October 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, October 29th, 2021, 9:26 pm

পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতি, মূলহোতা চক্রের ৬ সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া শামীম রেজা কাজের সন্ধানে ২০০৫ সালে রাজশাহী থেকে ঢাকা আসেন। একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। মাদক সেবনের পাশাপাশি জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে। এক পর্যায় রেজা নিজেই ডাকাত চক্র গড়ে তোলে। পুলিশের ইউনিফর্ম পড়ে উপপরিদর্শক পরিচয় দিয়ে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় ডাকাতি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ শুরু করে শামীম। এই পর্যন্ত ৮/৯টি ডাকাতি করেছে সে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ভোর পর্যন্ত ঢাকার সাভার থানাধীন রাজাশন এলাকা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের পোশাক পরিহিত ভূয়া এসআই আমিনুল ওরফে শামীমসহ ৬ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-৪)। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন হেলাল উদ্দিন (৩৫), মো. পারভেজ(২৫), ওয়াসিম ইসলাম (২৫), নাইম খান (২৭), ফেরদৌস আহমেদ রাজু (২৯)। অভিযানে একটি পিস্তল, রাউন্ড গুলি, একটি নকল পিস্তল, একটি পিস্তল টাইপ লাইটার, একটি কভারসহ হ্যান্ডকাফ, একটি ওয়াকিটকি, ২সেট পুলিশ ইউনিফর্ম, পুলিশ জ্যাকেট, পুলিশ বেল্ট, ভুয়া পুলিশ আইডি কার্ড, ২টি রামদা, একটি ডেগার, একটি চাপাতি, ২টি ছুড়ি, ২টি টর্চলাইট, ২টি রশি, ৪৬৭ পিস ইয়াবা, ৩০ বোতল ফেনসিডিল, দেড় কেজি গাঁজা, ৭ গ্রাম হেরোইন, ৫ লিটার চোলাই মদ, ১৯টি মোবাইল এবং নগদ ৪৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, গ্রেফতর শামীম রেজা কিশোর বয়স থেকেই অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। সে গ্রামের একটি স্থানীয় স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ২০০৫ সালে ঢাকায় আসে। পরে একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করে। মাদকাসক্ত হওয়ায় মাদক কারবারিদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে পর্যায়ক্রমে তার নেতৃত্বে একটি ডাকাত বাহিনী গড়ে তুলে। সংঘবন্ধ ডাকাত চক্রটি রাতের আঁধারে পুলিশের ভুয়া ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় টর্চ লাইট দিয়ে গাড়ি থামিয়ে টাকা-পয়সা, স্বর্ণ অলংকার, মোবাইল এবং দামি জিনিসপত্র তার বাহিনীর সদস্যদেরকে নিয়ে লুটপাট করত। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, শামীম ২৫-৩০টি অটোরিকশা ও সিএনজির মালিক। তার নামে অস্ত্র, মাদক ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে নিজেকে আমিনুল হক নামে পুলিশের এসআই (উপ-পরিদর্শক) পরিচয় দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র, নকল আগ্নেয়াস্ত্র, নকল আইডি কার্ড, ইউনিফর্ম, ওয়াকি টকি সেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করতো। সাভার এলাকায় সক্রিয় ডাকাত চক্রের পাশাপাশি ও মাদকের হাব নিয়ন্ত্রণ করতো। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, সে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া পুলিশ কর্মকর্তা সেজে চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা ও বানোয়াট ভাবে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করতো। শামীমসহ গ্রেপ্তার সবার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। শামীম পুলিশ পরিচয়ে কতোদিন ধরে ডাকাতি করে আসছিল জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ৩/৪ বছর ধরে সে ডাকাতির দল পরিচালনা করছে। সে নিজেকে এসআই পরিচয়ে ডাকাতি করছে দুই বছর। এর মধ্যে সে ৮/৯টি ডাকাতি করেছে মর্মে তথ্য মিলেছে। নিজের এলাকা রাজশাহীতে সে জমি-জমা গড়েছে। সাভারে গ্যারেজ আছে। সেখানে ৩০টি সিএনজি আছে। এর আগে শামীম প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি ও পুলিশের ইউনিফর্ম সংগ্রহ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৪ সিও বলেন, সুনির্দিষ্ট পরিচয় ছাড়া পুলিশের পোষাক বিক্রির সুযোগ নেই। এরপরেও সে কোনো ফাঁকে পুলিশের পোষাক সংগ্রহ করেছে। এসআই পরিচয়ে পুলিশের পোষাক পড়ে ডাকাতির ঘটনায় শামীম পুলিশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। পুলিশের পোষাক সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনী বা অন্য কারো যোগসাজশ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।