নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকারের বিপুল টাকা গচ্চা গেলেও চালু করা যাচ্ছে না বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাট ফেরি সার্ভিস। অথচ এ সার্ভিসটি চালু হলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হতো। ওই ফেরি সার্ভিস চালু করতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ফুটানীবাজারে নির্মাণ করা হয়েছে বাহাদুরাবাদঘাট নৌ-টার্মিনাল। একই সঙ্গে যমুনা নদী খননে নেয়া হয় পৃথক প্রকল্প। কয়েক দফায় ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকার কাজ ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হয়।
কিন্তু প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরপরই বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয় যমুনা নদীতে খননকৃত চ্যানেল অর্থাৎ বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌপথটি ফেরি চলাচলের উপযোগী নয়। ফলে গত তিন বছরেও চালু হয়নি ফেরি সার্ভিস। আর তালাবদ্ধ ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে যমুনার দুই পাড়ের নৌ-টার্মিনাল। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমাতে ২০১৪ সালে বাহাদুরাবাদ-বালাসীঘাটে নৌরুট ও ফেরিঘাট চালুর লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।
২০১৭ সালের অক্টোবরে একনেকের সভায় বাহাদুরাবাদ-বালাসী নৌপথ আবারো চালু করতে ফেরিঘাট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পরে কয়েক দফায় ব্যয় বাড়িয়ে দাঁড়ায় প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা। আর দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ (ফুটানীবাজার) ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাটের দুই পাড়ে নির্মিত হয় নৌ-টার্মিনাল ও নয়নাভিরাম অবকাঠামো। এ প্রকল্পের আওতায় বাস টার্মিনাল, টোল আদায় বুথ, পুলিশ ব্যারাক, ফায়ার সার্ভিস, আধুনিক ডিজাইনের মসজিদ, খাবার হোটেল, আনসার ব্যারাকসহ বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়।
সূত্র জানায়, ফেরি সার্ভিসের লক্ষ্যে নদীর দুই পাড়ে অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলে হঠাৎ করে নাব্য সংকট দেখিয়ে ২৬ কিলোমিটার নৌরুটটি চলাচলের অনুপযোগী ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএর কারিগরি কমিটি। ফলে ভেস্তে যায় সব পরিকল্পনা। মূলত সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে এ মেগা প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। ফলে পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে নদীর দুই পাড়ের নৌ-টার্মিনাল।
সূত্র আরো জানায়, যমুনার নাব্য সংকটের কারণে ২০০৩ সালে কুলকান্দি থেকে দেওয়ানগঞ্জের বরখালে স্থানান্তরিত হয় বাহাদুরাবাদঘাট। তখন দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে বরখালঘাট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। সেখানেও কয়েক বছর চলার পর যমুনায় নাব্য হ্রাসের কারণে বাহাদুরাবাদ-বালাসী রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ঘাটটি ফুটানীবাজারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধু সেতু দূরত্বের কারণে এই অঞ্চলের মানুষ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে আসছে। অথচ এ নৌপথ চালু হলে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের কয়েক জেলার যোগাযোগে সময় ও খরচ অনেক কম লাগতো। পাশাপাশি চাপ কমতো যমুনা সেতুর ওপর।
এদিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী গত বছরের ৯ এপ্রিল ফেরিঘাট ও নৌ-টার্মিনাল উদ্বোধন করেছিলেন। তখন নদীতে নাব্য সংকট থাকায় প্রতিমন্ত্রী ফেরি সার্ভিসের পরিবর্তে ফিটনেসবিহীন দুটি লঞ্চ সার্ভিস উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরদিনই বন্ধ হয়ে যায় লঞ্চ চলাচল। অভিযোগের বিষয়ে কথা হয় বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের নিবাহী প্রকৌশলী সমীর পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বাহাদুরাবাদ ও বালাসীঘাট যমুনা নদীর আড়াআড়ি অবস্থানে থাকায় সহজেই উজানের ঢলে বালু পড়ে চ্যানেল ভরাট হয়ে যায়। যে কারণে খননকৃত চ্যানেলে ফেরি বা বড় কোনো নৌযান চলাচল করতে পারে না।
অন্যদিকে অপরিকল্পিত নদী খননের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক নিজাম উদ্দিন পাঠান জানান, যমুনা নদীর চরিত্র বোঝা মুশকিল। বর্ষাকালে পানির সঙ্গে ভেসে আসে বালু। সেই বালুতে চ্যানেল ভরাট হয়ে যায়। তাই প্রতি বছর শুকনা মৌসুমে দুই থেকে তিন মাস নদী খনন করতে হয়। এ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার। যেভাবেই হোক নৌরুটটি চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ