October 14, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, January 25th, 2023, 8:27 pm

বাজারে মিলছে না বেশিরভাগ এলপিজি কোম্পানির গ্যাস

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাজারে মিলছে না বেশিরভাগ এলপিজি কোম্পানির গ্যাস। এমন পরিস্থিতিতে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে এলপিজি দামও। আগামীতে পরিস্থিতি আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানির ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার এখন ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে খুচরা বিক্রেতারা বেশি দামে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে এলপি গ্যাস কিনছে। আর গ্রাহকরা চাহিদা মোতাবেক বেশি দাম দিয়েও পাচ্ছে না এলপি গ্যাস। আর যেসব কোম্পানির এলপিজির সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে তা ক্রেতাদের ২০০-৩০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ভোক্তা এবং এলপিজি খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরবরাহ সঙ্কট রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে। বেশির ভাগ এলপিজি কোম্পানির গ্যাসই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। মূলত এলপিজির কাঁচামাল আমদানিতে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে না পারায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আর ঋণপত্র জটিলতা না কমলে পরিস্থিতিতে আরো নাজুক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে এলপিজি পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে দু-একটি কোম্পানির বাইরে কোনো এলপি গ্যাস সিলিন্ডার নেই। অথচ আগে তারা ৬-৭টি কোম্পানির এলপি গ্যাস রাখতো। অনেক বিক্রেতার দোকানেই পড়ে আছে খালি সিলিন্ডার। অপারেটরদের কাছ থেকে সরবরাহ না পাওয়ায় এলপি গ্যাস বিক্রেতাদের ব্যবসা কমে যাচ্ছে। বেশি দাম দিয়েও ব্যবসায়ীরা এলপি গ্যাস দোকানে তুলতে পারছে না। স্বাভাবিক সরবরাহ দেয়া কোম্পানিগুলো এখন সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। এমনকি অগ্রিম টাকা দিয়েও গ্যাস পাওয়ার নিশ্চয়তা মিলছে না। গ্যাসের সংকট জানিয়ে সরবরাহকারীরা পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছে না।
সূত্র জানায়, সারা দেশে প্রায় ৫০ লাখ এলপি গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে। ওসব গ্যাস বাজারজাত করে ২৬টি বেসরকারি কোম্পানি। কিন্তু বেশিরভাগ কোম্পানিই এখন ডলার সংকটে পণ্য আমদানিতে চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না। ফলে বেশিরভাগ কোম্পানিই ব্যবসায়িকভাবে লোকসানে পড়েছে। এরই মধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ কমে গেছে সব কোম্পানির বিপণন। অথচ এলপি গ্যাস ব্যবসায়ীদের দেশের বাজারে ৩২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। প্রতি বছর ১৪ লাখ টনের মতো এলপি গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। পাইপলাইনের গ্যাস সংকটে বাসাবাড়িতে জনপ্রিয় হওয়া এ পণ্য এখন গাড়িতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি শিল্প মালিকরাও বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এলপি গ্যাস ব্যবহার শুরু করেছে।
সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দেশের বাজারে প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের দাম বেঁধে দিচ্ছে। চলতি মাসের জন্য ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম ১ হাজার ২৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে তা ছিল ১ হাজার ২৯৭ টাকা। যদিও প্রতি মাসে কমছে আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের কাঁচামাল প্রোপেন ও বিউটেনের দাম। গত মাসেও পণ্য দুটির টনপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারের মতো দাম কমেছে। বিশ্ববাজারে এলপি গ্যাসের কাঁচামালের দাম পড়তির দিকে এবং পণ্যও পর্যাপ্ত। কিন্তু এলসি জটিলতার কারণে বাংলাদেশী আমদানিকারকরা তা আমদানি করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে অপারেটর থেকে শুরু করে ডিলাররা এলপিজি মজুদ বাড়াচ্ছে।
এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ওরিয়ন গ্যাস লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) প্রকৌশলী অনুপ কুমার সেন জানান, এলসি জটিলতায় সরবরাহ চেইনে সংকট তৈরি হচ্ছে। অনেকের ভলিউম ছোট হয়ে আসছে। ব্যবসা ভালো না হওয়ায় ব্যাংকঋণ পরিশোধে জটিলতায় পড়ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এলপি ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের চিফ অপারেটিং অফিসার (ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং) এমএম জসিম উদ্দিন জানান, বাজারে এলপি গ্যাসের সংকট চলছে। কারণ এলসি খুলতে না পারায় কাঁচামাল আমদানি করা যাচ্ছে না। বসুন্ধরার সেলস ভলিউম ইতোমধ্যে ৪০-৫০ শতাংশ কমে গেছে। এলসি সহযোগিতা না পেলে সামনে এ পরিস্থিতি আরো তীব্র হতে পারে।