November 4, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, April 4th, 2023, 8:35 pm

প্রথম দিন শেষে বোলিংয়ে সাফল্যে, ব্যাটিংয়ে ধাক্কা

অনলাইন ডেস্ক :

দিনের খেলা তখন শেষ হওয়ার অপেক্ষা। অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনের বল একটু টার্ন করে অনেকটা লাফিয়ে ছোবল দিল ব্যাটের কানায়। সহজ ক্যাচ। হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন তামিম ইকবাল। দিনের শেষ বলে আউট! তামিমের আগে বাজে শটে ফিরে গেছেন নাজমুল হোসেন শান্তও। আয়ারল্যান্ডকে প্রথম দিনেই অলআউট করার স্বস্তি তাই কিছুটা উবে গেল শেষ বিকেলের ব্যাটিংয়ে। মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে টস জিতে ব্যাটিংয়ে আয়ারল্যান্ড অলআউট ২০৮ রানে। প্রায় চার বছর বিরতির পর টেস্ট খেলতে নেমেছে তারা ৬ জন অভিষিক্ত ক্রিকেটার নিয়ে। দলের বেশির ভাগ সদস্য লাল বলের ক্রিকেটই খেলেন না দীর্ঘদিন ধরে। তাদের ব্যাটিং ব্যর্থতা তাই অনুমিতই। শেষ বেলায় ১০ ওভারের ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ৩৪। ম্যাচের শুরুটায় ছিল পেস আগুনের ইঙ্গিত। ৯ বছর পর দেশের মাঠে তিন পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। উইকেটে ছিল সবুজের ছোঁয়া। স্টাম্পের পেছনে কিপারের পাশে অর্ধচন্দ্র হয়ে দাঁড়ানো চার স্লিপ ও একটি ওয়াইড স্লিপ। মনে হচ্ছিল যেন, পার্থ বা ডারবানে ম্যাচ! তবে গর্জন যতটা ছিল, ততটা বর্ষণ হয়নি। সেই স্পিনাররাই বোলিং করেছেন বেশির ভাগ ওভার, স্পিনেই মিলেছে বেশি সাফল্য। ৫ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল তাইজুল ইসলাম। টেস্টে এই স্বাদ পেলেন তিনি একাদশবার। মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার ২ উইকেট। তবে দুই স্পিনারের সাফল্যের দিনে নজর কাড়া ব্যাপার ছিল আরেক স্পিনারের বোলিং না করাও। ৬৫ ওভারের পর প্রথম বোলিংয়ে আসেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায় হাত ঘোরান ¯্রফে ৩ ওভার! দিনের শুরুর দিকে দুই উইকেট নিয়ে স্পিনারদের সাফল্যের মঞ্চ গড়ে দেন অবশ্য পেসাররাই। প্রথম সাফল্য ধরা দেয় দ্রুতই। ম্যাচের পঞ্চম ওভারে শরিফুল ইসলাম ফিরিয়ে দেন মারি কমিন্সকে। তার বাবা জুনিয়র কমিন্স টেস্ট অভিষেকে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৯৯৪ সালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ৩০ ও ৪৫। মারে কমিন্স প্রথম টেস্ট ইনিংসে ফিরলেন ৫ রানেই। আরেক প্রান্তে সৈয়দ খালেদ আহমেদ শুরুটা খুব ভালো করতে পারেননি। তার জায়গায় বোলিংয়ে এসে উইকেটের দেখা পান ইবাদত হোসেন চৌধুরি। বাড়তি লাফানো বলে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন জেমস ম্যাককলাম (১০)। তিন পেসার থাকলেও আক্রমণে স্পিন চলে আসে একাদশ ওভারেই। দুই প্রান্তেই স্পিন শুরু হয় চতুর্দশ ওভার থেকে। শুরুতে একটু সময় নিয়ে হেরি টেক্টর আভাস দেন পাল্টা আক্রমণের। তাইজুলকে চার মেরে তিনি প্রথম টেস্ট রানের স্বাদ ১৫ বল খেলে। পরের ওভারেই মিরাজকে ছক্কায় ওড়ান লং অন দিয়ে। এরপরই অবশ্য তিনি আবার নিজেকে গুটিয়ে নেন বাংলাদেশের আঁটসাঁট বোলিংয়ে। আরেকপ্রান্তে অ্যান্ড্রু বালবার্নিও ব্যাট করছিলেন সাবধানতায়। তবে হুট করেই মনোযোগ হারানোর খেসারত দেন তিনি। তাইজুলকে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান আইরিশ অধিনায়ক (৪৭ বলে ১৬)। ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ড ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি পায় এরপরই। টেক্টর ও কার্টিস ক্যাম্পার চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ৭৪ রান। টেস্ট অভিষেকের আগে ক্যাম্পারের একমাত্র প্রথম শ্রেণির ম্যাচটি ছিল ২০২১ সালে আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশেই। টেক্টরের ক্যারিয়ারের ১০ প্রথম শ্রেণির ম্যাচের সবশেষটিও ছিল সেই ম্যাচটিই। তবে লাল বলে ম্যাচ খেলার ঘাটতি ততটা বোঝা যায়নি দুজনের ব্যাটিংয়ে। উইকেট আগলে রাখার পাশাপাশি বাজে বলকে বাউন্ডারিতে পাঠাতে ভুল করেননি দুজন। দুজনের জুটিতে একশ পেরিয়ে আরেকটু দূর এগিয়ে যায় দল। টেক্টর ফিফটি স্পর্শ করেন ৮০ বলে। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট ইনিংসে ফিফটি করা প্রথম আইরিশ ব্যাটসম্যান তিনি। তবে মাইলফলকের পর আর এগোতে পারেনি। টানা ১১ বলে রান না পেয়ে মনোযোগও হয়তো নড়ে গিয়েছিল তার। মিরাজের ফ্লাইট ও টার্ন একদমই ধরতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান ৫০ রানেই।দলকে হতাশ করেন এরপর পিটার মুর। জিম্বাবুয়ের হয়ে ৮টি টেস্ট খেলে আয়ারল্যান্ডের হয়ে খেলতে নামে তিনি। নিজের সবশেষ টেস্টে এই মাঠেই ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের হয়ে। টেস্টের আগের দিন অধিনায়ক বালবার্নিও বলেছেন, মুরের ওপর অনেক ভরসা তাদের। কিন্তু ১ রানেই তাইজুলকে উইকেট উপহার দেন আলতো শটে ক্যাচ তুলে দিয়ে। এই দুই উইকেটের রেশ থাকতেই আরেকটি বড় ধাক্কা আয়ারল্যান্ডের জন্য। তাইজুলের আর্ম বলে শেষ হয় ক্যাম্পারের লড়াই। ৭৩ বল খেলে তিনি থামেন ৩৭ রান করে। ১২৪ রানে ৬ উইকেট হারানো আয়ারল্যান্ডের সামনে তখন দেড়শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা। তবে লোয়ার মিডল অর্ডারে লর্কান টাকারের সঙ্গে কিছুটা লড়াই করেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও মার্ক অ্যাডায়ার। সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে ৩৫ রান, অষ্টম জুটিতে ৪০। ১৯ রানে ম্যাকব্রাইন বিদায় নেন ইবাদতের শর্ট বলে। টাকারের প্রতিরোধ শেষ হয় ৭৪ বলে ৩৭ করে তাইজুলের বলে স্টাম্পড হয়ে। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রান করা অ্যাডায়ারকে ফিরিয়ে তাইজুল পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। পরের ওভারেই হিউমকে বোল্ড করে ইনিংসের ইতি টানেন মিরাজ। বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে উইকেট হারায় প্রথম ওভারেই। অ্যাডায়ারের বাড়তি লাফানো বলটি ছেড়ে দেওয়া যেত অনায়াসেই, কিন্তু শান্ত টেনে আনেন স্টাম্পে। ২২ টেস্টের ক্যারিয়ারে সপ্তমবার শূন্য রানে ফিরলেন তিনি। তামিম অবশ্য বেশ আস্থায়ই খেলছিলেন। পেসারদের সামাল দেন তিনি, ম্যাকব্রাইনের অফ স্পিন আক্রমণে আসার পর ছক্কা মারেন ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে। মুমিনুলও শুরুটা করেন সাবলিল। কিন্তু দিনের শেষ বলে ওই বিপত্তি। বাংলাদেশের দিনটাও তাই শেষ হয় অস্বস্তি নিয়ে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৭৭.২ ওভারে ২১৪ (ম্যাককলাম ১৫, কমিন্স ৫, বালবার্নি ১৬, টেক্টর ৫০, ক্যাম্পার ৩৪, মুর ১, টাকার ৩৭, ম্যাকব্রাইন ১৯, অ্যাডায়ার ৩২, হিউম ২, হোয়াইট ০*; শরিফুল ৮-১-২২-১, খালেদ ৯-১-২৯-০, ইবাদত ১২-০-৫৪-২, তাইজুল ২৮-১০-৫৮-৫, মিরাজ ১৭.২-৪-৪৩-২, সাকিব ৩-১-৮-০)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০ ওভারে ৩৪/২ (তামিম ২১, শান্ত ০, মুমিনুল ১২*; অ্যাডায়ার ৪-২-৩-১, হিউম ৩-০-১৮-০, ম্যাকব্রাইন ৩-১-১৩-১)।