November 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, January 14th, 2024, 9:55 pm

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি অর্থনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিপুল পরিমাণ ডলার বিক্রি অর্থনৈতিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গত ৩০ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলিতে মোট ২৭.৮২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং-এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিপুল সংখ্যক ডলার ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা একটি ভুল নীতি। এটি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তীব্র পতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে, বলেন তিনি।

তার মতে, এই নীতিটি তাদের উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ দুই বছরেরও কম সময়ে টাকার মূল্য প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে জুলাই-ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকগুলিতে ৬.৭ বিলিয়ন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩.৫ বিলিয়ন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭.৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মৌলিক সংস্কার ছাড়াই রিজার্ভ থেকে ক্রমাগত ডলার বিক্রি করলেও মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

ডলার বিক্রয় আর্থিক খাতে তারল্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সমপরিমাণ অর্থ বাজার থেকে তুলে নিয়েছে। তাদের যুক্তি ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি নির্ধারিত একক বিনিময় হার গ্রহণ করত এবং ডলার বিক্রির পরিবর্তে অর্থ পাঁচার রোধ এবং ডলারের প্রবাহ বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিত, তাহলে বিনিময় হারের অস্থিরতা এবং ডলার সংকট কেটে যেত।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলির জন্য আমদানি অর্থপ্রদান এবং লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খোলার চিঠিগুলি নিষ্পত্তি করা কঠিন হয়ে গিয়েছে। আইএমএফ নির্দেশিকা অনুসারে ৮ জানুয়ারীতে রিজার্ভ ২০.৩৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। যা গত বছর জুনে ছিলো ২৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুনে রিজার্ভ ছিল ৪১.৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ছিলো ৪৬.২ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২১ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৭.৭ বিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছিল। এ সময় রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিলো ২৪.৭ বিলিয়ন ডলার। চলমান ডলার সংকটে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে ব্যবসায়িক খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্ধারিত বর্তমান আন্তঃব্যাংক ডলারের হার ১১০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা মেটাতে সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা হারে রেমিটেন্স সংগ্রহ করছে। ২০২২ সালের জুনে এই হার ছিল ৯৩ টাকা।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি আগে বাজার ভিত্তিক বিনিময় হার গ্রহণ করত, তাহলে দেশ হয়তো ডলারের এমন তীব্র সংকট এড়াতে পারত এবং রিজার্ভ ব্যালেন্সে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি রোধ করতে পারত। অর্থনীতিবিদদের মতে, ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রমাগত আমদানি বিধিনিষেধ আরোপ কোন টেকসই সমাধান নয় এবং এটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের মূল্য সম্পূর্ণভাবে বাজার শক্তির উপর ছেড়ে দেওয়ার এবং বিনিময় হার ব্যবস্থায় যে কোনো অসঙ্গতি বা ত্রুটির সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্ধিত ডলার বিক্রি ব্যাংকগুলি থেকে স্থানীয় মুদ্রার সমপরিমাণ শুষে নিয়েছে, যা ব্যাংকিং সেক্টরে তারল্য অবস্থার উপর প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে নভেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯.৯০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয়ের মন্থর প্রবৃদ্ধির কারণে বাজারে ডলারের সংকট আরও জটিল হয়েছে।

২০২২ সালের এপ্রিল থেকে, সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি রোধ করার জন্য একাধিক উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসেন বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের প্রবাহ ও বহিঃপ্রবাহের মধ্যে ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে, কিন্তু রিজার্ভের ভারসাম্য বজায় রাখতে এই পদ্ধতি অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।

রিজার্ভের ভারসাম্য ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলেও আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায়নি। সমস্যাগুলিকে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একক, বাস্তবসম্মত এবং বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন তিনি। তিনি বলেন, বিদেশী ঋণ সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কোনো কাজে আসবে না।