নিজস্ব প্রতিবেদক:
কয়লা সঙ্কটে ভুগছে পটুয়াখালীর পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া থাকায় বর্তমানে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। আর কেন্দ্রটিতে এখন যে পরিমাণ কয়লা মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আর মাত্র কয়েকদিন চলা সম্ভব। এরপরই কেন্দ্রটি পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি ও বকেয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (বিপিডিবি) চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানি বাবদ বকেয়ার পরিমাণ মার্চ পর্যন্ত ২৯৮ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত মার্চ পর্যন্ত পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লার ওভারডিউ বকেয়া পড়েছে ২৯৮ মিলিয়ন (২৯ কোটি ৮ লাখ) ডলার। এর মধ্যে চলতি মাসে দুই কিস্তিতে ২০ মিলিয়ন (২ কোটি) ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ বকেয়ার বিপরীতে যা খুবই সামান্য। দীর্ঘ সময় ধরে বকেয়া বড় অংকের বিল এভাবে পরিশোধ করা হলে কয়লা পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে ওভারডিউ থেকে ৫০ মিলিয়ন (৫ কোটি) ডলার পরিশোধ করা হলে পরবর্তী মাসের জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহের জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলা সম্ভব হবে। এভাবে শুধু ওভারডিউ থেকে প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখা যাবে। কয়লা আমদানির বকেয়া বাবদ মার্চে ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং এপ্রিলে ৭০ মিলিয়ন (৭ কোটি) ডলার বকেয়া পরিশোধ করার কথা ছিল বিপিডিবির। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এ অর্থ দিতে পারেনি। সূত্র জানায়, বিপিডিবির কাছে গত মার্চ পর্যন্ত বিসিপিসিএলের পাওনার পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
এর মধ্যে কেবল কয়লা আমদানি বাবদই ২৯৮ মিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ২১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। চলতি মে মাস থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সঙ্কটে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা সরবরাহের লক্ষ্যে ২০২০ সালের এপ্রিলে বিসিপিসিএল ও ইন্দোনেশিয়ার কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পিটি বায়ান রিসোর্সেস টিবিকের সঙ্গে চুক্তি সই করে। ওই চুক্তিতে বিসিপিসিএলের ৫০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার সিএমসি ছয় মাসের ডেফার্ড পেমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়। মূলত সিএমসি ইন্দোনেশিয়ার কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানি করে দিচ্ছিল। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য দৈনিক এক হাজার টন কয়লার প্রয়োজন।
ওই হিসেবে মাসে ৩ লাখ টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে। দেশে বিদ্যুতের তীব্র চাহিদার মৌসুমে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিপিডিবিকে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডে লোডশেডিং আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম জানান, গত মার্চ পর্যন্ত কয়লার ওভারডিউ হয়েছে ২৯৮ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চলতি মাসে দুই কিস্তিতে ২০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে বিসিপিসিএল। তবে এ অর্থ খুবই সামান্য। কয়লা আমদানিকারকসহ মন্ত্রণালয় ও ব্যাংকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তবে কয়লা সরবরাহ আর পাওয়া যাবে কিনা সে বিষয়টি অনিশ্চিত।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ