে ১০৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গিয়েছিলেন কল্যাণ চৌবে। ক্লাব ফুটবলের ক্যারিয়ারে ইস্ট বেঙ্গলের হলুদ-লাল জার্সি গায়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন, ৬৭টি। সেখানে গিয়েও বাংলার ফুটবলের কথা বলেছিলেন। আর গত বুধবার দুপুরে কলকাতায় নিজের অফিসে বসে কথা বলার সময় দুই বাংলার ফুটবল নিয়ে পরিকল্পনার ক্ষাণিকটা কথা শোনালেন কল্যাণ চৌবে।
‘আমি চেষ্টা করব ভারত-বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর মধ্যে যদি আরো বেশি খেলার ব্যবস্থা করা যায়। বাংলাদেশে দুটো টপ স্ট্যান্ডিং ক্লাব যারা লিগের প্রথম, এক এবং দুই হয়েছে। এবং মনে করুন ভারতের দুটো ক্লাব, যারা এক ও দুই হয়েছে। ‘দুই দেশের দুটো করে ক্লাব যদি খেলে তাতে আমার কাছে মনে হয় খেলাগত আদান-প্রদান হবে-বললেন কল্যাণ। ১৯৯১ সালে ঢাকায় বিটিসি ক্লাব কাপ ফুটবল ভারত এবং বাংলাদেশে সাড়া ফেলেছিল। ভারতের মোহন বাগান, ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব, মোহামেডান এবং বাংলাদেশের লিগের তিন প্রধান মোহামেডান, আবাহনী ও ব্রাদার্সকে নিয়ে জমজমাট টুর্নামেন্ট হয়েছিল। এ ধরনের আয়োজন করা যায় কি না? কল্যাণ বললেন, ‘না করতে যাওয়ার কিছু নেই। তার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মটা দেখে নিতে হবে বা ফুটবল ক্যালেন্ডারটা ঠিক আছে কিনা সেটা দেখে নিতে হবে। দুই দেশের এই খেলাটা আয়োজন করা গেলে ফুটবল সম্পর্কটার আদান-প্রদান আরো বেড়ে যাবে।’
আরও পড়ুন
কানপুর টেস্টে মুমিনুলের সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৩ রান
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার বিয়য়ে যা বললেন তামিম
অক্টোবরে বাংলাদেশে সফরে আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা