October 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, February 20th, 2023, 9:01 pm

পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা, দিনদিন বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা

জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী (কলাপাড়া) :

পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে সাগরকন্যা কুয়াকাটা। দিনদিন বাড়ছে দেশ বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা। আবাসিক হোটেল-মোটেল,কটেজ এবং খাবার হোটেলসহ সকল বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখন সরগরম হয়ে উঠেছে। এটি দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে নৈস্বর্গীক সৌন্দর্য্য দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকত। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের জলরাশি, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, ফাতরার চর, চর বিজয়সহ ঘুরে বেড়ানোর মতো আকর্ষণীয় স্পটগুলো ভ্রমণবিলাসী মানুষকে কুয়াকাটায় টেনে আনে। এখানকার নিরাপত্তা, স্থানীয় লোকজনের আতিথেয়তাও পর্যটকরা বারবার ছুটে আসেন। গত দুই তিন বছর আগে হোটেল মোটেল খালি পড়ে থাকলেও বর্তমানে হিমসিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। আগে যেমন ফেরি পারাপারের ভোগান্তি ছিলো। এখন পদ্মা সেতুর পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ উন্নতি হয়েছে। আর একারনেই কুয়াকাটায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। একই সাথে বানিজ্যিক ভাবে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। এক কথায় কুয়াকাটা এখন প্রতিদিন পর্যটক আসছেন প্রতিদিনই বানিজ্যিক ভাবে চাঙ্গা হচ্ছে এমনটাই জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মাসেতু চালু হওয়ার পর পরই কুয়াকাটার আমুল পরিবর্তন হয়েছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন স্থাপনা পাশাপাশি পর্যটকদের আকর্ষণে নেয়া হচ্ছে নানা ধরনের উদ্যোগ। ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে পাঁচ তারকামানের আবাসিক হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট। এছাড়া রয়েছে উন্নতমানের খাবার হোটেল ও রেস্তোরা। এ থেকে প্রতি সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা আয় করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটায় অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত হোটেল-মোটেল রয়েছে ৭৪টি। এর বাইরে ৫৬টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণির হোটেল রয়েছে ১৫টির মতো। এতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজারের মতো পর্যটক রাত যাপন করতে পারবেন। এখানকার ছোট বড় সকল আবাসিক হোটেলে গড়ে সকল সিট বুকিং হয়ে যায় প্রতিদিন।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে সৈকতজুড়ে যেন পর্যটকের ঢল নামে। এছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনে কুয়াকাটায় পর্যটকদের ব্যাপক চাপ থাকে। প্রায় দিনই হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে ঢাকা থেকে সড়কপথে কুয়াকাটায় আসতে সময় লাগে সাড়ে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। তাই অনেকেই অনলাইন কিংবা মোবাইলে হোটেল-মোটেলের রুম বুকিং দিয়ে রাখেন। এ হলো পদ্মা সেতুর সুফল। তবে এখানে আরো উন্নতমানের হোটেল-মোটেল ও বিনোদন ব্যাবস্থা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন আগত পর্যটরা।
সৈকতে শামুক-ঝিনুক বিক্রেতা সালেহ আহমেদ বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আর তার অন্যতম কারণ হলো পদ্মা সেতু। এখন ঢাকাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষ অতি সহজেই কুয়াকাটায় চলে আসতে পারে। তবে করোনাকালীন গত দুই বছর ও একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে তাদের ব্যবসায়িক মন্দা ছিল বলে এই ব্যবসাসি জানান।
কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোসিয়েশন কুটুমের সাধারন সম্পাদক মো হোসাইন আমির বলেন, দেশের গন্ডি পেরিয়ে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা এখন বিদেশী পর্যটকদের কাছেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পরই সাগরকন্য কুয়াকাটায় পর্যটকরা আসতে শুরু করেছে। তাই বিনিয়োগকারীরা ইতোমধ্যে এখানে নতুন নতুন স্থাপনা তৈরির পাশাপাশি পর্যটক আকর্ষণে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।
ট্যুরিস্ট অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা টোয়াক’র সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ বলেন, একসময় ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১২ থেকে ১৪টি ফেরি সার্ভিস ছিল। আর কুয়াকাটায় পৌঁছাতে ২৪ থেকে ২৫ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন মাত্র ছয় ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। এ কারণে পর্যটক বেশি হচ্ছে। তবে পদ্মা সেতু দখিনের দুয়ার খুলে দিয়েছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পর্যটকের আগমন বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে পর্যটক বেশি থাকে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, কুয়াকাটায় এসে সাগরে গোসল করতে নেমে কেউ দুর্ঘটনায় যেন না পড়েন, সে জন্য তারা বারবার সতর্ক করছেন। এছাড়া আগত পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ বাংলার স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিজ অর্থায়নে নির্মান করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সেই পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে কুয়াকাটার নৈস্বর্গীক সৌন্দর্য্য উপভোগে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল ব্যবসায়ী নির্ভিগ্নে বানিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। ব্যবসায়ি এবং পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কুয়াকাটা সৈকতসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পৌসভার উদ্যোগে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে।