October 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, June 19th, 2022, 9:53 pm

পরিচালনা পর্ষদের অসততায় বেসরকারি স্কুল-কলেজে অনিয়ম-দুর্নীতি বাড়ছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পরিচালনা পর্ষদের অসততার কারণেই বেসরকারি স্কুল-কলেজে অনিয়ম-দুর্নীতি বাড়ছে। অভিযোগ রয়েছে পরিচালনা পরিষদের সদস্যরাই নানা কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টিউশনি ফি থেকে শুরু করে সরকারি অনুদানের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের কেনাকাটায়ও অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চেয়ে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়েই বেশি আগ্রহী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্কুলের ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটি ও কলেজের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডি পদ্ধতি চালু করা হয় মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা, আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা তদারকি, লেখাপড়ার মান নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। কিন্তু ওসব কমিটি বর্তমানে শিক্ষার মান বাড়ার পরিবর্তে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ব্যতিক্রমও থাকলেও তার সংখ্যা খুবই কম।
সূত্র জানায়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গভর্নিং বডি অতিসম্প্রতি ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষসহ ৩ জনকে বরখাস্ত করে। আর যেসব অনিয়মের অভিযোগ অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করা হয় ওসব কাজ গভর্নিং বডির নির্দেশেই হয়েছে। তার আগে শিক্ষা বিভাগের এক তদন্তে মিরপুর কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কোটি টাকার অনিয়মের প্রমাণ মেলে। ওই অধ্যক্ষ দাবি, সাবেক প্রয়াত সভাপতির নির্দেশেই ওসব অর্থ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। আর গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত না মেনে উপায় নেই। তাছাড়া শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হাসিনা বেগমকে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির দায়ে অভিযুক্ত করে। হাসিনা বেগমও প্রমাণ করে দেখিয়েছেন ওসব তিনি গভর্নিং বডির নির্দেশেই করা হয়েছে। যদিও গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একইভাবে রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে দেখা গেছে কলেজের গভর্নিং বডি ও বিভিন্ন নামে গঠিত কমিটি তিন অর্থবছরে সম্মানির নামে ২০ লাখ ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। এক দিন মিটিং করলেই ব্যয় ১ লাখ টাকা। গভর্নিং বডির সভাপতি এবং বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা কলেজের মিটিং ছাড়াও রুটিনবহির্ভূত কাজে আসতো। সেজন্য সভাপতি প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা করে নিতো। আর অন্য সদস্যরা নিতো ২ হাজার করে। রাজধানীর শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজ গভর্নিং বডির সাবেক এক সভাপতি মাসে গড়ে ৬৫ হাজার টাকা করে সম্মানি নিতো। তাছাড়া ভবন সংস্কার, আসবাবপত্র তৈরির নামেও গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে লুটপাট করেছে।
সূত্র আরো জানায়, পরিচালনা পর্ষদের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেশিরভাগ অনিয়ম হয়। কিছু ব্যক্তি ব্যক্তিগত সুবিধা লাভের জন্য নানা কৌশলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি/সদস্য হয়। তারা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের চেয়ে নিজেদের আখের গোছাতেই বেশি ব্যস্ত থাকে। পরিচালনা পর্ষদে এসেই অনেকে প্রতিষ্ঠানকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে। আর প্রতিনিয়ত তারা ব্যক্তিগত আবদার মেটানোর জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কর্মচারীর মতো আচরণ করে, নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখায়। যে প্রতিষ্ঠানের আয় যতো বেশি, যে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা যতো বেশি; সেখানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাই বেশি সক্রিয়।
এদিকে অভিভাবকদের অভিযোগ, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা দেখে না। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে কথা বললে তা শোনে না। এমনকি অভিভাবকদের সঙ্গে তারা কথাও বলতে চায় না। মনে হয় তারা প্রতিষ্ঠানের মালিক। বিগত ১৯৮০ সাল থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হওয়ার পর থেকে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ দিতো সরকার। তারপর থেকে তা বাড়তে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতভাগ বেতনই সরকার দিচ্ছে। এমন অবস্থায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদৌ পরিচালনা পর্ষদের প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার জানান, বেসরকারি স্কুল কলেজে পরিচালনা পর্ষদের প্রয়োজন আছে। তবে যেভাবে পর্ষদের সভাপতি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তা দুঃখজনক। পদকে ব্যবহার করে বাণিজ্যেরও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিধিমালা সংশোধন করে ওই পর্ষদকে আরো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।