নিজস্ব প্রতিবেদক:
পাইকারি বাজারে পেঁয়াচের ক্রেতা মিলছে না। এমন অবস্থায় মজুদ করা পেঁয়াজে পচন ধরতে শুরু করেছে। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে মূল্য বাড়ানো এবং শুল্কারোপ করায় দাম চড়া হওয়ার পর থেকেই পাইকারি বাজারে ক্রেতা সঙ্কট। এই অবস্থায় অনেকেই কম দামে পেঁয়াজ ছেড়ে দিচ্ছে। কারণ ক্রেতার আকালে নষ্ট হতে শুরু করেছে অনেক আড়তের পেঁয়াজ। আর পচনধরা পেঁয়াজ আরো কম দামে বিক্রি করছে আড়তদাররা। পাইকারি বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বতমান পেঁয়াজের বাজার বলতে গেলে ক্রেতাশূন্য। চাহিদা অনুযায়ী ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে ঠিকই, কিন্তু দাম আরো কমে যাবে এই শঙ্কায় পাইকারিতে ক্রেতা মিলছে না। ভারত শুল্কারোপের পর খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৬২ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫৪ টাকায়। অনেকেই ৬০ টাকা দর দিয়েছিল, কিন্তু সেই দরে ক্রেতা মিলছে না বলে বাধ্য হয়েই ৫৪ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছে। কারণ সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজ আড়তে পড়ে থাকায় বস্তার ভেতর নষ্ট হচ্ছে। অনেক পেঁয়াজের গায়ে দাগ লেগেছে। সেগুলো আরো কমদামে বিক্রি করতে হবে। সূত্র জানায়, জানা গেছে, ভারত নিজেদের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্কহার ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে গত ২০ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর দুই দিন পর শুল্কায়নমূল্যও বাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে দেশের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা শুরু হয়।
ভারত থেকে আমদানিমূল্য বাড়ার কথা কেজিতে সাড়ে ছয় টাকা কিন্তু একলাফে সেটি বেড়ে যায় কেজিতে ২০ টাকা। ফলে পাইকারিতেই কেজি ৬২ টাকার ওপরে বিক্রি হয় ভারতীয় পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজ অবশ্য আরো বেশি দামেই বিক্রি হয়। এমন অবস্থায় ভারতের বদলে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আনার অনুমতি দেয় সরকারের কৃষি বিভাগ। শুরু হয় বিকল্প দেশ থেকে আইপি বা আমদানি অনুমতিপত্র দেওয়া। আমদানি অনুমতি দেওয়া সেই পেঁয়াজ এখনো দেশে পৌঁছেনি কিন্তু তার আগেই বাজারে অস্থিরতা কমে আসে। কমতে থাকে দাম।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ ৫৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে পেঁয়াজ এসেছে ৪ লাখ ২১ হাজার টন। শুধু ২৩ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকেই পেঁয়াজ এসেছে ৪৬ হাজার টনের বেশি। ভারতের বদলে বিকল্প ১০ দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নেওয়া হয়েছে ৩১ হাজার টন। সেই পেঁয়াজ এখনো আসেনি, সমুদ্রপথে জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই পেঁয়াজ আসলে বাজারে আরো দাম কমে যাবে। বিকল্প দেশ থেকে যেই আবেদন করেছে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এই কারণে চীন থেকে যেমন পেঁয়াজের অনুমতি দেয়া হয়েছে, তেমনি আমেরিকা থেকেও আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
অনুমতি পাওয়া দেশের তালিকায় পাকিস্তান নেদারল্যান্ডস, আরব আমিরাত এবং তুরস্ক, কাতার, মিশর রয়েছে। ওসব পেঁয়াজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছলেই বাজারে দামে ধস নামবে। এদিকে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। সুপার শপগুলোতে আরো বেশি দামে কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান গাড়িতে কিছুটা কমে কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। মূলত দাম আরো কমার ভয়ে খুচরা বিক্রেতারা বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ কিনে রাখছে না। ফলে পাইকারি বাজারের তুলনায় দাম অতটা কমেনি খুচরা বাজারে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি