October 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, August 4th, 2023, 8:03 pm

নারী ফুটবলারদের মারধর: মামলা তুলে নিতে অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকি

খুলনায় চার নারী ফুটবলারকে মারধরের পর এবার মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আসামিদের বিরুদ্ধে। মামলা তুলে না নিলে তাদের শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বল জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এ ঘটনায় মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী নারী ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড় সাদিয়া নাসরিন বলেন, হামলাকারীরা আমাদের চারজনকে মারধর করেছে। হামলাকারী সালাউদ্দিন আমাদের হত্যার হুমকিও দিয়েছে। মামলা তুলে না নিলে অ্যাসিড মেরে মুখ ঝলসে দেওয়ারও ভয় দেখিয়েছে। এ ছাড়া তারা নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করে আমার টিমের সদস্যদের পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করবে বলেও হুমকি দিয়েছে। এরপর তারা গালিগালাজ করে চলে যায়। আমি থানায় জিডি করেছি। এ ঘটনায় আমরা সবাই উদ্বিগ্ন।

সাদিয়া নাসরিনের অভিযোগে বলা হয়, গত ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলন করার সময় নূপুর খাতুন নামে প্রতিবেশী এক মেয়ে তার ছবি তুলেন। পরে বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে সেই ছবি দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করে আসেন। সাদিয়া ২৯ জুলাই শনিবার বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে নূপুর অকথ্য ভাষায় তাকে গালাগাল করেন। প্রতিবাদ করলে তাকে এলোপাতাড়ি কিল, চড়, ঘুষি মেরে মুখ ও বুকের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন।

সাদিয়া বলেন, বাড়িতে গিয়ে আমি বাবা-মা, কোচ ও অন্য খেলোয়াড়দের ঘটনাটি জানাই। তারা আমাকে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে নূপুর খাতুনের বাড়িতে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নূপুর, তার বাবা নূর আলম খাঁ, ভাই সালাউদ্দিন ও নূপুরের মা রঞ্জি বেগম আমাদের উপর হামলা করে। এতে মঙ্গলী, হাজেরা ও জুঁই আহত হয়। তারা লোহার রড দিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়, চায়নিজ কুড়াল নিয়ে এসে হত্যার হুমকি দেয়।

মারধরের শিকার ফুটবলার হাজেরা খাতুন, জুঁই মণ্ডল ও রিতু বৈরাগী জানান, আগে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন অনুশীলনে মাঠে আসত। এখন আসে ১০-১৫ জন।

বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ফুটবলার মঙ্গলী বাগচী বলেন, নূপুর ও তার পরিবারের লোকজন আমাদের মারধর করেছে। রড দিয়ে পিটিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তারা ওড়না দিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা আমাকে বেঁধে রাখে।

তিনি আরও বলেন, ওরা বলেছে, হাফ প্যান্ট-জার্সি পরে গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলা যাবে না। শুধু তাই নয়, ওরা অ্যাসিড মেরে আমাদের মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে রাতে ঘুম আসে না। শুধু মনে হয়, এই বোধ হয় আবার হামলা হলো, অ্যাসিড মারল।

তেঁতুলতলা সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির সভাপতি ইসলাম হাওলাদার বলেন, হামলার ঘটনায় মেয়েদের মধ্যে আতঙ্কে বিরাজ করছে। অনুশীলনের জন্য ডেকে ডেকে আনতে হচ্ছে। আগে কোনো দিন গ্রামের কেউ ফুটবল খেলা নিয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত বা কটূক্তি করেনি। কিন্তু নূর আলমের পরিবার এবার ঝামেলা বাধিয়েছে।

এদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা ও মারধরের অভিযোগে গত ৩০ জুলাই রবিবার সাদিয়া নাসরিন বাদী হয়ে নূপুর, তার বাবা নূর আলম খাঁ, ভাই সালাউদ্দিন ও নূপুরের মা রঞ্জি বেগমকে আসামি করে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা করেন। মামলার পর পরই পুলিশ নূর আলমকে গ্রেপ্তার করে।

বটিয়াঘাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শওকত কবির জানান, অ্যা্সিড নিক্ষেপের হুমকির অভিযোগে সাদিয়া গত ৩১ জুলাই একটি জিডি করেন। মামলা ও জিডির তদন্ত চলছে। জিডির বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বটিয়াঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কৌশিক কুমার সাহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নূর আলম বর্তমানে কারাগারে। তবে অন্য তিন আসামি মঙ্গলবার আদালত থেকে জামিন পেয়েছে। প্রতিদিন পুলিশ ওই গ্রামে টহল দিচ্ছে। মেয়ে ও তাদের অভিভাবকদের বলেছি, কোনো সমস্যা মনে করলে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে ফুটবলারদের মারধরের প্রতিবাদে ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠির অধিকার আন্দোলন, খুলনা ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ফুটবল খেলার জন্য সাদিয়া নাসরিন, মঙ্গলী বাগচীসহ চারজনকে মারধর করা হয়েছে।এদিকে আসামিদের ৩ জন জামিন পেয়ে এসিড নিক্ষেপের হুমকি দিচ্ছে। হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

সংগঠনের খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি সুব্রত কুমার মিস্ত্রীর সভাপতিত্বে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বিভুতোশ রায়, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রী, গীতা ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রসেনজিৎ দত্তসহ আরও অনেকে ছিলেন।

—-ইউএনবি