October 16, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, May 28th, 2023, 9:41 pm

দেশে দেশে পাচার বায়োফার্মার টাকা দুদক ও এনবিআরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

ফাইল ছবি

‘বায়োফার্মা লিমিটেড’ নামের ওষুধ কোম্পানির বিরুদ্ধে দেশে দেশে টাকা পাচার ও কর ফাঁকির যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও জাতীয় রজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে (এনবিআর) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে এই প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।

রবিবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘দেশে দেশে পাচার বায়োফার্মার টাকা’-শীর্ষ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

জানা গেছে, একইসঙ্গে রিট আবেদকারী ডা. মোর্শেদ উদ্দিন আকন্দ এবং ডা. জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্তের বিষয়ে দেওয়া আবেদন নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং এই দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদেরকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আব্দুস সালাম মামুন এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন মো. সাইফুদ্দিন খালেদ।

এর আগে গত ১৮ এপ্রিল ‘দেশে দেশে পাচার বায়োফার্মার টাকা’- শিরোনামে ওই রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়, দেশে মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সঙ্গে দহরম-মহরম সম্পর্ক। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তোলা হাস্যেজ্জ্বল ছবি দেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও; কিন্তু লন্ডনে স্ত্রীর জন্য চেয়েছেন রাজনৈতিক আশ্রয়। শুধু তাই নয়, লন্ডনে কোম্পানি খুলে ব্যবসাও করছেন। কয়েকটি দেশে তৈরি করেছেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য দেশ থেকে অবৈধ চ্যানেলে নেওয়া হয়েছে বিপুল অংকের টাকা। বিদেশে টাকা পাচার করে বিত্ত-বৈভবে ফুলেফেঁপে উঠলেও যেই কোম্পানির হাত ধরে এত কিছু, সেই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে রুগ্ন দশায়।

গত ১৫ বছরেও শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি বার্ষিক সাধারণ সভা। ২২ বছর ধরে দেওয়া হয় না কোনো লভ্যাংশ। এ সময়ে মোট পণ্য বিক্রির ৪০ শতাংশ কম দেখিয়ে শত শত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এসব অনিয়মের চিত্র। এমন নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত প্রতিষ্ঠানটি হলো বায়োফার্মা লিমিটেড। ওষুধ শিল্পে একসময়ে নেতৃত্ব দেওয়া এ প্রতিষ্ঠানটি এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে।

ধারাবাহিক অনিয়মে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের মূল কারিগর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ডা. লকিয়ত উল্লাহ। কাগজে-কলমে ডিএমডি হলেও তিনিই প্রতিষ্ঠানটির সর্বেসর্বা। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বায়োফার্মা লিমিটেড’ নামের ওষুধ কোম্পানিটি। ১৯৯৯ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে পাস করা কয়েকজন চিকিৎসক কিনে নেন প্রতিষ্ঠানটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটি নতুনভাবে যাদের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় তাদের বেশিরভাগই জামায়াতের নেতাকর্মী। পরে এটিকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়। সাধারণ শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যাদের নেওয়া হয়, তাদের বেশিরভাগই উদ্যোক্তাদের ‘নিজের লোক’।

বায়োফার্মার নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, নতুনভাবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোম্পানির বতর্মান ৯ পরিচালক ঘুরেফিরে আছেন পরিচালনা পরিষদে। সাবেক চেয়ারম্যান এন এ কামরুল হাসানের বিরুদ্ধে বেশকিছু সরকারবিরোধী মামলা রয়েছে। তিনি ২০১৯ সালে পালিয়ে স্থায়ীভাবে আমেরিকা চলে যান। এরপরও রয়ে গেছেন উপদেষ্টা হিসেবে।

বর্তমানে চেয়ারম্যান পদে আছেন শেয়ারহোল্ডার নাছিমা বেগম ঝুমুর প্রতিনিধি হিসেবে তার স্বামী ডা. শাহাবুদ্দিন আহমদ। ১৮ বছরের সাবেক এমডি ডা. আনোয়ারুল আজিম এখন ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। আর ডিএমডি ডা. লকিয়ত উল্লাহ শুরুতে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক (মার্কেটিং)। তারা তিনজনই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চবি) শিক্ষার্থী ছিলেন।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আছেন ডা. মো. মিজানুর রহমান। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) শিক্ষার্থী ছিলেন।

অন্য পরিচালকরা হলে- ডা. জহির উদ্দিন মাহমুদ, ডা. আলী আশরাফ খান, শেয়ারহোল্ডার নাজমা হকের প্রতিনিধি ও তার স্বামী ডা. ফজলুল হক মজুমদার এবং সাইফুল আমিন। তারা প্রত্যেকেই জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বে রয়েছেন।

তাদের মধ্যে আলী আশরাফ নারায়ণগঞ্জ থেকে জামায়াতের হয়ে সংসদ নির্বাচনও করেছিলেন। জামায়াত সমর্থিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড বিজনেসম্যান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের (আইবিডব্লিউএফ) মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন বায়োফার্মার ভাইস চেয়ারম্যান ডা. আনোয়ার।

—-ইউএনবি