October 6, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, April 6th, 2022, 7:43 pm

পাবনায় মহানায়িকার জন্মদিন পালিত

অনলাইন ডেস্ক :

পাবনায় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের ৯১তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। বুধবার (৬ এপ্রিল) জন্মদিন উপলক্ষে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরণ পরিষদ মহানায়িকার পৈত্রিক বাড়ি পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে স্বল্প পরিসরে স্মরণসভার আয়োজন করে। সকাল ১১টায় নায়িকার পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রার ম্যূরালে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ। পবিত্র রমজান মাস ও করোনা সংকটের কারণে স্বল্প আয়োজন করা হয় বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নরেশ চন্দ্র মধু, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ। সুচিত্রা সেনের স্মৃতি বিজরিত পাবনা শহরের হেমসাগর লেনের পৈত্রিক বাড়িতে স্মৃতি সংগ্রহশালা গড়ে না ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। উপমহাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী নায়িকা সূচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়ি পাবনা শহরের গোপালপুর হেমসাগর লেনে। তিনি এখানকার মহাকালি পাঠশালায় এবং পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর পরিবারের সাথে ভারত চলে গেলে বাড়িটি প্রথমে জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে ছিল। পরে জামায়াত পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয়া হয়। তারা সেটিকে দখল করে নেয়ার চেষ্টা করছিল। অনেক আন্দোলনের পর এবং আইনি লড়াই শেষে ২০১৫ সালে বাড়িটি দখলমুক্ত হলে আবারো জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে ফিরে যায়। সুচিত্রা সেনের স্মৃতিকে ধরে রাখতে এবং তাকে স্মরণ করতে ২০০৪ সাল থেকে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ প্রতি বছর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। প্রসঙ্গত, তৎকালীন বৃহত্তর পাবনার (বর্তমান সিরাজগঞ্জ) বেলকুচি উপজেলার সেন ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল জন্ম নেন সুচিত্রা সেন সুচিত্রা সেন ওরফে রমা ওরফে কৃঞ্চা। পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের একতলা পাকা পৈত্রিক বাড়িতে সুচিত্রা সেনের শিশুকাল, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। তার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা মিউনিসিপ্যালিটির স্যানিটারি ইন্সপেক্টর পদে চাকরি করতেন। মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত ছিলেন গৃহিনী। দু’বোনের মধ্যে সুচিত্রা সেন ছিলেন বড়। ছোট বোন হেনা দাশগুপ্ত। শহরের মহাকালী পাঠশালায় পড়ালেখা শেষে সুচিত্রা সেন স্থানীয় পাবনা বালিকা বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। পাবনা শহরের নানা অনুষ্ঠানে গান গাওয়া ও নাটক থিয়েটারে তিনি অভিনয়ে দক্ষতা দেখান। তার পারবারিক নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ক’মাস আগে তার বাবা করুণাময় দাসগুপ্ত পাবনার বাড়ি-ঘর, চাকরি সবকিছু ফেলে সপরিবারে ভারত পাড়ি দেন। সুচিত্রা সেনও পরিবারের সাথে চলে যান। কলকাতা যাবার বছর দু’য়েক পরেই সেখানকার বনেদি পরিবারের ছেলে দিবানাথ সেনের সাথে রমা দাশগুপ্তের বিয়ে হয়। পাবনার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রমা বনেদি পরিবারের বধু হয়ে ঘর সংসারের পাশাপাশি সিনেমায় অভিনয়ে জড়িয়ে পড়েন। সিনেমায় অভিনয় শুরু পর নাম হয় সুচিত্রা সেন। বিয়ের আড়াই বছরের মাথায় ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের একটি বাংলা ছবিতে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। অজ্ঞাত কারণে ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে নায়িকা হয়ে তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবিটি মুক্তি পায়। ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছর সুচিত্রা সেন একটানা বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। স্বামী দিবানাথ সেনের প্রবল আপত্তি থাকলেও সুচিত্রা সেন মনের তাগিদে নিজেকে অভিনয়ে জড়িয়ে রাখেন। ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবির পরিচালক ছিলেন সুকুমার দাশগুপ্ত। তারই একজন সহকারী পরিচালক নীতিশ রায় এ ছবিতে অভিনয় করার পর ছবি মুক্তির সময় রমা নাম বদলে নাম দেন ‘সুচিত্রা সেন’। এরপর থেকেই কিশোরী বেলার বান্ধবীদের রমা বাবা-মায়ের দেওয়া নাম রমা দাশগুপ্ত থেকে স্বামীর পদবী নিয়ে রমা সেন সবশেষে স্বপ্নসুন্দরী সুচিত্রা সেন হয়ে যান। সুচিত্রা সেন বাংলা ৫৬টি ও ৭টি হিন্দি মিলিয়ে মোট ৬৩টি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি হয়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন তিনি। ১৯৭৮ সালে উত্তম কুমার মারা গেলে সিনেমায় অভিনয় বন্ধ করে দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ‘দেবদাস’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন, যা ছিলো তার প্রথম হিন্দি ছবি। ১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুচিত্রা সেন সিলভার প্রাইজ ফর বেষ্ট অ্যাকট্রেস জয় করেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ভারত সরকারও তাকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান প্রদান করেন। ২০০৫ সালে তাকে দাদা সাহেব ফলকে পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব রাখলে তিনি জনসমক্ষে আসতে চাননি বলে তা গ্রহণ করেননি। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘বঙ্গবিভূষণ’ দেয়া হয় তাকে। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি তিনি ভারতে পরলোকগমন করেন।