অনলাইন ডেস্ক :
নির্মাণ কাজ দীর্ঘায়িত হওয়ায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ এর ব্যয় হাজার কোটি টাকারও বেশি বেড়ে যাচ্ছে। ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি থেকে প্রকল্পটির ব্যয় ২২ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকায় উন্নীতের প্রস্তাব করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে ব্যয় বাড়বে ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। জাপান-কোরিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল-৩ নির্মাণ করছে।
চুক্তি অনুযায়ী সব কাজ শেষ করে টার্মিনালটি গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে ঠিকাদারের হস্তান্তরের করার কথা ছিল। প্রকল্পের মেয়াদ প্রায় দুই মাস আগে শেষ হলেও এখনো ৩ দশমিক ১ শতাংশ কাজ বাকি। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজের ব্যয় এর আগেও বেড়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি যখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয় তখন ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। এরপর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার এর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব বা ডিপিপি সংশোধন করা হয়। সে সময় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকায়।
সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকল্পটি দ্বিতীয়বার সংশোধনের প্রস্তাব করেছে বেবিচক। প্রস্তাবটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বেবিচক যে ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে তাতে ৭১৫ কোটি টাকা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাকি টাকা সরকারি কোষাগার (জিওবি) থেকে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যয় বাড়ছে ঋণ ও জিওবি দুই খাতেই। এদিকে হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমানের দাবি- থার্ড টার্মিনালের নির্মাণ কাজের জন্য তা বাড়ছে না।
টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ থেকে বিমানবন্দরের অপারেশন টার্মিনাল-৩-এ আনা হবে। টার্মিনাল-৩-এ অপারেশন শুরুর জন্য কিছু কেনাকাটার বিষয় আছে। জনবল প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে। তাই এ প্রকল্পে কিছু অনুষঙ্গ যোগ হয়েছে। এ কাজগুলোর ব্যয় জাইকা বহন করবে। তাই ব্যয় বাড়ার সুযোগ নেই। আর যেটুকু ব্যয় বাড়বে তা ভ্যাট ও আইটি খাতে। প্রকল্পের কাজে কোনো ব্যয় বাড়েনি। আশা করি ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হবে।
অন্যদিকে সরেজমিনে থার্ড টার্মিনালে দেখা যায়- টার্মিনাল ভবনের ভেতরের সব অবকাঠামো প্রস্তুত অবস্থায় দেখা গেছে। দৃষ্টিনন্দন তিনতলা টার্মিনাল ভবনটির চলন্ত সিঁড়ি, লিফট, এস্কেলেটর, চেকইন কাউন্টার, পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, কনভেয়র বেল্ট, ইমিগ্রেশন ডেস্ক, স্ক্যানারসহ সবকিছুই প্রস্তুত। বেবিচক সংশ্লিষ্টদের মতে- নতুন এ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য প্রায় ছয় হাজার জনবল প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে শুধু নিরাপত্তার জন্যই প্রয়োজন হবে প্রায় চার হাজার জনবল।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, ইমিগ্রেশন, কাস্টমসহ বিভিন্ন পরিষেবা দেয়ার জন্য আরো ২৮-২৯টি সংস্থার জনবল দরকার হবে। জনবল প্রশিক্ষণ ও বিমানবন্দরের সব পরিষেবা সমন্বয়ের কাজগুলো বাকি রয়েছে, সেগুলোই এখন করা হচ্ছে। মূলত বাকি থাকা ৩ দশমিক ১ শতাংশ কাজের মধ্যে কো-অর্ডিনেশন ও টেস্টিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ রয়ে গেছে। এ বিষয়ে বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের প্রথম দিকে থার্ড টার্মিনালের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি