নিজস্ব প্রতিবেদক:
পণ্য ও পর্যটক পরিবহনে মোংলা বন্দরকে রেল সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে খুলনা-মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রকল্পের ৯৬ শতাংশ কাজ। আর চলতি বছরের জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। রেল সেবা চালু হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে। রেলপথ না থাকার কারণে এতোদিন মোংলা বন্দরের বড় বড় কন্টেনার পরিবহনে সমস্যা হতো। পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোড সুন্দরবনে পর্যটক পরিবহনেও সহজ হবে। দীর্ঘ ৭৩ বছর পর মোংলা সমুদ্র বন্দরে রেলপথ যুক্ত হচ্ছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মোংলা দেশের অন্যতম সমুদ্র বন্দর হলেও এতোদিন সেখানে কোনো রেল সংযোগ ছিল না। ফলে বন্দরটিতে অন্যান্য দেশের বড় মালবাহী জাহাজ ভিড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছিল না। বরং সব বড় বড় জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর ফেলে। তাতে মোংলা বন্দর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। যদিও মোংলা বন্দরকে রেল সেবার আওতায় আনতে ইতঃপূর্বে একাধিক পরিকল্পনা নেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে বাংলাদেশের আর্থিক সমৃদ্ধির কথা বিবেচনা করে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক কর্মকা- সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মোংলা বন্দরকে রেল সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। সূত্র জানায়, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বিগত ২০১০ সালে অনুমোদন করে। প্রকল্পটি তিনটি ভাগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তার মধ্যে প্যাকেজ-১ রেল লাইন নির্মাণ, প্যাকেজ-২ রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু, প্যাকেজ-৩ টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। আর রূপসা নদীর ওপরে নির্মাণ করা হচ্ছে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রূপসা রেলসেতু। ইতোমধ্যে ওই সেতু কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে। তাছাড়া ৩১টি ছোট সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। আর ১০৭টি কালভার্টের মধ্যে ১০৫টির কাজ শেষ হয়েছে। ৯টি ভিইউপির নির্মাণ কাজ এবং ২৯ এলসি গেটের ২৬টি কাজ শেষ হয়েছে। তাছাড়া ৮টি স্টেশন বিল্ডিংয়ের মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা ও মোহাম্মদনগরের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৫টি স্টেশনের মধ্যে কাটাখালী ৮০ শতাংশ, চুলকাটি ৭ শতাংশ, ভাগা ৭২ শতাংশ, দ্বিগরাজ ৯৮ শতাংশ ও মোংলা স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রেলপথটি চালু মোংলা বন্দরসহ পুরো এলাকায় অনেক পরিবর্তন আসবে। মোংলা বন্দরের গুরুত্বও বেড়ে যাবে বহুগুণ। পাশাপাশি খানজাহান আলী বিমানবন্দর এবং চাহিদামতো গ্যাস মিললে ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর ব্যবহারে আরো আগ্রহী হবে। তাতে খুলনার হিমায়িত মৎস্য, পাট ও পর্যটনশিল্প থেকে আয় আরো বাড়বে। তখন দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল। সূত্র আরো জানায়, খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত প্রায় ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালে জুনের মধ্যে পুরো রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। দু’দফা ডিপিপি সংশোধনের পর প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তার মধ্যে ভারতীয় ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৯৪৮ কোটি ১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বাকি ১ হাজার ৩১২ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকার সরকারি ফান্ড থেকে ব্যয় হবে। এদিকে এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান জানান, মোংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য খুলনা থেকে বাগেরটহাটের মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে তা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তবে করোনাকালে ভারত থেকে মালামাল আসতে ও নানা সংকটে শুরুতেই নির্মাণ কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। সেজন্য প্রকল্পের মেয়াদ ডিফেক্ট লায়ারলিটি পিরিয়ডসহ ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে মোংলা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোস্তফা কামাল জানান, মোংলা বন্দরটি ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এতোদিন এই বন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ছিল না। এখন খুলনা-মোংলা রেলপথ চালু সড়কপথে পণ্য পরিবহন চাপ কিছুটা কমে যাবে। পণ্য পরিবহন ব্যয় ও সময় অনেক কমে যাবে। তাছাড়া মোংলা বন্দরের নৌ, সড়ক ও রেল পথের মাল্টিমোডাল যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, নেপাল ও ভুটানের পণ্য পরিবহন অনেকটা সহজ হবে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি