October 8, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 9th, 2021, 8:48 pm

বাজার থেকে টাকা তুলতে ছাড়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক বিল

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের ব্যাংকগুলোতে এখন অলস তারল্যের স্তূপ জমেছে। এমন অবস্থায় বাজার থেকে টাকা তুলতে দীর্ঘদিন পর ৭ ও ১৪ দিন মেয়াদী ‘বাংলাদেশ ব্যাংক বিল’ ছাড়া হচ্ছে। দীর্ঘ আড়াই বছর বন্ধ থাকার পর এ বিলের নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তার আগে সর্বশেষ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে নামমাত্র সুদে লেনদেন হয়েছিল। ওইদিন একটি ব্যাংক মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে ৭ দিনের জন্য ১৫০ কোটি টাকা রেখেছিল। তারপর থেকে নিলাম প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এখন বাংলাদেশে ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ওই বিল বিক্রি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নেবে। তার বিপরীতে ব্যাংকগুলো মুনাফা পাবে। তবে বিলের মাধ্যমে কত টাকা তুলে নেয়া হবে এখনও সেটা নির্ধারণ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আর বেসরকারি খাতের ব্যাংকারদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের সুদহার যদি ট্রেজারি বিল ও কল মানির চেয়ে কম হয়, তাহলে তা কোন কাজে দেবে না। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিলে অংশগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলাম অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ওই বিল বিক্রি করে বাজার থেকে অতিরিক্ত টাকা তুলে নেবে। তার বিপরীতে ব্যাংকগুলো মুনাফা পাবে। এর আগে অতিসম্প্রতি চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অতিরিক্ত তারল্য আর্থিক খাতে বুদবুদ তৈরি করলে তা তুলে নেয়া হবে। অতিরিক্ত তারল্যের কারণে মূল্যস্ফীতি বা সম্পদের দাম বেড়ে গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতি গ্রহণে দ্বিধা করবে না।
সূত্র জানায়, করোনা মহামারীতে প্রণোদনার অর্থ বিতরণের পরও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সরকারও
ব্যাংক খাত থেকে ঘোষণা অনুযায়ী ঋণ নিচ্ছে না। ফলে ব্যাংক খাতে অলস তারল্যের স্তূপ তৈরি হয়েছে। গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর ৬২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে। আর একই সময়ে উদ্বৃত্ত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা। অথচ দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকই দেড় বছর আগেও তীব্র তারল্য সঙ্কটে ভুগছিল। নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) ও সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ (এসএলআর) সংরক্ষণেই বেসরকারি ব্যাংকগুলো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল। সেজন্য তারল্যের সংস্থান করতে ব্যাংকগুলো বেশি সুদে অন্য ব্যাংকের আমানত বাগিয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। এখন ব্যাংকগুলোতে এর উল্টো চিত্র বিদ্যমান। বেশিরভাগ ব্যাংকই আমানতের সুদহার কমিয়ে ৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছে। আবার কোন কোন ব্যাংক ৫-৬ শতাংশ সুদে বড় গ্রাহকদের ঋণ দিচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, গত অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। কিন্তু বছরের শুরু থেকেই ঋণের চাহিদা কম থাকায় ওই লক্ষ্য কাটছাঁট করে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে মাত্র ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে। যা নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কম। ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত তারল্যের অর্থ মূলত সরকারি বিল-বন্ড বা কলমানি বাজারে বিনিয়োগ করে। কিন্তু বর্তমানে ট্রেজারি বিলের সুদহার ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ট্রেজারি বিলের মতোই বন্ডেও সুদহারে পতন হয়েছে। ৩ শতাংশে নেমে এসেছে ২ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদহার। অন্যদিকে চাহিদা না থাকায় কলমানি বাজারের সুদহারও ১ শতাংশে নেমেছে। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা অতিরিক্ত টাকা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিদদের মতে, অতিরিক্ত তারল্য ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর। সরকার এখন স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিয়ে ব্যয় নির্বাহ করছে। যে কারণে ব্যাংক থেকে অর্থের জোগান দেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না। বিষয়টি সরকারের দিক থেকে ভালো হলেও বেসরকারি খাতে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে। সেজন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
অন্যদিকে অতিরিক্ত তারল্য প্রসঙ্গে দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের শীর্ষ নির্বাহী মাসরুর আরেফিন জানান, নতুন বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকের আন্তরিকতার অভাব নেই। কিন্তু ভাল ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। আর যারা ঋণ নিতে চাচ্ছেন, তাদের অতীত কর্মকান্ডের কারণে ঋণ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতির কারণেই দেশের ব্যাংক খাতে অলস তারল্যের পাহাড় সৃষ্টি হয়েছে। সিটি ব্যাংকে এ মুহূর্তে ৩ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। আর বড় গ্রাহকদের ৫-৬ শতাংশ সুদেও ঋণ দেয়া হচ্ছে।