November 2, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, April 15th, 2022, 9:34 pm

বিদ্যুৎ উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে বেশকিছু খাতে কমানো হয়েছে গ্যাস সরবরাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক রাখতে গ্যাস সরবরাহে রেশনিং করা হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে ৬ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার পাশাপাশি এখন শিল্প খাতেও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। শিল্প-কারখানায় আগামী ১৫ দিন ৪ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখতে ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, গ্রীষ্ম ও সেচের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। সেজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন নির্বিঘœ করতে বেশকিছু খাতে গ্যাস সরবরাহ কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন ও আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ সর্বোচ্চ। বিশেষত জাতীয় গ্যাস গ্রিডে এখন সর্বোচ্চ সক্ষমতায় এলএনজি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ বিভাগকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে রমজান, গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরো সঙ্কটপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট। তার মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ১১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট। ওই কেন্দ্রগুলো থেকে সাড়ে ৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে হলে দৈনিক ১ হাজার ৪০০ এমএমসিএফ গ্যাস প্রয়োজন। অথচ বিপিডিবি পাচ্ছে এক হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ এমএমসিএফ গ্যাস। ফলে গ্যাসভিত্তিক যেসব কেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না সেগুলোর বিকল্প হিসেবে তেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা করা হচ্ছে। আর গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো রেশনিং করে চালাতে হচ্ছে। মূলত বৈশ্বিক জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধি, স্থানীয় গ্যাস সরবরাহ সংকট এবং আগে থেকে চলে আসা এলএনজি সরবরাহ সঙ্কট দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে এলএনজির অতি উচ্চমূল্য এবং জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ কোনোভাবেই বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমাতে পারছে না।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪৫০ কোটি ঘনফুট হলেও সরবরাহ হচ্ছে ৩১০ কোটি ঘনফুট। ফলে প্রতিদিন ১৪০ কোটি ঘনফুটের মতো ঘাটতি থাকছে। ঘাটতি গ্যাসের জন্য কখনো বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কখনো শিল্প-কারখানা আবার কখনো আবাসিক খাতে সরবরাহ কমিয়ে গ্যাস ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা হচ্ছে। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ দৈনিক ৩১০ কোটি ঘনফুটেরও বেশি। তার মধ্যে স্থানীয় গ্যাসের পরিমাণ ২২৪ কোটি এবং এলএনজি সরবরাহ হচ্ছে ৮৬ কোটি ঘনফুট। কভিডকালীন ও বৈশ্বিক জ¦ালানির বিদ্যমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেড় বছরের মধ্যে জাতীয় গ্রিডে সর্বোচ্চ গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে। দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে বিকল থাকা টার্মিনাল পুনরায় উৎপাদনে এসেছে। ফলে বর্তমানে সরবরাহ সক্ষমতাও এখন সর্বোচ্চ। ওই দুটি টার্মিনাল দিয়ে বর্তমানে দৈনিক ৮৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও বিদ্যুৎ সরবরাহে উদ্বেগ তৈরি করছে। ইতোমধ্যে সিএনজি খাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে গ্যাস বন্ধ থাকায় পরিবহন ও সিএনজি মালিকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। আবার শিল্প খাতে গ্যাস ব্যবহারে বিধিনিষেধ থাকায় উদ্বেগে পড়েছে শিল্প মালিকরাও। ঈদ সামনে রেখে গ্যাসের কারণে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হলে মালিকদের আর্থিকভাবে ক্ষতি করবে। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ সংকট তৈরি হওয়ায় ঢাকার বাইরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রকট হচ্ছে। বিভিন্ন জেলায় দৈনিক ৫-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।
এদিকে বিদ্যুতের বিদ্যমান পরিস্থিতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত ভুল পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোনোর কারণেই বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে সংকট তৈরি হয়েছে। ওসব সংকট আগে থেকে সমাধান করার সুযোগ ছিল। তবে আমদানিনির্ভর জ¦ালানিতে মনোযোগী হওয়ায় এখন তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে বিদ্যুৎ খাতে বর্তমানে যে সক্ষমতা তা একটি ভালো দিক। কিন্তু ওই সক্ষমতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারা একটি ব্যর্থতা। মূলত বিদ্যুতের মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী যেসব পরিকল্পনা করা হয় সেগুলো রিভাইজ করা হয় না। ওই কারণে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাইরে এখন স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। যাতে এসব সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা যায়।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা হলো আসন্ন সেচ ও রমজানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। ওই লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। যেসব জায়গায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা দরকার তা অব্যাহত রয়েছে। মূলত বিবিয়ানা থেকে গ্যাস উৎপাদন কমে যাওয়ায় সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। এখন ওই সঙ্কট কেটে গেছে। তাছাড়া প্রতি বছরই দেশে গ্রীষ্ম, সেচ ও রমজানে বিদ্যুতের চাহিদা অন্য সময়ের তুলনায় বেড়ে যায়। ওই সময় সাড়ে ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। আর চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও বেড়ে যায়।