নিজস্ব প্রতিবেদক:
তীব্র পানি সঙ্কটে সীতাকুন্ডের ভারি শিল্পাঞ্চল। ইতোমধ্যে পানি সঙ্কটে বড় ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও সক্ষমতা থাকার পরও উৎপাদনহীনভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান বসে থাকছে। কারণ প্রয়োজন অনুযায়ী পানি ১২শ থেকে ১৩শ’ ফুট মাটির গভীরে নলকূপ স্থাপন করার পরও মিলছে না। আর অগ্নিদুর্ঘটনায় নির্বাপণের সময় এ সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে। পানির অভাবে উৎপাদন খরচ বাড়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হচ্ছে অনেকে ওই অঞ্চল থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে। শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইস্পাতসহ বিভিন্ন ভারি শিল্প-কারখানার জন্য সীতাকুন্ড শিল্পাঞ্চলে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পানির প্রয়োজন পড়ে। প্রয়োজন মেটাতে দীর্ঘসময় কারখানাগুলো গভীর নলকূপের পানি ব্যবহারের ওই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। কয়েকটি শিল্প-কারখানা ১২শ ফুট পর্য ভূগর্ভে পানি সন্ধান করেও আশানুরূপ ফল পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখা, মজুদসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের পুকুর-ডোবা থেকে পানি কিনে পণ্য শিল্প মালিকরা উৎপাদন চালাতে হচ্ছে। সরকারি দপ্তরগুলো এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর নেই। সূত্র জানায়, ভারি শিল্প একটি ইস্পাত কারখানার পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনে দৈনিক ন্যূনতম ২০ লাখ থেকে ৬০ লাখ লিটারের বেশি পানির প্রয়োজন। ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ায় শিল্প মালিকরা নিজ উদ্যোগে একাধিক রিজার্ভার নির্মাণের মাধ্যমে সংকট কিছুটা সামাল দিচ্ছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই গ্রীষ্মকালে পানির অভাবে উৎপাদন অন্তত ১০-১৫ শতাংশ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। সীতাকুন্ডে দীর্ঘদিনের পুরনো জিপিএইচ ইস্পাতের দুটি বড় কারখানা নিজস্ব একাধিক পানি রিজার্ভার বানালেও উৎপাদন ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিটি। কুমিরা অঞ্চলে নতুন একটি আধুনিক ইস্পাত কারখানা স্থাপন করলেও পানির অভাবে এখনো শতভাগ উৎপাদনে যেতে পারেনি জিপিএইচ ইস্পাত। বাধ্য হয়ে তাই রিজার্ভারে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার ছাড়াও প্রতি বছর স্থানীয় বিকল্প উৎস থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় দেড় কোটি টাকার পানি কেনা লাগছে। যা পণ্যমূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে সীতাকুন্ডের ভাটিয়ারী ইউনিয়নে ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের কারখানার পানির সঙ্কটে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম ওয়াসার সংযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। আর মিরসরাই উপজেলায় বিএসআরএমের আরেকটি কারখানায় মুহুরী নদীর পানি পাইপলাইনের মাধ্যমে ব্যবহারের অনুমতি পেয়েছে। সীতাকুন্ড এলাকায় পানির সংকট আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ায় কারখানাগুলো নিজস্ব রিজার্ভার ব্যবহার করে চাহিদা মেটাচ্ছে। মিরসরাইয়ের কারখানায় নদীর পানি ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও সীতাকুন্ডের কারখানাগুলোর জন্য পানি সংকট বর্তমানে তীব্র। সূত্র আরো জানায়, সীতাকুন্ড উপজেলায় ৩ হাজার ৩১৩টি গভীর-অগভীর নলকূপের মধ্যে ৭৪৭টি নলকূপ থেকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিদিন শিল্প-কারখানায় বিপুল পরিমাণ পানি উত্তোলনের কারণে চালু থাকা নলকূপগুলোও যেকোনো সময় অকেজো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে নলকূপ থেকে বর্তমানে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন কার্যত বন্ধ রয়েছে। সড়কের পশ্চিম পাশের অঞ্চল থেকে নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা গেলে সমুদ্রের কারণে লবণাক্ততায় এসব পানি শিল্পে ব্যবহার অনুপযোগী। এ কারণে আগামীতে শিল্প ছাড়াও সীতাকুন্ডঅঞ্চলে বসবাসরত মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহও অনিশ্চিত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ জানান, সীতাকুন্ড উপজেলায় বিদ্যমান শিল্প-কারখানাগুলোয় পানি সরবরাহে ওয়াসার তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তাছাড়া শিল্প জোনে কী পরিমাণ পানির প্রয়োজন, পানির উৎস কী সে বিষয়েও কোনো সঠিক তথ্য নেই। উপজেলা পর্যায়ে পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কাজ করে। তবে পানির প্রকৃত চাহিদা ও উৎস নিশ্চিত করা গেলে রাষ্ট্রীয় গুরুত্ব বিবেচনায় প্রকল্প নেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে শিল্প জোনের কারখানা সংখ্যা, চাহিদাসহ বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে প্রকল্প নেয়া জরুরি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ