October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, March 21st, 2023, 8:24 pm

বাগেরহাটে ৫ দিনব্যাপী খান জাহানের বসতভিটায় পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের প্রদর্শনী

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থাপনা বিখ্যাত মুসলিম শাসক উলুঘ খান জাহান আলী (রহ.) এর বসতভিটা খননে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা গ্রামে খান জাহান আলী (রহ.)-এর বসতভিটায় পাঁচ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান।

এসময় বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া তাসনিম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন, সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস, ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আখতারুজ্জামান বাচ্চু, বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মোহাম্মাদ যায়েদ, আল আমীন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ফিল্ড অফিসার মোসা. আইরীন পারভীন, মো. হাসানুজ্জামানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই প্রদর্শনীর খবরে স্থানীয় দর্শনার্থী এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দলে দলে এসব মূল্যবান প্রত্নতত্ত্ব দেখতে আসছেন।

স্থানীয় বাগমাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৌসুমি আক্তার বলেন, খানজাহান আলী (রহ.) ও ষাটগম্বুজ মসজিদের বিষয়ে বইতে পড়েছি। আজ এখানে এসে স্বচক্ষে বসতভিটা দেখলাম। বসতভিটা খননে প্রাপ্ত খানজাহান আমলের বিভিন্ন তৈজসপত্র, পাথর ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য দেখে আমাদের খুব ভাল লাগছে।

ষাটগম্বুজ খানজাহানিয়া-জব্বারিয়া আদর্শ আলিম মাদরাসার সহকারি শিক্ষক ওজায়ের সরকার বলেন, প্রত্নবস্তুর প্রদর্শনী দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে এখানে এসেছি। অনেক পুরোনো দ্রব্য দেখলাম। খানজাহানের এই বসতভিটার সঙ্গে বাগেরহাট জেলা প্রতিষ্ঠার অনেক ইতিহাস জড়িত রয়েছে।

বাগেরহাটকে জানতে হলে খানজাহানকে জানার আহ্বান জানান এই শিক্ষক।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, খান জাহানের বসতভিটা হিসেবে সংরক্ষিত এই প্রত্নস্থলটিতে বেশ কয়েকবার খনন করা হয়েছে। এবারের খননে প্রাচীন দেয়াল, মেঝে, পয়োঃনিষ্কাশন প্রণালির নালা, পোড়ামাটির তৈরি পাইপসহ বিভিন্ন স্থাপত্য নিদর্শন প্রদীপদানি, পোড়ামাটির পুঁতি, লাল, কালো ও ধূসর বর্ণের মৃৎমাত্র, প্লেট, গ্লাস, পিরিচ, নল, জালের গুটি, টাইলস, অলংকৃত ইটসহ বিভিন্ন প্রত্নবস্তু পাওয়া গেছে।

তিনি আরও জানান, এই প্রদর্শনী শেষে প্রত্নবস্তুগুলো বাগেরহাট জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।

পরবর্তীতে এই গবেষণাপত্র প্রকাশেরও ইচ্ছে জানান এই কর্মকর্তা।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, পৃথিবীর প্রাচীন শহরের মধ্যে খলিফাতাবাদ অন্যতম। যা কালের বিবর্তনে বাগেরহাট নাম ধারণ করেছে। বাগেরহাটের ইতিহাস, ঐহিত্য অনেক প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। প্রত্নসম্পদে ভরপুর এই জেলা।

তিনি আরও বলেন, এই জেলাকে পর্যটকদের জন্য আরও বেশি আকর্ষণীয় করতে প্রত্মসম্পদ বিষয়ে গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে।

এ জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর জানায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি খানজাহান আলী (রহ.) এর বসতভিটা খনন শুরু হয়। এই খনন কাজে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের ১০জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। পাশাপশি এই খনন কাজে দক্ষ শ্রমিকরাও অংশ নেয়।

৪০ দিনের এই খননে বিভিন্ন ইমারতের দেয়াল, পাকা মেঝে, প্রাচীন রাস্তার ধ্বংসাবশেষ, ইটের নির্মিত পাকা ড্রেন, বিভিন্ন যুগের ইটের সিলিং, তৈল প্রদীপ, আয়রন নেইল, টাইলস, টেরাকোটা সম্মৃদ্ধ পাত্র, মাটির তৈরি স্প্রিং কলার এবং মাটির তৈরি পানি নির্গমন নল পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে খানজাহান আলী (রহ.) এর নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদসহ ১৭টি স্থাপনাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।

ষাটগম্বুজ মসজিদ থেকে মাত্র ৩০০ মিটার উত্তরে এই বসতভিটাটি রয়েছে। ২০০১ সালে এখানে প্রথমবার প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালনা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

এরপর ২০০৮ থেকে এ পর্যন্ত মোট ১২ বারের খননে ঢিবিটিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন পাওয়া গেছে।

যার মধ্যে সাড়ে ৬০০ বছর আগের উলুঘ খান জাহান (হজরত খানজাহান (রহ.) আমলের নানান স্থাপনা, ইট বিছানো সড়ক, আগে ও পরের বিভিন্ন যুগের স্থাপনা এবং বসতির নিদর্শন রয়েছে।

এখানে পাওয়া স্থাপত্য, মৃৎপাত্র, নানা তৈজস ও উপকরণ থেকে ধারণা করা যায়, সেই সময়ে এখানে বসবাসকারীদের রুচিবোধ উন্নত ছিল।

খান জাহানের বসতভিটা ছাড়াও স্থানটি মধ্যযুগের অন্যতম টাঁকশাল নগরী খলিফাতাবাদ শহরের অংশ হিসেবে পরিচিত।

—-ইউএনবি