নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্যে বিদেশী শ্রমবাজারে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। কারণ দেদাসে বাড়ছে বিএমইটিতে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যুতে জাল-জালিয়াতির ঘটনা। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই বিএমটির একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে অবাধে গ্রুপ ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু হচ্ছে। এক এজেন্সির চাহিদাপত্রের কর্মী অন্য এজেন্সির মাধ্যমে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশ যাচ্ছে। আর অভিযোগ উঠছে ওসব গ্রুপ ভিসার কর্মী বিদেশ গিয়ে অনেকেই কাজ পাচ্ছে না। তবে নতুন বছরে বিএমইটিতে জাল-জালিয়াতি চক্রের অপতৎপরতা রোধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। অতিসম্প্রতি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিএমইটিতে অভিযানকালে জাল-জালিয়াতির সাথে জড়িত অভিযুক্ত দু’টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা মহামারির পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জনশক্তি রপ্তানি বাড়ছে। ২০২১ সালে বিভিন্ন দেশে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২০৯ জন কর্মী চাকরি লাভ করেছে। সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে চাকরি লাভ করেছে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৯৮৬ জন নারী পুরুষ কর্মী। আর চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনেই প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা ৯২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছে। দৈনিক হিসেবে যার পরিমাণ ৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার। গত মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। দৈনিক হিসেবে যার পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সি জাল-জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে তাদের সাথে বিএমইটির কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত। প্রতারক সিন্ডিকেট চক্র প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রুপ ভিসার কর্মী পাঠিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দিন দিন চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা এক এজেন্সির চাহিদাপত্রের কর্মীর বহির্গমন ছাড়পত্রের জন্য অন্য এজেন্সির মাধ্যমে ফাইল উপস্থাপন করে সহজেই স্মার্টকার্ড হাতিয়ে নিচ্ছে। আর ওই জালিয়াত চক্রের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে অনেক নিরীহ যুবকই কাজের নিশ্চিয়তা এবং আকামাও পাচ্ছে না। বরং প্রতারণার শিকার ওসব কর্মী দেশের বাড়ির আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খাবার কিনে খাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিএমইটিতে বহু অভিযোগ দাখিল করার পরেও সৃষ্ট সঙ্কট নিরসন হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, জালিয়াতি করে সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী কর্মীদের ভুয়া বহির্গমন ছাড়পত্র (স্মার্ট কার্ড) দিয়েছে সিন্ডিকেট। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতি ছাড়াই অর্থাৎ চাকরি না দিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি ও দালালরা ভুয়া স্মার্ট কার্ডে কর্মীদের বিদেশ পাঠিয়েছে। ইতঃপূর্বে বিএমইটির ৯ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ৬ রিক্রুটিং এজেন্সি জালিয়াতিতে জড়িত বলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। ওই প্রেক্ষিতে ইমিগ্রেশন বিভাগকে সম্প্রতি বিদেশ গমনেচ্ছু প্রত্যেক কর্মীর ভিসাসহ কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন ইমিগ্রেশন পরিচালকের রুমে শত শত বহির্গমন ফাইলের স্তূপ জমছে। ফলে বহির্গমন ছাড়পত্র ইস্যু অনেকটা ধীরগতিতে হচ্ছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিএমইটির ইমিগ্রেশনের পরিচালক কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী জানান, এক শ্রেণির অসাধু রিক্রুটিং এজেন্সির অনিয়ম জাল জালিয়াতির ঘটনায় বিএমইটি দিশেহারা। বিএমইটির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরও যদি জাল-জালিয়াতি চক্রের সাথে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিএমইটি থেকে প্রতারক সিন্ডিকেট চক্র নির্মূলের লক্ষ্যে নতুন বছরে সুদ্ধি অভিযান শুরু করা হয়েছে। কোনো দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি