October 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, November 8th, 2021, 2:03 am

পূর্ণাঙ্গ রায়ের আগেই যেন ফাঁসি কার্যকর করা না হয়: প্রধান বিচারপতি

ফাইল ছবি

পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে ফাঁসি যাতে কার্যকর না করা হয়, সে জন্য আইজি প্রিজনসের সাথে অ্যাটর্নি জেনারেলকে কথা বলতে বলেছেন আপিল বিভাগ।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ রবিবার এ অভিমত দেন।

আপিল বিভাগের রায়ের পর এক আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, অথচ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি-বিষয়টি আপিল বিভাগের নজরে আনার পর আপিল বিভাগ এ কথা বলেন।

রবিবার সকালে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন একটি মামলা মেনশন করার কথা বলেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হ্যাঙ্গিংয়ের (ফাঁসি) মামলা নিয়ে কত সমালোচনা হচ্ছে। ২০০৬ সালের মামলা শুনতে লিস্টে নিয়ে এসেছি। ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালের মামলাগুলোর পর ২০১৫ সালেরগুলো প্রায় শেষ করেছিলাম। এখন দেখা যায়, ২০১৩ সালের কিছু বাকি রয়েছে।’

একপর্যায়ে আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আসামিকে ফাঁসি দেয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে। অ্যাডভান্স অর্ডারের কারণে তাকে ফাঁসি দিতে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়নি। রিভিউ আবেদন করা হবে, সে পর্যন্ত ফাঁসি যাতে না দেয়া হয়। আদালতের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ তিন আসামিকে যাবজ্জীবন ও একজনের ফাঁসি বহাল রাখা হয়েছিল জানিয়ে হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, ১৮ আগস্ট ওই রায় দেয়া হয়।

আদালত বলেন, আবেদন করেছেন? তখন আইনজীবী বলেন, ‘ওকালতনামা পাইনি। ডিসির মাধ্যমে এখন ওকালতনামা পেতে ১০ দিন লাগে। অ্যাডভান্স অর্ডারের জন্য আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়েছে। এখনো রায়ে সই হয়নি।’ বেঞ্চের একজন বিচারপতি বলেন, অ্যাডভান্স অর্ডার দেয়া হয়েছে যাঁদের মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন হয়েছে, তাদের নরমাল সেলে দেয়ার জন্য। ওই রায় (আপিল বিভাগ) এখনো স্বাক্ষর হয়নি।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, ফাঁসির জন্য আদালত অ্যাডভান্স অর্ডার পাঠাননি। হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, অথচ পুরো অর্ডার চলে গেছে। কুষ্টিয়ার বিচারিক আদালতে গেছে। সেখান থেকে দণ্ড কার্যকরের জন্য কাশিমপুর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, পুরো রায় পাওয়ার আগে তো হবে (দণ্ড কার্যকর) না।

পরে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি আইজি প্রিজনসকে বলবেন পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার আগে যাতে দণ্ড কার্যকর করা না হয়।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদন দিতে বলেন প্রধান বিচারপতি।

এই পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, জেনারেলি একটি কথা বলতে পারেন আইজি প্রিজনসকে রায় সবার চূড়ান্ত স্বাক্ষরের আগে পূর্ণাঙ্গ নয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আইজি প্রিজনস ফোকাল পয়েন্ট। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘সচিবকে বলছি, উনাকেও বলে দেব।’

পরে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে এক শিশুকে (১৩) ধর্ষণ-হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামি শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকর আপাতত স্থগিত রাখতে বলেন আপিল বিভাগ। পুলিশের আইজি ও কারা কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। একইসাথে আসামি শুকুর আলীর আইনজীবীকে প্রক্রিয়া মেনে রিভিউ আবেদন করতে বলেছেন আদালত।

পরে আইনজীবী হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি বহাল রাখেন। এ মামলায় অপর তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগের রায়ের অগ্রিম অর্ডার পেয়ে কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন পাঠানো হয়। রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন রিজেক্ট করেন।

হেলার উদ্দিন আরও বলেন, ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগের কথা আমাকে জানানো হয়। তখন আমি কারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় ও রিভিউ আবেদন দায়ের করার কথা বলি। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে তো ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে না। এরপর রিভিউ আবেদনের সুযোগও আসামিকে দিতে হবে। আমি আজ আপিল বিভাগে এসব কথা বলেছি। আপিল বিভাগ শুকুর আলীর ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখতে বলেছেন।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগরে ওই শিশুকে ধর্ষণ-হত্যার অভিযোগে আসামি শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। তিন আসামি নুরুদ্দিন সেন্টু, আজানুর রহমান ও মামুন হোসেনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন দণ্ড দেন। এছাড়া তাদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ রায় দেন।

জানা যায়, ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ রাতে দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের শিশু প্রতিবেশির বাড়িতে টেলিভিশন দেখে ফেরার পথে আসামিরা তাকে অপহরণ করে এবং একটি তামাক খেতে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে। পরদিন শিশুটির বাবা আব্দুল মালেক ঝনু বাদী হয়ে পাঁচ জনকে আসামি করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলার বিচার শেষে ২০০৯ সালের ০৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আকবর হোসেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার লালনগর গ্রামের খয়ের আলীর ছেলে শুকুর আলী, আব্দুল গনির ছেলে কামু ওরফে কামরুল, পিজাব উদ্দিনের ছেলে নুরুদ্দিন সেন্টু, আবু তালেবের ছেলে আজানুর রহমান ও সিরাজুল প্রামাণিকের ছেলে মামুন হোসেন। পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য নথি (ডেথ রেফারেন্স) হাইকোর্টে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। এর মধ্যে কামরুল মারা যান। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর আসামিরা আপিল করেন।

—ইউএনবি