অনলাইন ডেস্ক :
পরীমণি থমকে নেই। সোশ্যাল হ্যান্ডেল হয়ে সংবাদ মাধ্যমে গুলি ছুঁড়ছেন নিয়মিত। যার শেষ নজির মিললো সোমবার (৫ জুন) দুপুর দুইটা নাগাদ। যাতে নির্মাতা দীপংকর দীপনকে পরী বললেন, ‘জীবনকে সিনেমার কাছে তুচ্ছ করে দেয়া কোনো মেকারের সাথে যায় না।’ পরীর এই কথা কিংবা বুলেট বের করার প্রেক্ষাপট অবশ্য নির্মাতা নিজেই তৈরি করেছেন। এদিন সকালে তিনি নাম প্রকাশ না করেই একটি লম্বা পোস্ট লেখেন নিজের দেয়ালে। যেখানে তিনি চলমান রাজ-সুনেরাহ-পরীমণি বিতর্ক নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। বলতে চাইলেন, এসব ঘটনার কারণে তার মুক্তিপ্রতিক্ষীত সিনেমা ‘অন্তর্জাল’-এর প্রচারণায় ব্যাঘাত ঘটছে।
দীপনের ভাষাগুলো ছিলো এমন, ‘ভাই ও বোন প্লিজ থামেন। আমাদের ক্ষমা করে দেন। একবার না বারবার এসব হচ্ছে। নিজেদের টাকা ও ব্যক্তিগত জীবন নষ্ট করে, দিনরাত অপরিসীম কষ্ট করে একটা কনটেন্ট বানিয়ে নিয়ে আসি, দর্শকদের সামনে সেটা যখন উপস্থাপন করি, তখনই আপনাদের ব্যক্তিগত জীবনের নানা কাহিনি সামনে চলে আসে। সিনেমার কনটেন্ট-এর থেকে দর্শকদের আগ্রহ চলে যায় আপনাদের প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ, সন্তান- এসব দিকে। যা সামনে আসারই কথা না। একবার না বারবার হচ্ছে এসব- সত্যি আমি টায়ার্ড, আপসেট। প্রত্যেকের জীবনেই এসব আছে- কিন্তু এসব আমরা সামনে নিয়ে আসি না। এসব নিয়ে কথা বলি না পাবলিকলি। আপনারা তো পাশের মানুষটাকেও কিছু বলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে। নিজেদের পাবলিক করলে পাবলিক তো মজা নেবেই।’ এই পোস্ট পড়ে কেউ বুঝতে বাকি রইলেন না, দীপন তার ‘অন্তর্জাল’ ছবিটিকে সামনে নিয়েই এই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন রাজ ও পরীকে ঘিরে।
কারণ, ঈদে মুক্তিপ্রতিক্ষীত এই সিনেমাটির অন্যতম নায়িকা সুনেরাহ বিনতে কামাল। মূলত, পরীর বুলেটভর্তি স্টেনগান শুরু থেকেই তাক হয়ে আছে যার দিকে! সেই স্টেনগান এবার ঢে ঢে ঢে করে চললো দীপন বরাবর। তার সকালের পোস্টটি শেয়ার করে পরী বলেন, ‘জি, ১০ দিন যে জামাই বাসা ছেড়ে গেছে এটা তো আপনার সিনেমার নায়িকার কারণেই জানাজানি হলো ভাইয়া! সিনেমা ফ্যাক্ট আবার কারোর ঘাড়ে চেপে লাইম লাইটে আসাটাও ফ্যাক্ট! যেটা আপনার সিনেমার এই মেয়েটা করলো। সবখানে লাফাতে লাফাতে গিয়ে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। এত ডাক তো তার কোনো কালে আর আসে নাই। এখন বইলেন খালি আমার থু থু না চাইটা যেন সিনেমার কথাটাও ঠিকমতো বলে। আপনার কিন্তু আরও বড় শিল্পীরা আছেন এই সিনেমায়, তাদেরকে এখনও ওনার মতো প্রমোশনে যেতে দেখেনি। নাকি সব দায়িত্ব এবার এই একজনেরই!’ থামেননি।
দীপন বরাবর গুলি চালালেন আরও, ‘আর ভাইয়া, আপনার সাথে তো আমার পার্সোনালি অনেক ভালো সম্পর্ক! এত বড় স্ট্যাটাস লিখতে পারলেন অথচ আমাকে একটা কল করে কিছু বলতে পারলেন না! আফসোস! আর এমন তুচ্ছ করে তুচ্ছ লিখবেন না প্লিজ ভাইয়া। জীবনটাকে সিনেমার কাছে তুচ্ছ করে দেয়া কোনো মেকারের সাথে যায় না। জীবন দামি। সবথেকে দামি।’ এবার দীপনের বাকি প্রতিক্রিয়াটা পড়া যাক। তিনি সত্যিই রাজ-পরীর চলমান পারিবারিক জটিলতাকে ‘কেচ্ছা’ ও ‘তুচ্ছ’ হিসেবে তুলে ধরেছেন সবার প্রতি। লিখেছেন, ‘সাংবাদিক ভাই বোন, পত্রিকার মালিক পক্ষ, আপনাদের অনুরোধ করি, প্লিজ ইগনোর করেন এসব। এসব ছাড়া আপনাদের পত্রিকা চলবে না, আমি বিশ্বাস করি না। অনেক শক্ত আপনাদের ভিত্তি। সস্তা ইউটিউবার আর ল্যাপটপ বেজড অনলাইন পত্রিকা করুক, আপনারা কেন? আপনারা স্ট্যাবলিশ স্বনামধন্য সাংবাদিকরা একবার ইগনোর করে দেখুন, সব থেমে যাবে। দর্শকদের অনুরোধ করি, যখন দেশের বাইরে কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে, আপনাদের দেশের সিনেমার স্ট্যান্ডার্ড কেমন? তখন সামনে আসবে কিন্তু তারকাদের বিয়ে, প্রেম, বিচ্ছেদের গল্প।
এসব দিয়ে নিজের দেশের ব্র্যান্ডিং হবে না, ওসব কেউ মাথায়ই আনবে না। আসবে কনটেন্ট, নিজের দেশের সিনেমার পর্দায় কী চলছে সেটা। তারকাদের ঘরে কী চলছে সেটা না। ওটা তারা আলোচনা করুক, যারা চায় এই দেশে সিনেমা বন্ধ হয়ে যাক। তারা তিলকে তাল করবে- আপনারা জাস্ট ইগনোর করুন। কথা বলা, শেয়ার করা বন্ধ করে দিন। আপনাদের আগ্রহ কমলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। সবার ঘরেই নানা প্রবলেম থাকে, ওগুলো নিয়ে কথা বলার কি আছে! কনটেন্ট নিয়ে কথা বলুন, আলোচনা করুন, সমালোচনা করুন, ভালো কাজকে অনুপ্রেরণা দিন। সত্যি বলছি- ভালো কাজ আপনারা যা দেখেন এই দেশে তা খুব কষ্ট করে হয়। চোখে পানি চলে আসার মতো কষ্ট। আমার একার না সবার। সবাই কষ্ট করে। এই কষ্টকে মূল্যায়ন করুন- ব্যক্তিগত জীবনে কারেও ভুল বা খামখেয়ালীকে নয়। আপনারা এসব নিয়ে আগ্রহ কমালে সব কমে আসবে ক্রমান্বয়ে।’
‘অন্তর্জাল’ নির্মাতা দীপন আরও বলেন, ‘আজীবনই পৃথিবীতে কেচ্ছা-কাহিনির জনপ্রিয়তা বেশি। কিন্তু এটা বাংলাদেশের সিনেমা মূলত মেইনস্ট্রিম সিনেমা বিনির্মাণের সময়। আমরা অনেক পরিচালক, রাইটার, শিল্পী, কুশলীরা প্রাণপণে চেষ্টা করছি। এ বিনির্মাণে সবার দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন। কষ্ট করতে আমরা রাজি আছি, আরও করবো, নিজেদের উন্নত করবো। আমাদের মোটিভেশন দরকার। অল্প অল্প করে জমা হতাশা একসাথে হয়ে আমাকে/আমাদের মেরে ফেলতে পারে। বাংলাদেশের সিনেমার ভীষণ সম্ভাবনা- তুচ্ছ কারণে সেটা নষ্ট না করি।’ চিত্রনায়ক শরিফুল রাজ ও চিত্রনায়িকা পরীমণি, দুজনের মধ্যে চেনাজানা ছিল না। একটি সিনেমার সূত্রে প্রথম দেখা, আর সেই সাক্ষাতের এক সপ্তাহ পরই তারা বিয়ে করে ফেললেন! এরপর তুমুল প্রেমে ভরা সংসার। তাদের ঘর আলো করে এসেছে সন্তান। সেই সন্তান ঘিরেও তাদের উচ্ছ্বাসের অন্ত নেই।
কিন্তু গত কয়েক মাস ধরেই সেই সম্পর্ক নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। সম্প্রতি তা চরম আকার ধারণ করেছে। এমনকি বিচ্ছেদের গুঞ্জনও ঘুরে বেড়াচ্ছে সিনেপাড়ায়। গত ২৯ মে মধ্যরাতে রাজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর থেকে তাদের মধ্যকার জটিলতা প্রকাশ্যে এসেছে। পরী অভিযোগ তোলেন শরিফুল রাজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ‘নডরাই’খ্যাত সুনেরাহ বিনতে কামালের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে সোশ্যাল হ্যান্ডেল ও গণমাধ্যমে পরী-রাজ ও সুনেরাহ’র মধ্যে তুমুল গোলাগুলি!
আরও পড়ুন
ইউটিউব থেকে সরানো হলো শাকিবের ‘তুফান’
চিন্তিত অনন্যা পান্ডে
কনাকে নিয়ে সুখবর দিলেন আসিফ