November 10, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, September 13th, 2022, 9:47 pm

বাণিজ্য প্রসারে নৌপথকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাণিজ্য প্রসারে সরকার নৌপথকে গুরুত্ব দিচ্ছে। পণ্য পরিবহনে নৌপথই সবচেয়ে সাশ্রয়ী। বিশ্ববাণিজ্যের সিংহভাগ পণ্যই নৌপথে পরিবাহিত হয়। তবে এখনো এদেশে অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহনে নৌপথজনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। এমন পরিস্থিতিতে নৌপথে পণ্য পরিবহন জনপ্রিয় করতে সরকার আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আর ওই প্রকল্পের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ নৌপথে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে কন্টেনার আসা-যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেটের মধ্যে যোগাযোগ বাড়বে। তাছাড়া আরো সহজ হবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে পণ্য পরিবহন। ফলে ত্বরান্বিত হবে অর্থনৈতিক গতি। নৌ-মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে বিগত ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় ১৪১ লাখ টন পণ্য পরিবহন হয়েছিল। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য পরিবহন করা হয়েছে ৫৫৯ লাখ টন। ফলে এক দশকের কম সময়ে পণ্য পরিবহন প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে। বর্তমান সরকার নৌপথকে জনপ্রিয় করতে ড্রেজিংসহ ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ‘আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেনার নদীবন্দর স্থাপনের’ প্রকল্প নিয়েছে সরকার। একনেক সভায় প্রকল্পটির ব্যয় ৪৫৮ কোটি টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ৭৫১ কোটি টাকা করা হয়েছে। তার মধ্যে ৭৩২ কোটি টাকা ভারতীয় এলওসি ঋণের আওতায় পাওয়া যাবে। আর এক হাজার ১৮ কোটি টাকা সরকারি অর্থায়ন রয়েছে। বিগত ২০১৮ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির সময়ও ২ বছর বাড়ানো হয়েছে। ফলে ২০২২ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তা শেষ হবে। বিআইডব্লিউটিএ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
সূত্র জানায়, সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে সরকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। যদিও দেশে নৌপথ কমতে কমতে আড়াই হাজার কিলোমিটারে চলে এসেছিল, তবে এখন তা ৬ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি ৩৭টি নদীবন্দর নিয়ে কাজ করছে সরকার। ঢাকার চারপাশে ১৪টি জেটি নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ২৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি মোট নৌপথের দৈর্ঘ্য। কিন্তু বর্তমানে যাতায়াতযোগ্য নৌপথের দৈর্ঘ্য মাত্র ৫ হাজার ৯৬৮ কিলোমিটার। শুষ্ক মৌসুমে তা আরো কমে গিয়ে ৩ হাজার ৮৬৫ কিলোমিটারে দাঁড়ায়। অথচ ১৯৬০ সালেও দেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার। ৬ দশকে নদীপথের দৈর্ঘ্য কমে অর্ধেক হলেও ধীরে ধীরে আগের চেয়ে পণ্য পরিবহন বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, আশুগঞ্জ প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৭০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২ একর ভূমি অধিগ্রহণ। তাছাড়া ৩৮টি কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্র ক্রয়ে ১২৭ কোটি ব্যয় হবে। কার্গো টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৭ কোটি টাকা। ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে অভ্যন্তরীণ ও পোর্ট ওয়াক রাস্তা তৈরি করা হবে। তাছাড়া রেলওয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫২ কোটি টাকা। সরকার তার আগে ২০১৮ সালে এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছিল। গত ২০২১ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্প মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে প্রকল্পটিতে কয়েকটি নতুন কাজ যুক্ত করে পরামর্শক ও কর্মকর্তাদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ ও চূড়ান্ত নক্সা অনুযায়ী কাজের ধরন বেড়েছে। ফলে ৩৫ শতাংশ বা ৪৫৮ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। একই সঙ্গে মেয়াদ ২ বছর বাড়ানো হলেও তা আরো বাড়তে পারে।
এদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএর আওতায় নৌপরিবহন সংক্রান্ত ১৭ প্রকল্প চলমান ছিল। একই সময়ে অনুমোদনের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল আরো ২৫টি প্রকল্প। তাছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৩০২ কোটি টাকা। এ বছর ১৩টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে এবং আরো ১০টি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে আশুগঞ্জ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আশুগঞ্জে কার্গো সুবিধা আছে। এখন কন্টেনার সুবিধা যুক্ত হলে পণ্য পরিবহনে রাস্তার ওপর থেকে চাপ কমে আসবে। প্রকল্পটি ভারতীয় ঋণের টাকায় হওয়ায় বিভিন্ন সময় নানা শর্তের পরিবর্তনের কারণে সময় লেগেছে। তাছাড়া করোনার কারণে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২ বছর মাঠে কাজ করতে না পারায় নক্সা প্রণয়নে সময় লেগেছে। তবে গত সেপ্টেম্বরে নক্সা চূড়ান্ত হওয়ায় আশা করা যায় সামনের ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হবে
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, সরকার ভারতের সঙ্গে বেশি বেশি বাণিজ্য করতে চাচ্ছে। আশুগঞ্জ বন্দরটি হলে ভারতের অসমের সঙ্গে বাণিজ্য হবে, আগরতলারও সঙ্গে বাণিজ্য হবে।