জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
কয়েক বছর আগেও সিলেটে বেত শিল্পের জমজমাট ব্যবসা ছিলো। কিন্তু এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্প এখন হুমকির মুখে। দেশের বেতের আসবাপত্রের চাহিদার সিংহভাগ যোগান দিতো সিলেটের বেত শিল্প। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করে এসব বেত সামগ্রী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। বর্তমানে তাও কমে গেছে। শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এক সময় সিলেটে পাহাড় টিলায় প্রচুর বেত পাওয়া যেতো।
যেগুলোর স্থানীয় নাম জালি বেত, গল্লা বেত, অন্না বেত। কিন্তু নির্ভিগ্নে পাহাড় কাটা, বন উজার করায় এখন আর স্থানীয় বেত তেমন পাওয়া যায় না।
এক কথায় বেত বন উজাড় হয়ে গেছে। একই সাথে বেতের কাঁচামালের দাম আগের থেকে আনেক বেশি হয়ে গেছে। তাই খরচের সাথে তালমিলাতে পারছেন না শ্রমিকরা। সবমিলিয়ে এই শিল্প এখন হুমকির মুখে।
মাত্র পাঁচ-ছয় বছর আগেও সিলেটে শতাধিক বেতের আসবাপত্রের দোকান ছিলো। এখন আসবাবপত্রের দোকান যেমন কমেছে, সাথে শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে। এ পেশার সাথে যুক্ত শ্রমিকের এখন দুর্দিন চলছে। শ্রমিকরা আর্থিক সংকটে পড়ে ভিন্ন পেশায় চলে যাচ্ছেন।
বেতের উৎপাদন কমে আসায় বেতের চাহিদা পূরন না হওয়ায় বিদেশ থেকেও বেত আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে দাম বেশি পড়ায় ব্যবসয়ীরা এই শিল্পে লোকসানে পরছেন।
বেতের আসবাবপত্র তৈরির জন্য সিলেট নগরীর ঘাসিটুলায় রয়েছে‘বেতপল্লী’। এক যুগ আগেও দেশের বেত দিয়ে নির্মিত পণ্যের বেশিরভাগই উৎপাদিত হতো এ পল্লী থেকে। তবে বর্তমানের এখানকার অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে। উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন বেতের কারিগররা। ঘাসিটুলা এলাকায় ঐতিহ্যবাহী বেত-বুনন শিল্পের বেশ কয়েকটি দোকান এখনও টিকে আছে। ঘাসিটুলায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে এই শিল্পির সাথে জরিতরা বসবাস করেন। পূর্বপুরুষের দেখানো শিল্প অনেকেই আকরে ধরে আছেন। নিজ বাড়িতেই বেতের তৈরি বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে তারা বাজারে বিক্রি করেন।
বেতের তৈরি জিনিসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বেতের তৈরী ম্যাগাজিন র্যাক, টেলিফোন চেয়ার, সোফা সেট, বেড সেট, স্যুজ রেক, ট্রলি, টেবিল, শেলফ, রিডিং টেবিল, রকিং চেয়ার, টেলিফোন টেবিল, ফোল্ডিং চেয়ার, আর্ম চেয়ার, রাউন্ড কফি টেবিল, কর্ণার সোফা এন্ড ইজি চেয়ার, ফুল ইজি চেয়ার, ডাইনিং সেট, টি ট্রলি, গার্ডেন চেয়ার, পেপার বাস্কেট, বুক শেলফ, ম্যাগাজিন বাস্কেট, ডাইনিং চেয়ার,বাঙ্গি টেবিল, কোর্ট হ্যাঙ্গার, মোড়া, বেবী কট, বোতল র্যাক ও প্ল্যান্টার।
বেশ করেকটি দোকনে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তার জানান, বেতে জিনিস দেখতে ও ব্যবহার করতে অনেক আরাম। ঘরে বেতের জিনিস থাকলে ঘরের সুন্দর্য বেড়েযায় কয়েকগুন। বেতের জিনেসে চাহিদা চাহিদা থাকলেও, আগের মতো এখন আর পাওয়া যায় না। তার সাথে দাম অনেক বেশি। এছাড়া প্লাস্টিকের অনেক জিনিসপত্র বের হয়েছে যার দাম অনেক কম এবং সহজে পাওয়া যায়। এই বেতের জিনিস এখন বিলামবহুল পণ্যে পরিণত হয়েছে।
শিল্পের সাথে জরিতরা বলেন, এখনো বাজারে বেতের তৈরি আসবাবপত্রের চাহিদা রয়েছে। সিলেটে বর্তমানে কয়েকটি দোকানে প্রায় ৫০ প্রকারের বেতের পণ্য তৈরী হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ব্যবসার ধরণ এখন অনেক পাল্টেগেছে, অনেকেই এখন অনলাইনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি কারে থাকেন। তবে বেত-বুননশিল্পীরা অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতায় না পাওয়ায় এই শিল্প পিছিয়ে পড়ছে।
এই ব্যবসার সাথে জড়িতরা মনে করছেন, সিলেটে আবার বেত উৎপাদন করলে এই শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এতে বেতের তৈরি আসবাবপত্র রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি