October 9, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Saturday, February 5th, 2022, 8:32 pm

দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে দেশের বিপুলসংখ্যক কারখানা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সারাদেশে বিপুলসংখ্যক কারখানাই দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে। অধিকাংশ মালিকেরই কারখানায় শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশের দিকে নজর নেই। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনায় ওসব কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের করুণ মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সম্পদেরও ক্ষতি হচ্ছে। মূলত সামগ্রিক তদারকির অভাব, মালিকদের অধিক মুনাফার লোভ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উৎকোচের প্রবণতা ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলো শ্রমিকদের জীবন বিপন্ন করে তুলছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর কমিটির নির্দেশনায় দেশের শিল্প-কারখানার কর্মপরিবেশ ও অবকাঠামো মূল্যায়নে কাজ করছেন এক দল বিশেষজ্ঞ। বিডা সংশ্লিষ্ট সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশী ক্রেতা এবং আন্তর্জাতিক চাপে পোশাক কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণসহ নিরাপত্তা ইস্যুতে নজর দেয়া হলেও তার বাইরে থাকা দেশের অন্য খাতগুলোর কারখানাগুলো শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন। অধিকাংশ কারখানাতেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া অনেক কারখানার নক্সায় ত্রুটি থাকার পাশাপাশি সরকারি অনুমোদনও নেই। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্সও নেই। এমন তালিকায় অনেক বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন খাতের ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৭টি শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কারখানা খাদ্য উৎপাদন করে। বস্ত্র খাতে রয়েছে ৩ হাজার ৩২৬টি কারখানা। প্রকৌশল খাতে কারখানা আছে ২ হাজার ৭০৪টি। তার মধ্যে ৬৪৫টি গ্রীন ফ্যাক্টরি বা পরিবেশবান্ধব কারখানা হিসেবে চিহ্নিত। ওসব কারখানাকে নিরাপদ কারখানাও বলা হয়।
সূত্র জানায়, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে কলকারখানা অধিদফতরের পরিদর্শকরা ৩৭ হাজার ৩২৭টি কারখানা, দোকান ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে। আর করোনার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৩ হাজার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছিল। তার আগের বছর ২৬ হাজার প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়। একটি শিল্প কারখানা নির্মাণ করতে ট্রেড লাইসেন্স, পরিবেশ সনদ ছাড়াও কলকারখানা অধিদফতর, রাজউক, ফায়ার সার্ভিসসহ আরো বহু সংস্থা থেকে অনুমতি নিতে হয়। কারখানায় দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করলে বিস্ফোরক পরিদফতরের অনুমতি নিতে হয় এবং সেগুলো সময়ভিত্তিক হালনাগাদও করতে হয়। কিন্তু ওসব কারখানা সঠিকভাবে চলছে কিনা তা তদারকিতে নিয়োজিত সংস্থাগুলো যথাযথভাবে তদারক করছে না। জনবল ও অবকাঠামোর সঙ্কটের দোহাই দিয়ে বছরের পর বছর একইভাবে চলছে। তবে পোশাক কারখানাগুলো ক্রেতাদের চাপে এক ধরনের নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় থাকলেও অন্য কারখানার ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। অথচ গত ১১ বছরে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ওসব অগ্নিকা-ের ক্ষেত্রে মূলত দায়িত্ব পালনে অবহেলাই সবচেয়ে বড় কারণ।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে ঢাকাসহ সারাদেশে হাজারেরও বেশি কারখানা দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে রয়েছে। ওসব কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যাপ্ত সিঁড়িও নেই। ওসব কারখানায় নিয়মিত নজরদারিও করা হয় না। আর ওই কারখানাগুলো ঢাকা, টঙ্গী, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার এলাকায় অবস্থিত। ওসব কারখানার মধ্যে রয়েছে কেমিক্যাল কারখানা, প্রসাধনী কারখানা বিস্কুট, জুস, ফুড কারখানা, ইলেকট্রনিক্স কারখানা এবং টেক্সটাইল মিল ইত্যাদি। ঝুঁকিপূর্ণ কারখানাগুলোর প্রয়োজনীয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা তৈরি করতে বারবার বলা হলেও ভবন মালিকরা তা আমলে নিচ্ছে না। ভবন নির্মাণের পর ফায়ার সার্ভিস থেকে অগ্নিঝুঁকি নেই এমন ছাড়পত্র নেয়া বাধ্যতামূলক হলেও অনেকে তা মানছে না। তাছাড়া অনেক কারখানায় অগ্নিকা- থেকে বাঁচতে শ্রমিকদের মহড়ার ব্যবস্থা করা হয় না।
এদিকে পোশাক কারখানার মাধ্যমে দেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ অর্জিত হয়। পোশাক খাতের সঙ্গে আইএলও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাইরের ক্রেতাদের সম্পৃক্ততা আছে। ওই খাতের সঙ্গে তাদের ব্যবসাও অনেকাংশে জড়িত। সেজন্য শ্রমিকের কথা চিন্তা না করলেও ব্যবসার খাতিরে ওই খাতে উন্নত পরিবেশ তৈরির ব্যাপারে মালিকরা আগ্রহী। মূলত ব্যবসা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়েই তারা কমপ্লায়েন্সে আগ্রহী। কিন্তু অন্য খাতগুলো দেশের অর্থনীতি এবং রফতানিতে তেমন বড় খাত হিসেবে বিবেচিত না হওয়ায় শ্রমিকদের জীবন রক্ষায় মালিকপক্ষ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। আর একটি কারখানায় নিরাপত্তা সরঞ্জামাদির জন্য যে অর্থ ব্যয় হয় তার তুলনায় যে পরিমাণ জরিমানা করা হয় তা খুবই সামান্য।
অন্যদিকে বিডার তথ্যানুযায়ী, সারাদেশে ৩২ খাতের প্রায় ৪৫ হাজার কারখানা আছে। তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত যেসব খাতের কারখানায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। তবেএ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্স ও কলকারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের অডিটে থাকায় তৈরি পোশাকসহ রফতানিমুখী শিল্পকে পরিদর্শন থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে পরিদর্শনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে বিডার নির্বাহী সদস্য এবং কারখানা পরিদর্শনে সরকার গঠিত কমিটির আহ্বায়ক অভিজিৎ চৌধুরী জানান, গত ডিসেম্বরে কারখানা পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশনা ছিল প্রথম মাসে ৫ হাজার পরিদর্শন শেষ করা হবে। ওই পরিদর্শনের আওতায় সর্বশেষ প্রায় ১ হাজার ৬০০ কারখানা পরিদর্শন করা হয়। তবে পরিদর্শন শুরুর পর কিছু রিপোর্ট ম্যানুয়ালি আসছিল। এখন সফটওয়্যার ডেভেলপ করার পর তা ইনপুট দেয়া হচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত যতটুকু পরিদর্শন হয়েছে সেখান থেকে আপাতত সেক্টর অনুযায়ী কিছু ফাইন্ডিংস বের করা হবে।