July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 4th, 2022, 1:10 pm

পাঁচ প্রতিবন্ধী সদস্য নিয়ে এক হতদরিদ্র পরিবারের করুণ কাহিনী

গাছ থেকে পড়ে গিয়ে কোমড় ভেঙে যাওয়ার পর প্রতিরাতেই হাড় ভাঙার তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করেন জিয়া শেখ (৪০)। তীব্র ব্যাথায় তার গোঙানির শব্দ শুনে ফ্যালফ্যাল করে অসহায়ের মতো মুখের দিকে চেয়ে থাকে ঘরের বৃদ্ধা মা, অসহায় স্ত্রী ও চারটি শিশু সন্তান। যাদের মধ্যে তিনজন জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী।

ফরিদপুরের মধুখালীর এক হতদরিদ্র জিয়া শেখের পরিবারের করুণ কাহিনী এটি। মাত্র ছয় মাস আগে একটি তাল গাছ ঝুড়তে যেয়ে গাছ থেকে পড়ে চলাচলের শক্তি হারান জিয়া। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেয়ার পর ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করাতে। কিন্তু অপারেশন করানোর সামর্থ্য নেই তার পরিবারের।

মধুখালী উপজেলার মেগচামী গ্রামের প্রতিবন্ধী জিয়া শেখের বাবা করিম শেখ ছিলেন একজন হতদরিদ্র গৃহকর্তা। বাসাবাড়িতে ভিক্ষা করে যা পেতেন তাই দিয়েই কোনমতে দিন কাটতো পরিবারের। ভূমিহীন এই পরিবারের মাথা গোঁজার কোন ঠাই ছিল না। এই অবস্থায় সাত বছর আগে তিন ছেলে ও স্ত্রী রেখে মারা যান করিম শেখ। ছোট ছেলে জিয়া নিজেও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী।

জিয়া শেখ জানান, দিনমজুরির পাশাপাশি তালগাছ ও নারকেল গাছ ঝুড়ে (গাছের ডগা পরিচর্যা) চলতো তার সংসার। তার স্ত্রী আরজিনা শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তাদের সংসারে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বড় ছেলে আকাশ (১৫) জন্ম থেকে শারিরীক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। ছয় বছর বয়সী ছোট মেয়ে ইয়াসমিন বাবা-মায়ের মতোই শ্রবণ প্রতিবন্ধী। শারিরীক কোন প্রতিবন্ধকতা নেই ১৪ বছর বয়সী বড় মেয়ে হেলেনার। সে এখন মেগচামী স্কুল এন্ড কলেজ আদর্শ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তাদের আরেক ছেলে রয়েছে আট বছর বয়সী তামিম। সে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। সামর্থ্যহীন পরিবারের ঘানি টানতে স্ত্রী আরজিনা বেগম) স্থানীয় একটি মিলে মজুরের কাজ করতেন। আরজিনা নিজেও প্রতিবন্ধী হওয়ায় মিলে কাজ করতে যেয়ে তিনি অসুস্থ্ হয়ে পড়েন।

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম জিয়া শেখ এখন চলাফেরা করেন লাঠিতে ভর দিয়ে। কাঁচামাটির ডোয়ায় টিনের চালার এক কক্ষের একটি ঘর তুলে সেখানেই বসবাস করছেন চার সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা সমেত সাত সদস্য নিয়ে। জিয়া শেখের মা রিনা বেগমের বয়স প্রায় ৬০ এর মতো। তিনিও একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধী।

জিয়া শেখ জানান, বেসরকারী সংস্থা ব্রাকের অনুদান হিসেবে পাওয়া গরু বাছুর পালন করে বিক্রির পর সেই টাকা দিয়ে গ্রামে তিন শতাংশ জমি কিনেছেন। সেখানে কোনমতে একটি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বড় ছেলে আকাশ প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তার সঙ্গে মানুষের সাহায্য-সহযোগীতা আর চেয়ে চিন্তে চলছে তার সংসার। এমনও সময় যায়, যখন তার বাড়ির চুলা জ্বলেনা। এই শিশু সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে প্রায়ই তার দিন কাটে।

তাদের এখন সম্বল বলতে সামান্য বাড়ির ভিটে ছাড়া আর কিছুই নেই। জিয়া শেখ বলেন, আমার মা ও দুটি সন্তান প্রতিবন্ধী। আমিও ঘরে পড়ে আছি। আপনার কেউ যদি দয়া করে একটু সাহায্য- সহযোগিতা করতেন তাহলে আমরা প্রাণে বেঁচে থাকতে পারি।

স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার আজম মোল্যা বলেন, এই হতদরিদ্র পরিবারটি খুবই অসহায়। এলাকাবাসী টাকা তুলে জিয়ার চিকিৎসা করিয়েছে। এখন তার অপারেশনের জন্য বেশ কিছু টাকার প্রয়োজন। সরকারের কাছে বিনীত আবেদন, যেন এই পরিবারের একটু গতি হয়।

মধুখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কল্লোল সাহা বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে এই পরিবারের প্রতিটি প্রতিবন্ধী সদস্যকে জরিপের আওতায় এনে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা নেব এবং সরকারি বিশেষ যে প্রতিবন্ধী ক্ষুদ্র ঋণ সহায়তা আছে, সে ব্যবস্থা করে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার চেষ্টা করবো।

—ইউএনবি