July 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 21st, 2023, 3:02 pm

প্যানেল মেয়র শাওনের নারী কেলেঙ্কারী-স্ত্রীর মামলায় পলাতক

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার:

তানভীর আহমদ শাওন, কুলাউড়া পৌরসভার একাধিকবারের পৌর কাউন্সিলর তিনি। শহরের আশি ভাগ ডিসের ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করেন তিনি একাই। বিবাহিত জীবনে স্ত্রী ইয়াছমিন আর ২ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে থাকেন শহরের মাগুরা আবাসিক এলাকায়। গত পৌর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরে হয়েছেন প্যানেল মেয়র।

শাওন তাঁর বাসায় ক্যাবল নেটওয়ার্ক এর অফিস স্থাপন করে একের পর এক মেয়ে কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে পড়েন ম্যালা দিন থেকে। স্ত্রী ইয়াছমিন এসব টের পেলে সংসারে শুরু হয় টানাপোড়ন। নিরাপদে পরকিয়া করতে সন্তানদের পার্শবর্তী উপজেলা কমলগঞ্জের শমশেরনগর বিএএফ শাহিন স্কুলে ভর্তি করান। এয়ারপোর্ট রোডে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে স্ত্রী ইয়াছমিন সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন এবং মাঝে মধ্যে সন্তানদের নিয়ে স্বামী শাওনের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। বাসা পুরো খালি থাকার সুবাধে শাওন তাঁর বাসায় ক্যাবল নেটওয়ার্ক অফিসের সহকারী ছায়েরা আক্তারের সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়। স্ত্রী ইয়াছমিন এসব জেনে বাসায় আসলে তাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয় শাওন।

১৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার যৌতুকের দাবিতে শাওনের স্ত্রী ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরী (৪৪) তার ওপর নির্যাতনকারী স্বামী তানভীর আহমদ শাওনের বিরুদ্ধে কুলাউড়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

মামলা দায়েরের পর থেকে প্যানেল মেয়র তানভীর আহমদ শাওন পলাতক রয়েছেন।

এছাড়া এই মামলায় আসামী করা হয়েছে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার চক্রবানী গ্রামের বাসিন্দা মৃত ময়ুর আলী মেয়ে ও তানভীর আহমদের ২য় স্ত্রী ছায়েরা আক্তার (৩৮) ও উত্তর মাগুরা এলাকার বাসিন্দা মৃত তজমুল আলীর ছেলে তোফায়েল আহমদ (৪৮) কে। তানভীর আহমদ শাওন (৫০) পৌরসভার উত্তর মাগুরা এলাকার বাসিন্দা মৃত খলিল উদ্দিন আহমদের ছেলে। তিনি কুলাউড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বর্তমান প্যানেল মেয়র।

থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালের ২৬ আগস্ট কুলাউড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তানভীর আহমদ শাওনের সাথে বিয়ে হয় হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর মেয়ে ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরীর। বিয়ের উপঢৌকন হিসেবে তানভীর শাওনকে স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্রসহ কয়েক লক্ষাধিক টাকার মালামাল দেওয়া হয় ইয়াছমিন সুলতানার পরিবারের পক্ষ থেকে। বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন খুবই ভালো চলতে থাকে।

তাদের সংসার জীবনে ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তান রয়েছে। ইয়াছমিন সুলতানার দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই দক্ষিণ আফ্রিকা থাকেন এবং অপর ভাই আশা এনজিও সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বিয়ের পর তানভীর আহমদ ইয়াছমিনকে নিয়ে তাঁর শ^শুরের ঘরে থাকতো।

ঘর সংসার করার একপর্যায়ে তানভীর ইয়াছমিনকে বলে তাঁর ভাইদের কাছ থেকে টাকা এনে ভবনের ৩য় তলা পাকা বিল্ডিং নির্মান করলে শাওন বিল্ডিং এর ২য় তলা লিখে দিবে ইয়াছমিনের নামে।

পরবর্তীতে ইয়াছমিন তার ভাইদের কাছ থেকে ও তাঁর বিবাহের ৪০ (চল্লিশ) ভরি স্বর্ণালংকার বিক্রি করে বিভিন্ন সময়ে ৬০ লক্ষ টাকা এনে তানভীর আহমদকে দিলে সে ৩য় তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং নির্মাণ করে। বিল্ডিং নির্মাণ করার পর সে কথামত তাঁর স্ত্রী ইয়াছমিনকে বিল্ডিং এর ২য় তলা লিখে দেয় নাই। তখন ২য় তলা ইয়াছমিনের নামে রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার কথা বললে কাউন্সিলর শাওন তাকে মারপিটসহ নির্যাতন করতে থাকে। ইয়াছমিনের সন্তানরা শমশেরনগর বিএএফ শাহিন স্কুলে লেখাপড়া করে। যে কারণে তানভীর আহমদ শমশেরনগর এয়ারপোর্ট রোডে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে স্ত্রী ইয়াছমিন সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন এবং মাঝে মধ্যে সন্তানদের নিয়ে স্বামী শাওনের বাসায় আসা যাওয়া করতেন।

সেই সুযোগে ইয়াছমিনের স্বামী শাওন তাঁর বাসায় ক্যাবল নেটওয়ার্ক অফিসের সহকারী ছায়েরা আক্তারের সাথে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়।

ইয়াছমিন এই বিষয়ে প্রতিবাদ করলে শাওন তার সাথে খারাপ আচরণ করে এবং তার সাথে ঘর সংসার করতে হলে তার প্রবাসী ভাইদের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে হবে।

তখন ইয়াছমিন তার স্বামী শাওনকে যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে শাওন তাকে জানায় প্রয়োজনে ছায়েরা আক্তারকে বিয়ে করে যৌতুকের দাবি পূরণ করবে। তখন ইয়াছমিন স্বামী শাওনের যৌতুকের দাবি পূরণ করতে না পারায় সে তাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন শুরু করে।

১৩ আগস্ট রোববার রাত সাড়ে নয়টায় ইয়াছমিন তার সন্তানদের নিয়ে স্বামী শাওনের বাসায় গেলে শাওন, দ্বিতীয় স্ত্রী ছায়েরা ও সহযোগী তোফায়েল আহমদ তাকে বাসায় প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। তখন ইয়াছমিন তাদের বাঁধা নিষেধ করার কারণ জিজ্ঞেস করলে স্বামী শাওন ব্যবসা করার অজুহাত দেখিয়ে তার কাছ থেকে যৌতুক বাবদ ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন এবং ইয়াছমিনের প্রবাসী ভাইদের কাছে টাকা আনার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

তখন ইয়াছমিন স্বামী শাওনকে যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে শাওন তার ১ম স্ত্রী ইয়াছমিনের চুলের মুঠি ধরে তাকে এলোপাতাড়ী মারপিট শুরু করে। একপর্যায়ে শাওন তার হাতে থাকা কাঠের লাকড়ি দিয়ে স্ত্রী ইয়াছমিনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে জখম করে।

এসময় শাওনের দ্বিতীয় স্ত্রী ছায়েরা আক্তার ও তোফায়েলও ইয়াছমিনকে মারধর করে। এ ঘটনার পর থেকে ইয়াছমিনের স্বামী শাওন তাকে বসত ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। পরে ১৭ আগস্ট ইয়াছমিনের মাতা আসলে তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করান।

এ বিষয়ে মামলার বাদী ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরী বলেন, আমার অনুমতি ছাড়া শাওন দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। এক মাসপূর্বে আমার বাসার তালা ভেঙ্গে তিনি একজন মহিলাকে নিয়ে বাসায় জোরপূর্বক প্রবেশ করেন। এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণমান্যব্যক্তিদের সহায়তায় বাসায় প্রবেশ করি। তিনি আরো বলেন, আমার অজান্তেই তিনি ওই নারীর সাথে দীর্ঘদিন পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত তানভীর আহমদ শাওনের মোবাইলে যোগাযোগ করলে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

কুলাউড়া থানার ওসি মোঃ আব্দুছ ছালেক বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০৩ এর ১১ গ ধারায় যৌতুক আইনে ও সহায়তায় মারপিটের অপরাধে মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।