নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সুবিধা ছাড়াই দেশজুড়ে গড়ে ওঠেছে হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অথচ খেলাধুলা শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। আর সেজন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে খেলার মাঠ। কিন্তু দেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সাড়ে ১০ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই কোনো খেলার মাঠ নেই। খেলার মাঠ ছাড়া একটি বিদ্যালয় কোনোভাবেই পূর্ণাঙ্গ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে অনুমোদিত যেসব সরকারি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই ওসব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় খেলার মাঠ স্থাপন করা জরুরি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষাবিদদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ৫৪ হাজার ৮২৬টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ রয়েছে। ওই হিসাবে দেশের ১০ হাজার ৭৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীকক্ষের তুলনায় শ্রেণীকক্ষের বাইরের শিক্ষা। কারণ খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি হয়। বর্তমানে যেসব বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই, সরকারের উচিত সেখানে নতুন মাঠের ব্যবস্থা করা। কারণ খেলার মাঠ ছাড়া একটি বিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ হয় না।
সূত্র জানায়, সিলেট বিভাগের বিদ্যালয়গুলো খেলার মাঠের দিক থেকে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। সিলেট বিভাগে মোট ৫ হাজার ৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ৩ হাজার ২০৩টিতে খেলার মাঠ রয়েছে। ওই হিসাবে সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৩৭ শতাংশ বিদ্যালয়েই খেলার মাঠ নেই। ফলে ওসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করলেও খেলাধুলায় পিছিয়ে রয়েছে। সিলেট জেলার ১২টি উপজেলার একাধিক পৌর এলাকা ও উপজেলা সদরের বিদ্যালয়গুলোতে ওই সমস্যা বেশি। সিলেট নগরীর অর্ধেকেরও বেশি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। জেলায় মোট ১ হাজার ৪৭৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় রয়েছে। আর সিলেট নগরীসহ সদর উপজেলায় রয়েছে ১২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যার মধ্যে সিলেট নগরীতে পড়েছে ৫৩টি বিদ্যালয়। কিন্তু নগরীর ৭০ ভাগ বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। আর ওসব বিদ্যালয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী থাকায় অনেক সময় দৈনিক সমাবেশ করাতেও শিক্ষকদের কষ্ট হয়। তাছাড়া নওগাঁ জেলায় ১ হাজার ৩৭৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ওই জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে নওগাঁ সদর উপজেলায় ৩৬টি, আত্রাইয়ে ১, বদলগাছীতে ১, মহাদেবপুরে ৩৬, মান্দায় ৩৬, সাপাহারে ১৫, পোরশায় ২, নিয়ামতপুরে ৩, পতœীতলায় ৬ ও ধামইরহাটে ১৪টিসহ মোট ২১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই। নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার মতে, নতুন ভবন সম্প্রসারণ, স্কুল স্থানান্তরসহ নানা কারণে জমিস্বল্পতায় জেলার ২১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে খেলার মাঠ নেই। তার মধ্যে কয়েকটি বিদ্যালয়ের কিছু জমি মাটি ভরাট করলে খেলার মাঠ তৈরি করা সম্ভব। সাধারণত দানকৃত জমিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো গড়ে তোলা হয়েছিল। শহরাঞ্চলে জমির দাম বেশি হওয়ায় দানকৃত জমির পরিমাণ অনেক কম। ফলে সেখানে শুধু অ্যাকাডেমিক ভবন তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। নদী বা পুকুরের কারণে যদি বিদ্যালয়ের কাঠামো ক্ষতির সম্মুখীন হয় সেক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের নিয়ম আছে। তবে খেলার মাঠের জন্য জমি অধিগ্রহণের কোনো সুযোগ এখন নেই।
সূত্র আরো জানায়, দেশের বান্দরবান জেলায় মোট ৪৩৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে ২৯৯টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ থাকলেও ১৩৬টি বিদ্যালয়ে কোনো খেলার মাঠ নেই। তার মধ্যে কিছু ইউনিয়নে খেলার মাঠের সঙ্কট বেশ প্রকট। বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫টিতেই কোনো খেলার মাঠ নেই। তাছাড়া কক্সবাজারে ৬৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ২৬৩টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের মতে, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোলা মাঠ নেই সেখানে শিক্ষার্থীরা যাবতীয় খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আর বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের ৭৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টির খেলার মাঠ নেই। একইভাবে বাগেরহাট জেলায় ১ হাজার ৪১টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪১টিতে খেলার মাঠ নেই। রাজশাহী নগরীতে ৬০টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। ওই অঞ্চলের নওগাঁয় ৬০টি, নাটোরে ৩৫, বগুড়ায় ২৪, সিরাজগঞ্জে এক এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ নেই।
এদিকে এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানান, দেশের সরকারি বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই খেলার মাঠ রয়েছে। হয়তো কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার সময় খেলার মাঠ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খেলার মাঠের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২